ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

ঈদ সংখ্যা

ঈদ আয়োজন

রোল নম্বর থার্টি নাইন | আন্দালিব রাশদী

উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫০ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১৪
রোল নম্বর থার্টি নাইন | আন্দালিব রাশদী অলঙ্করণ: মাহবুবুল হক

কো-এডুকেশন স্কুলের চার্মই আলাদা।
কো-এডুকেশন স্কুলের সবচেয়ে বখাটে ছাত্র তার জীবনের সবচেয়ে বড় আবিষ্কারটি করে ফেলেছে।

এখন সে আনন্দে আত্মহারা।
গোসলের গামলা থেকে উঠে মহান বিজ্ঞানী আর্কিমিডিসের মতো উদোম শরীরে ছুটবে আর ইউরেকা ইউরেকা বলে চিৎকার করবে— এমনই একটা আবেগ কাজ করছে তার শরীরের কোষে কোষে।
যে যা আবিষ্কার করেছে তার গুরুত্ব বোঝার মতো বিদ্যাও নেই ফার্স্ট-সেকেন্ড হওয়া অপদার্থ গুডবয়গুলোর। তারা অন্যের আবিষ্কারের কাহিনী মুখস্থ করে। আর এটা তার নিজস্ব আবিষ্কার। এটা মুখস্থ করা কাহিনী নয়, গবেষণা ও অভিজ্ঞতার ব্যাপার।
সুতরাং কো-এডুকেশন স্কুলের বখাটে ছেলেটি নিজেদের স্কুলের ছেলেদের পাশ কাটিয়ে অনতিদূরের বয়েজ স্কুলের দুষ্ট ছেলেটিকে একটি নির্জন স্থানে টেনে নিয়ে কানের কাছে মুখ লাগিয়ে বলল, দোস্ত খবর আছে, আমাদের ক্লাসের লায়লা ইয়াসমিন ব্র্যাশিয়ার পরে।
ব্র্যাশিয়ার বলার পর তার মনে হলো বয়েজ স্কুলের একমুখী অভিজ্ঞতা লাভ করা ছেলেটি নিশ্চয়ই মেয়েদের এই গোপন পোশাকটির নামই শোনেনি। সুতরাং তার আবিষ্কারটিকে সহজ ভাষায় অনুবাদ করে দেওয়ার তাগিদ অনুভব করল।
বলল আব্বে শালা আহাম্মক, কী বলেছি বুঝেছিস?
লায়লা ইয়াসমিন ব্র্যা পরে।
মানে তো আর বুঝিসনি। ব্র্যা হচ্ছে ব্র্যাশিয়ার, কেউ কেউ বডিসও বলে। বাংলায় বলে বক্ষবন্ধনী, তুই ইচ্ছে করলে দুগ্ধবন্ধনীও বলতে পারিস।
তারপরও কথাগুলো দুর্বোধ্য মনে হতে পারে বিবেচনা করে দুই হাতের পাতা ও আঙুলে দুটো কাপ বানিয়ে বন্ধুটির বুকের দু’পাশে স্থাপন করে বলল, এর নাম ব্র্যা।
বয়েজ স্কুলের ছেলেটি তার বোকা বোকা চেহারা নিয়ে কিছুক্ষণ বন্ধুটির দু’হাতের কারুকাজ দেখে চোখে-মুখে বিস্ময় ফুটিয়ে বলে উঠল, শালা, তার মানে এই কথা! তুই আগে বলবি না।
কো-এডুকেশনে পড়াশোনা করা এই আবিষ্কারক ছাত্রটি বলল, আগে বললে কী করতি? মুখস্থ করতি?
এসব প্রশ্ন কখনও ফাইনাল পরীক্ষায় আসে না রে।
দুষ্ট ছেলেটি বলল, পরীক্ষায় না আসুক পরীক্ষা হলে তো দু’একজন আসে, তাই না।
আবিষ্কারক বলল, তবুও তো শালা তুই কিছুটা বুঝিস, গুডবয়গুলো অপদার্থ। ওরা হচ্ছে বুকওয়ার্ম-বুককীট। শুককীট, মুককীট, বুককীট। ওরা কখনও পূর্ণাঙ্গ কিছু হয়ে উঠতে পারে না। প্রজাপতি তো নয়ই। বইপত্রের কিছু জানে, তাও সব পুরনো এডিশনের বই। নতুন দুনিয়ার কোনো খোঁজ রাখে না। তার নতুন দুনিয়ার সবচেয়ে বড় ব্রেকিং নিউজ হচ্ছে ক্লাস নাইনের লায়লা ইয়াসমিন ব্র্যাশিয়ার পরে। নারীবান্ধব একটি পোশাকের নাম ও ব্যবহার জেনে তার আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে ওঠে, তার মনে হয় বিশ্বের সব জ্ঞান এখন তার হাতের মুঠোয়, করতল ও আঙুল দিয়ে বানানো দুটো কাপের মধ্যে।
দুর্লভ জ্ঞানের অধিকারী আমার সেই ক্লাসমেন্ট আবু জোহা মুহাম্মদ নুরুল্লাহ এখন আণবিক গবেষণা কেন্দ্রের জ্যেষ্ঠ গবেষণা কর্মকর্তাদের একজন। ইউনিভার্সিটিতে গিয়ে বদলে যায়, ফলাফলেও আমরা অনেকে তার পেছনে পড়ে যাই। বৃত্তি নিয়ে নুরুল্লাহ ক্যাবাবুমেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে গিয়েছিল। এটাই তার প্রথম বিদেশ সফর। কিন্তু সেখানে হাঁটুর প্রায় এক বিঘৎ ওপর পর্যন্ত যুবতীদের পা এবং প্রায় সবক্ষেত্রেই তাদের স্তনাবাস দেখানো জামা তার বন্দেগির মসৃণ পথটিকে দুর্গম করে তোলে। একটি কেবল ডিগ্রির জন্য এই নশ্বর দুনিয়ার বন্দেগি নষ্ট করার মানে নেই। সুতরাং তওবা, অস্তানাকিরুল্লাহ বলে বিদেশে পৌঁছার এগারতম দিনে ফিরতি ফ্লাইটে আরোহণ করে পরের দিন ঢাকায় অবতরণ করে।
শৈশবের সবচেয়ে বড় নারীদেহ গবেষণা শ্মশ্রূমণ্ডিত প্রিয় বন্ধু নুরুল্লাহ তার সুরমাজিত চোখে সরাসরি কোনো নারীর দিকে তাকিয়ে কথাও বলে না। এমনকি নারীর সংবেদনশীল অঙ্গগুলোর ওপর দৃষ্টি আপতিত হলে চোখের জ্যোতি হ্রাস পেতে পারে এই আশঙ্কায় ছয় সন্তানের জনক হওয়ার পরও নিজের স্ত্রীকে তার ভালো করে দেখা হয়নি। শুধু জ্যোতি হ্রাস নয়, গুনাহও ঠেকানো যাবে না।

** পুরো উপন্যাস ই-ম্যাগাজিনে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

ঈদ সংখ্যা এর সর্বশেষ