ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২১ মে ২০২৪, ১২ জিলকদ ১৪৪৫

নির্বাচন ও ইসি

রাজপথে শক্তি প্রদর্শিত হলেও সংকট নিরসন হচ্ছে না: ইসি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০২৩
রাজপথে শক্তি প্রদর্শিত হলেও সংকট নিরসন হচ্ছে না: ইসি

ঢাকা: প্রতিদ্বন্দ্বী প্রধানতম দলগুলো স্ব স্ব সিদ্ধান্ত ও অবস্থানে অনড়। রাজপথে মিছিল, জনসমাবেশ ও শক্তি প্রদর্শন করে স্ব স্ব পক্ষে সমর্থন প্রদর্শনের চেষ্টা করা হচ্ছে।

কিন্তু তাতে প্রত্যাশিত মীমাংসা বা সংকটের নিরসন হচ্ছে বলে কমিশন মনে করে না।

গণমাধ্যম সম্পাদকদের পাঠানো এক পত্রে এমন ধারণার কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সংস্থাটির জনসংযোগ পরিচালক মো. শরিফুল আলম জানিয়েছেন, আগামী ২৬ অক্টোবর ৩৮ জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন ভবনে।

কর্মকর্তারা জানান, বৈঠকের আমন্ত্রণপত্রের সঙ্গে ওই ধারণাপত্রটি পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, গণতান্ত্রিক আশা- আকাঙ্ক্ষা ও মূল্যবোধ থেকেই আমাদের ভাষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন, স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং ৩০ লাখ প্রাণ ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে ৭১ এর ১৬ ডিসেম্বরে মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি জাতির চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়েছে।  

৭২ এর ১৬ ডিসেম্বরে সংবিধান প্রবর্তিত হওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা বিদ্যমান রয়েছে। বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র। তবে গণতন্ত্রের এই পথচলা মসৃণ ও নিরবচ্ছিন্ন ছিল না। চড়াই-উৎরাই পার হয়ে গণতন্ত্রকে অগ্রসর হতে হয়েছে।

সংসদের সাধারণ নির্বাচন পাঁচ বছর অন্তর অন্তর হয়ে থাকে। সংবিধানের ৬৫ অনুচ্ছেদের (২) দফার বিধান অনুযায়ী ৩০০ সাধারণ আসনে নির্বাচিত সদস্য এবং (৩) দফার বিধান অনুযায়ী ৫০ সংরক্ষিত আসনে নির্বাচিত নারী সদস্যদের নিয়ে সংসদ গঠিত হয়ে থাকে। নির্বাচিত সংসদ সরকার গঠন করে থাকে। সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী গঠিত নির্বাচন কমিশনের ওপর ১১৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংসদ নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্ব অর্পিত হয়ে থাকে।

এতে আরও বলা হয়েছে, কমিশন এককভাবে নির্বাচন সম্পর্কিত সব দায়িত্ব পালন করে না। আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীসহ সরকারের নির্বাহী বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহায়তা অনিবার্যভাবে আবশ্যক হয়ে থাকে। সংবিধান ও আইনে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। সরকার সে বিষয়ে অবহিত।  

তাই সক্ষমতার অবস্থান থেকে সরকার নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক এবং শান্তিপূর্ণ করার লক্ষ্যে সুস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি বারংবার ব্যক্ত করছে। কমিশনও নিজস্ব সক্ষমতা ও সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আয়ত্তে থাকা সর্বোচ্চ সামর্থ্য যথাসম্ভব প্রয়োগ করে সরকারের সহায়তা গ্রহণ করে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ, নিরপেক্ষ, পক্ষপাতহীন ও শান্তিপূর্ণ করার বিষয়ে সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে যাচ্ছে। এরপরও বিভিন্ন মহল থেকে নির্বাচন কমিশনের ওপর অনাস্থা ব্যক্ত করা হচ্ছে।

নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ, অংশগ্রহণমূলক হয়ে থাকে সকলের সমন্বিত সহযোগিতা ও অংশগ্রহণের মাধ্যমে। রাজনৈতিক দলগুলো গণতান্ত্রিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রার্থী দিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে নির্বাচন অর্থবহ হয় এবং তাতে জনমতের প্রকৃত প্রতিফলন ঘটে। প্রার্থী ও রাজনৈতিক দলসমূহকে আচরণ বিধিমালা প্রতিপালন করতে হয়।  

নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত সব কর্মকর্তাকে আইন ও বিধি-বিধান যথাযথভাবে প্রতিপালন ও প্রয়োগ করে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে আরোপিত দায়িত্ব পালন করতে হয়। রাজনৈতিক দল, প্রার্থী ও ভোটার সাধারণের অবাধ অংশগ্রহণ এবং নির্বাচনী কর্মকর্তা এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আন্তরিক, পেশাদার ও পক্ষপাতহীন- নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে নির্বাচনে কাঙ্ক্ষিত সফলতা অর্জন সম্ভব।

ধারণাপত্রে বলা হয়েছে, আসন্ন সংসদ নির্বাচন প্রশ্নে সরকার ও কমিশনের বিষয়ে কতিপয় রাজনৈতিক দলের গণমাধ্যমে প্রচারিত অনাস্থা কাটিয়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে জনগণের আস্থা অর্জনের প্রয়াস আমরা (নির্বাচন কমিশন) অব্যাহত রেখেছি। তবে, অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর নির্বাচনের জন্য যে অনুকূল পরিবেশ প্রত্যাশা করা হয়েছিল, সেটি এখনো হয়ে উঠেনি।  

প্রত্যাশিত সংলাপ ও সমঝোতার মাধ্যমে মতভেদের নিরসন হয়নি। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রধানতম দলগুলো স্ব স্ব সিদ্ধান্ত ও অবস্থানে অনড়। রাজপথে মিছিল, জনসমাবেশ ও শক্তি প্রদর্শন করে স্ব স্ব পক্ষে সমর্থন প্রদর্শনের চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু তাতে প্রত্যাশিত মীমাংসা বা সংকটের নিরসন হচ্ছে বলে কমিশন মনে করে না। বিষয়টি রাজনৈতিক। নির্বাচন কমিশনের এক্ষেত্রে করণীয় কিছু নেই।

নির্বাচন বিষয়ে দেশে পর্যাপ্ত আইন রয়েছে। তবে আইন ও রাজনৈতিক সংস্কৃতির সমান্তরাল মিথস্ক্রিয়া না হলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে আইনের বাস্তবায়ন সহজসাধ্য হয় না। বহুদলীয় গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদ, মতানৈক্য ও সংকট হতেই পারে। পারস্পরিক প্রতিহিংসা, অবিশ্বাস ও অনাস্থা পরিহার করে সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতা ও সমাধান অন্বেষণ করা হলে তা অধিকতর ফলদায়ক হতে পারে।  

পরমতসহিষ্ণুতা, পারস্পরিক সহনশীলতা ও সহমর্মিতা টেকসই ও স্থিতিশীল গণতন্ত্রের জন্য নিয়ামক। কমিশন গণতন্ত্র নিয়ে কাজ করে না। নির্বাচন নিয়ে কাজ করে। তবে নির্বাচনই হচ্ছে গণতন্ত্রের প্রাণ ও বাহন। নির্বাচন আয়োজনে যদি সংকট নিরবচ্ছিন্নভাবে অব্যাহত থাকে, তাহলে গণতন্ত্র বিপন্ন হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়।

এতে দায়িত্বশীল ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়াকে যতদূর সম্ভব স্বচ্ছ ও দৃশ্যমান করে উপস্থাপন করার কথাও বলা হয়েছে।

আগামী নভেম্বরে তফসিল দিয়েছে ডিসেম্বরে শেষ থেকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করবে ইসি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩২ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০২৩
ইইউডি/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।