ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

ঈদ সংখ্যা

ঈদ আয়োজন

হাসপাতাল কত দূরে | সমরেশ মজুমদার

উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২১ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১৪
হাসপাতাল কত দূরে | সমরেশ মজুমদার অলঙ্করণ: ধ্রুব এষ

প্রথমবার ঘটনাটা ঘটেছিল মাসখানেক আগে। ঘটে যাওয়ার পর খুব অবাক হয়ে গিয়েছিল অতনু।

কোনো ব্যাখ্যা নেই, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে অনেকক্ষণ দেখে কোনো পরিবর্তন খুঁজে পায়নি। অথচ তার মতো একজন সাধারণ যুবক যে কি-না কম্পিউটার বিজ্ঞানের মিস্ত্রী থাকায় আশি হাজার টাকায় চাকুরি করে, তার ক্ষেত্রে  ব্যাপারটা ঘটে গেল। ট্যাক্সিতে চেপে অফিস থেকে ফিরছিল একটু তাড়াতাড়ি, যেন রাত না হয়, সেদিন সবে সন্ধ্যে নেমেছে। বেলেঘাটায় একটা রাস্তায়, ট্যাক্সিওয়ালা শর্টকাট করবে বলে, গাড়ি ঢোকাতেই অতনুর মনে পড়ল চন্দনদার কথা। বহুদিন যোগাযোগ নেই। এই রাস্তায় থাকেন। মনে পড়তেই ট্যাক্সিওয়ালাকে বাড়ির সামনে থামতে বলল সে। একটু অপেক্ষা করতে বলে সে ট্যাক্সি থেকে নেমে বেল বাজালো। চন্দনদার স্ত্রী বেলা বউদি দরজা খুলে চিৎকার করে উঠল, আরে তুমি? পথ ভুলে এলে— এই দ্যাখো, কে এসেছে? ভেতর থেকে চন্দনদার গলা ভেসে এলো, ‘কে এলো। ’
‘অতনু ঠাকুরপো। এসো এসো। তোমায় দেখে কী ভালো লাগছে। ’
‘কেমন আছ তোমরা?’
‘ভালো। আগামীকাল গোয়ায় বেড়াতে যাচ্ছি। এসো। ’
বেলা বউদি বসার ঘরে নিয়ে যেতেই অতনু দেখতে পেল, চন্দনদা টেবিলে তাস বিছিয়ে  খেলছেন। পায়ের শব্দে মুখ তুললেন। হাসি মুখ। কিন্তু এ কী! অতনু অবাক হয়ে দেখল চন্দনদার মুখের ওপর কালো পর্দা ঝুলছে। তার কাঁধ, হাত, বুক স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে কিন্তু মুখ কালো পর্দার আড়ালে। একটু লক্ষ্য করতেই নাক, চোখ, চিবুক, কপাল ঝাপসা দেখা গেল, অর্থাৎ কালো ছায়াটা মুছল না।
‘আয়, বোস। তারপর কী মনে করে? চাকরি করছিস বলে ভুলে গেলি’ মজা করে কথা বলতে অভ্যস্ত চন্দনদা, এখনও সেইরকম বললেন।
আবার তাকাল অতনু। বেলা বউদির মুখ পরিষ্কার, কিন্তু চন্দনদার মুখ ঝাপসা। সে জিজ্ঞাসা করল, ‘আপনার কি শরীর খারাপ?’
‘কোন দুঃখে শরীর খারাপ হবে রে? রোজ তিন কিলোমিটার হাঁটি। ’
‘আপনার প্রেসার ঠিক আছে তো?’
‘কী বলতে চাইছিস স্পষ্ট করে বল তো!’
‘চন্দনদা, আপনাকে দেখে আমার ভালো লাগছে না। বউদি বলল, কাল আপনারা গোয়ায় বেড়াতে যাচ্ছেন, তার আগে একবার ডাক্তারকে দেখিয়ে যান।
‘দূর। এতদিন পর এসে কি পাগলামি করছিস। ’ চন্দনদা বিরক্ত হলো।
বেলা বউদি বললেন, ‘অতনু যখন বলছে তখন একবার ডাক্তারের কাছে গেলেই তো হয়। তোমার যে বয়স হয়েছে তা মাথায় রেখো। ’
কিছুক্ষণ অন্য কথা বলে, অজুহাত দেখিয়ে চা না খেয়ে ফিরে এসেছিল অতনু। আর রাত দশটায় খবরটা এলো, চন্দনদা নেই। ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক, ডাক্তার ডাকার সময় পাওয়া যায়নি।
হতভম্ব হয়ে বসেছিল অতনু। দু’দিন পর বেলা বউদির ফোন এলো, কাঁদতে কাঁদতে জিজ্ঞাসা করলেন, আমরা তো কেউ বুঝতে পারিনি, তুমি কী করে বুঝলে?’
উত্তর দিতে পারেনি অতনু। কিন্তু বারবার মনে হয়েছে তখনই যদি চন্দনদাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হতো তাহলে তিনি বেঁচে যেতেন। কিন্তু আর কেউ চন্দনদার মুখে সেই ছায়াটাকে দেখতে পেল না, সে কী করে পেল? তখন মনে হচ্ছে ওটা নিশ্চয়ই মৃত্যুর ছায়া। ধ্যাৎ, এটা কি সম্ভব? নৈতিক গপ্পো নাকি। মৃত্যুর আগে তার ছায়া নেমে আসে মানুষের মুখে? পাগলও শুনে হাসছে। তারপর থেকেই অভ্যেসটা তৈরি হয়ে গেল অতনুর। একা থাকলেই আয়নায় নিজের মুখ দ্যাখে। নিজের চোখ, চোখের তারা কিন্তু কোনো অস্বাভাবিকত্ব নজরে পড়ে না।

** পুরো উপন্যাস ই-ম্যাগাজিনে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

ঈদ সংখ্যা এর সর্বশেষ