ঢাকা, শুক্রবার, ১ কার্তিক ১৪৩২, ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ২৪ রবিউস সানি ১৪৪৭

নির্বাচন ও ইসি

ভোটে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় শিক্ষার্থীদের কাজে লাগাতে চায় ইসি

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:৩৯, অক্টোবর ১৬, ২০২৫
ভোটে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় শিক্ষার্থীদের কাজে লাগাতে চায় ইসি ইসি

ঢাকা: আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোকাবিলাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে মনে করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এজন্য বিভিন্ন বাহিনীর পাশাপাশি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী বিশেষ করে স্কাউট, বিএনসিসিকেও কাজে লাগাতে চায় সংস্থাটি।

ইসি কর্মকর্তা বলছেন, নির্বাচনে বড় ভূমিকা পালন করে পুলিশবাহিনী। তবে জুলাই অভ্যুত্থানে এদের মনোবল ভেঙে যাওয়ায় একটি সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। এক্ষেত্রে পুলিশকে আগের মতো জনসাধারণ আর আমলেও নিতে চাচ্ছে না। ফলে ভোটের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তারা কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে, সেটা অনিশ্চিত। এই অবস্থায় বিভিন্ন বাহিনীর পাশাপাশি অনেকটা সামাজিক অংশগ্রহণ যদি বাড়ানো যায় সেটা বড় ভূমিকা রাখতে পারে।

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আশঙ্কার কথা বলছেন বিভিন্ন দলের নেতা, পর্যবেক্ষকরাও। এজন্য তারা ছাত্রদের ওপরে এবার ভরসা রাখতে চান। ইতোমধ্যে তারা নির্বাচন কমিশনকে এমন সুপারিশও করেছেন।

আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি) চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু সম্প্রতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বলেছেন, আমরা মনে করি পুলিশ ও আনসারসহ বিদ্যমান বাহিনী একা এই পরিস্থিতি সামাল দিতে নাও পারে। এজন্য স্কুলের শিক্ষার্থীদের স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে যুক্ত করা যেতে পারে। যারা ভোটার নয়, তবে গণঅভ্যুত্থানে ভূমিকা রেখেছে-তাদেরও কাজে লাগানো যেতে পারে।  

দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্পাদক হাসান হাফিজও ইসিকে পরামর্শ দিয়েছেন পেশাজীবী, ব্যবসায়ী ও তরুণদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করে ভোট পর্যবেক্ষণে সম্পৃক্ত করার জন্য।  
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. এএসএম আমানুল্লাহ বলেন, সারাদেশের ৫০০ উপজেলার ৬৪ জেলাতে আমাদের একটি নেটওয়ার্ক আছে। হাজার হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৪০ লাখ শিক্ষার্থী। এদেরকে কীভাবে কাজে লাগানো যায় ইসি ভাবতে পারে। আমরা ইসিকে সহযোগিতা করবো। আরেকটা জিনিস আমাদের এই সময়টাতে বাংলাদেশে প্রায় ২২ লাখ স্কাউট আছে এবং বিএনসিসি প্রায় ২২ লাখ; স্কাউট এবং বিএনসিসি কীভাবে কাজে লাগাতে পারি, সেটা ভাবতে হবে।

আমাদের যা যা সক্ষমতা আছে জাতীয়ভাবে, এমনকি আমরা স্কাউটকে কাজে লাগাতে পারি। মোদ্দাকথা হচ্ছে আমরা আমাদের সম্পূর্ণ সক্ষমতাকে কাজে লাগাবো।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, একটি ট্রমার মধ্য দিয়ে কিছু কিছু বাহিনী গেছে। পাশাপাশি ১৬ বছরের সাংস্কৃতিক পরিবর্তন রাতারাতি সংশোধন সম্ভব না। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আগের মতো প্রভাবশালী না হলেও এবার নির্বাচনের পক্ষে কাজ করবে। গত তিনটি নির্ববাচনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী হয়তোবা ছিল, কিন্তু তারা কোন ভূমিকায় ছিল? তারা তো নির্বাচনকে খারাপ করার কাজটা করেছে। অত্যন্ত শক্তিশালী অবস্থানে থেকে। এবারও হয়তো অতটা শক্তিশালী অবস্থানে থাকবে না। কিন্তু নির্বাচন ভালো করার জন্য কাজ করবে। আমাদের যা যা সক্ষমতা আছে জাতীয়ভাবে, এমনকি আমরা স্কাউটকে কাজে লাগাতে পারি।  

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সাবেক সদস্য ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ মো. আবদুল আলীম বলেন, শিক্ষার্থী বিশেষ করে স্কাউটকে যদি কাজে লাগানো যায় সেটা ভালো উদ্যোগ হতে পারে। কেননা, জুলাই আন্দোলনের বড় ভূমিকা রেখেছিল তরুণরা।  

সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন বাহিনীর প্রায় আট লাখের মতো সদস্য নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আনসারের পাঁচ লাখ ১৬ হাজার সদস্য, কোস্টগার্ডের ২ হাজার ৩৫০ জন, বিজিবির ৪৬ হাজার ৮৭৬ সদস্য, পুলিশের (র‌্যাবসহ) থাকবে ১ লাখ ৮২ হাজার ৯১ জন। অর্থাৎ সাত ৪৭ হাজার ৩২২ জন সদস্য ভোটের নিরাপত্তায় নিয়োজিত করা হয়েছিল।

আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের লক্ষ্যে সব প্রস্তুতি এগিয়ে নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এজন্য ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণা করতে চায় সংস্থাটি। ইতোমধ্যে সীমানা নির্ধারণ, রাজনৈতিক দল নিবন্ধন ও ভোটার তালিকার কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। পাশাপাশি ব্যালট পেপার মুদ্রণ, নির্বাচন উপকরণ সংগ্রহ ও পর্যবেক্ষক নিবন্ধনের কাজও চলছে।  

ইইউডি/এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।