ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

ঈদ সংখ্যা

ঈদ আয়োজন

রাঙাজীবনের দেনা | সাগুফতা শারমীন তানিয়া

উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৮ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১৪
রাঙাজীবনের দেনা | সাগুফতা শারমীন তানিয়া অলঙ্করণ: দেওয়ান আতিকুর রহমান

। ।

এক বাঁও মেলেনা …। ।
“ডার্করুমে যে যে অজ্ঞান হয়ে যাবি, স্লাইড ক্যালিপার্স দিয়ে তোদের নাক তুলে ফেলবো, তোদের আমি নিজহাতে ফেল করাবো” এইসব ঘোষণা দিয়ে মাদলকুমার দে আমাদের ঠেলে ঢোকালেন অন্ধকার ঘরটায়।
এবং প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসের মাঝখানে অজ্ঞান হয়ে গেলেন নিজেই। আমরা ধরাধরি করে স্যারকে ডার্করুম থেকে বের করে আনলাম। বমিমাখা শরীর। ঘামের মানচিত্রময় বগল। পি.টি. আপা এসে স্যারের ভ্যাপসারঙ জামা খুলে দিলেন- পাখা জোরে করে দিলেন। তালুর চুল ভিজিয়ে দিয়ে জোরে জোরে ডাকতে লাগলেন- “দে স্যার! দে স্যার!”
আমি প্র্যাকটিক্যাল খাতার পাতায় বলপয়েন্ট ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে লিখলাম-
“আজ তারায় তারায় দীপ্ত শিখার অগ্নি জ্বলে/নিদ্রাবিহীন গগনতলে/ঐ আলোকমাতাল স্বর্গসভার মহাঙ্গণ/ হোথায় ছিল কোন যূগে মোর নিমন্ত্রণ…”
গানটা একদিন শুনতে হবে, সুরটা এখনো আমার অজানা।
বাইরে চড়চড় করে রোদ চড়ছে। দুপুরচরা পাখি ডাকছে দেবদারু গাছগুলির নীল নীল অন্ধকার থেকে। বাতাসে একটা নাম না জানা গাছের চিরল চিরল পাতা নড়ছে, রোদে ঝামরে ওঠা পাতার রঙ, কাঁচা দুপুরে ঐ গাছের শীর্ষে আলোর পোকা ওড়ে- ‘হোথায় ছিল কোন যূগে মোর নিমন্ত্রণ’।
আমি একহাতে পানির বোতলটার গলা জড়িয়ে বুকের কাছে ধরে ক্যামেলিয়া তাসকিন আর জামিলা মমতাজের সাথে করিডোরে এসে দাঁড়াই।
শেষ হয়ে যাচ্ছে স্লাইড-ক্যালিপার্স আর স্প্রিং নিক্তির দিন।
ক্রমে বায়ূশূণ্য বেলজারের ভিতরে শব্দের অবাধ মৃত্যু। লন মোয়ার ঠেলতে সহজ না টানতে সহজ…
কাগজের ঠোঙায় ওয়াই.ডব্লু.সি.এ. এর ক্যান্টিন থেকে আসা চপচপে আলুর চপ আর সিঙাড়া।
বিলাসী আর নবকুমার।
জিম আর ডেলা।
ফেয়ার ড্যাফোডিলস উই উইপ টু সী ইউ হেইস্ট আওয়ে সো সুন! সো-ও-ও সুন!
তবু, মাইলস টু গো বিফোর আই স্লিপ…
বাইরে দেয়ালের ওইপারে দাঁড়িয়ে আছে ১৯৯৫ সাল। কী এনেছে আমাদের জন্যে?বর্ষভরা পূঁজির বিনিময়ে?

। । উপচে পড়া জলের কথা/বুঝবে না তো কেউ। ।
আমাদের বাড়ির কয়েকটা বাড়ি পরেই দুঃখ-বাড়ি, দু’টি ছেলেমেয়ে, একটি বিধবা মা- ঐ বাড়িতে থাকে। ছেলেটা কোনো ছোটখাট অফিসে চাকরি করে, শীতগ্রীষ্ম হররোজ সে করুণ একটা নীলচে শার্টের উপরে খাকি হাফ-সোয়েটার পরে কাদাপানি টপকে কাজে যায়- ওর ঐ রাস্তা ডিঙানোও যে কী করুন। ওর ছায়ার মতন অনুসরণশীল একটা দুঃখী জীবনের গল্প আছে, লোকমুখে শুনেছি, মানে আমাদের কাজের মহিলা নুরেজার মায়ের মুখে, কথা-কুড়ানি তো সেই, আমাদের ‘ইভনিং স্ট্যান্ডার্ড’। অল্পবয়েসে সে স্কুলের পড়া শেষ করে এক মামার দোকানে বসতো, দোকানেই রাতে ঘুমাত। একরাতে ডাকাতি হয় দোকানে, ডাকাতরা তার গলায় কিছু ঢেলে দিয়েছিল বা গলায় পোঁচ দিয়েছিল এ’রকম ভয়ানক কিছু ঘটেছিল সে’রাতে, এরপর থেকে সে ফিসফিসিয়ে ছাড়া কথা বলতে পারে না।
আমাদের গলির শুরুর বাড়িটা কাঁচাপয়সাওলা নজরুল সাহেবের, বারান্দাতেও আকাশি টালি লাগানো। মরশুমী ফুলে টব উপচে পড়ছে। কলেজ থেকে ফিরবার সময় প্রতিদিন আমার মনে হয়, ঐ বাড়ির একটা ঘরের নাম কোপভবন, গোঁসা-ঘর। সেখানে রানী কৈকেয়ী মূর্ছা খেয়ে পড়ে আছে। গায়ে ব্লু সাউথ-ইন্ডিয়ান চওড়াপাড় শাড়ি। চুল খোলা। বুড়ো রাজা দশরথ লোভের চোখে রানীর বুকের রেখা দেখছে। মুখ যদিও বিচলিত।
আচ্ছা, দুঃখ-বাড়ির ছেলেটা রোজ কাজের থেকে ফিরে এসে ছাদে দাঁড়ায়। ঠিক সাত কদমে পায়চারি করে। তারপর উত্তরদিকে মুখ করে বসে থাকে। উত্তর দিকে বিশাল ধূ-ধূ মাঠ। তার শেষে বস্তির ধূসর রেখার উপর থেকে লিকলিক করে ধোঁয়া উঠতে থাকে। সে বসেই থাকে- স্টিমারের ভোঁ-ধ্বনির মতো ভেসে থাকে সন্ধ্যার অন্ধকারের উপরে। (বিশ্বাস করো, ওর নাম জানবার কোনো নরম-রুমালের মতো ইচ্ছা আমার হয়নি। ) “অনুযোগহীনভাবে যন্ত্রণা সয়ে যাওয়া এমন একটি শিক্ষা, যার পাঠ প্রত্যেককে নিজের জীবনে নিতে হবে”…এটা ভ্যানগখের কথা। ভ্যানগখ আমায় ধরিয়েছে কে? তার কথায় পরে আসি।
আমার পৃথিবী মোটের উপরে দ্বিমাত্রিক। সব ছবি।
আমি দেখতে ভালবাসি।

** পুরো উপন্যাস ই-ম্যাগাজিনে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

ঈদ সংখ্যা এর সর্বশেষ