ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

নির্বাচন ও ইসি

রসিক নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৭
রসিক নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু ভোটকেন্দ্রের বাইরে অপেক্ষমাণ ভোটার

রংপুর থেকে: উৎসবমুখর পরিবেশে শীতের সকালে রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। ঘড়ির কাঁটায় সকাল ৮টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রগুলোতে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। যা বিরতিহীনভাবে চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। 
 

টানা ১৫ দিনের প্রচার-প্রচারণা এবং প্রার্থীদের নানা প্রতিশ্রুতির পর আগামী পাঁচ বছরের জন্য রংপুর সিটির মসনদ কার হবে সেই সিদ্ধান্ত জানাতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন ভোটাররা। প্রায় চার লাখ ভোটার আগামীর নগর পিতা নির্বাচনের জন্য সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোট দেবেন।

এদিকে সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরুর সময় নির্ধারিত থাকলেও সাড়ে ৭টার দিকে বায়তুল মামুর জামে মসজিদ ফোরকানিয়া মাদরাস ভোট কেন্দ্রের বাইরে ভোটারদের অপেক্ষা করতে দেখা যায়। এ সময় ভোট নিয়ে তাদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ ও আগ্রহ চোখে পড়ে।  
 
সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণের লক্ষ্যে প্রস্তুত রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনের আগের রাতেই সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে পৌঁছানো হয়েছে ভোটগ্রহণের জন্য ব্যবহৃত ব্যালট-বাক্সসহ আনুষাঙ্গিক সরঞ্জাম। মোতায়েন করা হয়েছে নিরাপত্তায় নিয়োজিত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। বিশেষ করে অনুন্নত ও সংখ্যালঘু এলাকাগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ সব ধরনের সতর্ক অবস্থানে রয়েছে প্রশাসন।
 
নিয়মিত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি কাজ শুরু করছে নির্বাহী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের সমন্বয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকেও নিজস্ব কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে তিনটি ওয়ার্ডে একজন করে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
 
অবাধ, সুষ্ঠু এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতির বিষয়টি জানিয়ে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, প্রতিটি কেন্দ্রে ২৪ জন করে পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবেন। ৩৩ জন নির্বাহী ও ১১ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবেন। ৮ সদস্য বিশিষ্ট র‌্যাবের ৩৩টি দল কাজ করবে নগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডে।
 
এছাড়া যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, ডগ স্কোয়াডসহ সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে র‌্যাব। নির্বাচনে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ২১ প্লাটুন বিজিবি মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে মাঠে রয়েছেন। নির্বাচনের পরদিন পর্যন্ত তারা মাঠে দায়িত্ব পালন করবেন।
 
ভোটকেন্দ্রগুলোর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে সিটি কর্পোরেশন এলাকায় র‌্যাবের হেলিকপ্টার টহলের বিষয়টিও জানান তিনি।
 
ডিআইজি বলেন, নগরীর গুরুত্বপূর্ণ ৮টি পয়েন্টে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। জনগণকে ভয় দেখাতে নয়, উৎসবমুখর পরিবেশে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ মডেল নির্বাচন উপহার দিতেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা বেস্টনি গড়ে তুলেছে। জনগণের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে ভোটাধিকার নিশ্চিত করা এবং আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে কঠোর থাকবে প্রশাসন। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত।
 
এদিকে, রিটার্নিং কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র সরকার জানান, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণের জন্য ব্যবহৃত সরঞ্জাম পৌঁছানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের ১১টি পর্যবেক্ষক দল মাঠে রয়েছে। ইসির নিজস্ব এসব কর্মকর্তা পরিচয় গোপন রেখে নির্বাচনের সামগ্রিক পরিবেশ সম্পর্কে তথ্য নির্বাচন কমিশনকে জানাবেন।
 
তিনি বলেন, সিটি নির্বাচনে ১৯৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ১০৮টিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে কেন্দ্রগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ১৯৩টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে নগরীর ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজ কেন্দ্রের ছয়টি বুথে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট নেওয়া হবে। ওই কেন্দ্রের ভোটার ২ হাজার ৫৯ জন।
 
২০ নম্বর ওয়ার্ডের সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজ কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে।
 
সিটি কর্পোরেশনে বর্তমানে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৯৯৪। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৯৬ হাজার ৩৫৬ ও মহিলা ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬৩৮ জন। ২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়েছিল রংপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রথম ভোট। ওইসময় দলীয় প্রতীকে ভোট না হলেও সরফুদ্দিন আহম্মেদ ঝন্টু মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে এক লাখ ছয় হাজার ২৫৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি এবার নৌকা প্রতীক নিয়ে মাঠে লড়ছেন।
 
ওই নির্বাচনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদের নির্দেশ অমান্য করে হাঁস প্রতীক নিয়ে মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা পেয়েছিলেন ৭৭ হাজার ৮০৫ ভোট। এবারের নির্বাচনে তিনি জাপার মনোনীত প্রার্থী হয়ে লাঙল প্রতীক নিয়ে লড়ছেন।
 
এছাড়া বিএনপির কাওসার জামান বাবলা প্রথম বারের ওই নির্বাচনের আগের দিন রাতে ভোট বর্জনের পরও ২১ হাজার ২৩৫ ভোট পেয়েছিলেন।
 
হেভিওয়টে ওই তিন প্রার্থী ছাড়াও এবারের নির্বাচনে লড়ছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের এটিএম গোলাম মোস্তফা বাবু (হাতপাখা), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি সেলিম আখতার (আম), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) থেকে আব্দুল কুদ্দুস (মই)।
 
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টি থেকে সদ্য বহিষ্কার হওয়া এরশাদের ভাতিজা হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ (হাতি)।
 
৩৩টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২১১ এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৬৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

রংপুরে প্রার্থীরা কে কোথায় ভোট দেবেন? 

বাংলাদেশ সময়: ০৮০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৭
এমআইএইচ/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।