ঢাকা, বুধবার, ৩১ চৈত্র ১৪৩১, ১৫ মে ২০২৪, ০৬ জিলকদ ১৪৪৫

ঈদ সংখ্যা

ঈদ আয়োজন

ফেলে আসা জীবন আমার | রাজ্জাক

চলচ্চিত্র / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১৪
ফেলে আসা জীবন আমার | রাজ্জাক

চিমাই মোল্লার ছেলের নাম মো. আকবর হোসেন মোল্লা। আকবর মোল্লা একজন সাধারণ ব্যবসায়ী।

টালিগঞ্জের নাগতলায় আট নম্বর বাড়িতে থাকতেন। কলকাতা শহরে তার অনেক জমিজমা ছিল পৈতৃক সূত্রে। চব্বিশ পরগনার বোড়াল গ্রামেও ছিল একটা বিশাল বাড়ি। আকবর মোল্লা প্রায়ই যেতেন তার গ্রামের বাড়িতে। তার উদ্যোগে গ্রামে বছরে তিনবার যাত্রাপালার আসর বসত। তিনি ছিলেন সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষ। সপ্তাহে দু’বার স্ত্রী-পরিবারসহ সিনেমা এবং থিয়েটার দেখতে যেতেন।

এই আকবর মোল্লার স্ত্রী নেছারুন নেছা ছিলেন রক্ষণশীল। স্বামী-সংসার নিয়েই তার নিত্যদিন কেটে যেত। রান্নাঘরের বাইরের পৃথিবী সম্পর্কে তার খুব একটা জানা নেই। তার জানার আগ্রহ তার স্বামী-সন্তান আর পরিবার। এতেই তিনি সুখী।

আকবর আর নেছারুন নেছার বড় ছেলের নাম আবদুস শুক্কুর। তিনি গানের তালিম নিতেন তার এক মামার কাছে। মামা ভালো গজল গাইতেন। তিনি বড় বোন নেছারুন নেছার বাসায় থেকে ভাগ্নে-ভাগ্নিদের লেখাপড়া এবং গান শেখাতেন। দ্বিতীয় ছেলে আবদুস গফুর। নেছারুনের দুই মেয়ে সবরুণ নেছা ও তসিবুন্নেছা। সুন্দর সাজানো-গোছানো একটি সংসার।

নেছারুন নেছা তখন পঞ্চম সন্তানের অপেক্ষায়। ১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি জাপানি বোমারু বিমানের আকস্মিক আক্রমণের আশঙ্কায় গোটা ভারতবর্ষ শঙ্কিত। কলকাতা শহর সন্ধ্যার পর একেবারে চুপ। অন্ধকার। গোটা শহর ভয়ে চুপ হয়ে থাকলেও টালিগঞ্জের নাগতলা পাড়ার আট নম্বর বাড়িটা ছিল সেদিন অন্য উত্তেজনায় উত্তেজিত। ব্যবসায়ী আকবর হোসেনের মনে ছিল শঙ্কা আর আনন্দের মিশ্র অবস্থা। সেই রাতের আকবর সাহেবের ঘরে জন্ম নিল তার পঞ্চম সন্তান।

আকবর সাহেবের এই পঞ্চম সন্তানই আমি। ছোটবেলা থেকে আমাকে আদর করে সবাই রাজা বলে ডাকত। সারাদিন হৈচৈ করে গোটা পাড়া মাতিয়ে রাখতাম। একবার জেদ ধরলে কেউ আমাকে বশ মানাতে পারত না। আমার বয়স যখন সাত বছর তখন আমার ছোট্ট একটি বোন হলো। তার নাম রাখা হয় ছবি। আমি অহেতুক ছবিকে চিমটি কাটতাম। এ নিয়ে মা যে কত ধমকাতেন আমাকে তা বলে শেষ করা যাবে না।

আমি কেমন জেদি ছিলাম তার একটা ঘটনা বলি। একদিন মায়ের কাছে আবদার করলাম, আমাকে বল কিনে না দিলে পড়ালেখা করব না! বাবাকে তিনি এ কথা জানালেন। একদিন বাবা ঘরে এসে আমাকে ডাকলেন। আমি তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। মনে ভয় ছিল, না জানি কী বলেন। কিন্তু বাবা আমাকে অবাক করে দিয়ে তার জামার পেছনে লুকানো একটা ফুটবল আমার সামনে এনে ধরলেন। আর বললেন, ‘এই নাও তোমার বল। এবার ঠিকভাবে পড়াশোনা করবে। পড়াশোনা না করলে ফুটবল কিন্তু আলমারিতে তুলে রাখব। ’

ঠিক আছে বলে আনন্দে লুফে নিলাম বলটা। তখন থেকেই দক্ষিণ কালীগঞ্জ ক্রীড়া সংস্থায় খেলতে শুরু করি। আমি ছিলাম আন্তঃস্কুল ফুটবল টুর্নামেন্টে সেরা খেলোয়াড় ও ভালো গোলকিপারদের একজন। এটা ১৯৫২-৫৩ সালের ঘটনা। আমি তখন ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। আমাদের ক্রীড়া শিক্ষক ছিলেন রথীন্দ্রনাথ ব্যানার্জি। আর আমার ফুটবল খেলার সঙ্গী ছিল নান্নু, সুবোধ, লালজী, বদরুদ্দীন এবং এহসান এবং আরও কয়েকজন (অনেকের নাম মনে করতে পারছি না)। স্যার আমাকে ডেকে বললেন, হ্যাঁ রে রাজা নাটকে অভিনয় করবি? আমি অবাক হয়ে বললাম ‘নাটক! স্যার বললেন, হ্যাঁ নাটক। আমি তাকে আবার জিজ্ঞেস করলাম কিসের নাটক? তিনি বললেন, কেন জানিস না প্রতি বছরের মতো এ বছরও আমাদের স্কুলে নাটক হবে। রবিঠাকুরের [রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর] বিদ্রোহী নাটক। আমি তোকে হেরম্বরের মতো বিদ্রোহী করে গড়ে তুলতে চাই। আমি বললাম, না স্যার, আমি অভিনয় করব না। স্যার বললেন, আরে বলিস কী রে বোকা ছেলে। নাটক করলে অনেক সুনাম হয়। গ্রামে-গঞ্জে-শহরে-মফস্বলে তোর নাম ছড়িয়ে পড়বে রে। তোকে সবাই চিনবে-জানবে। ওই দিন প্রস্তাবটা মেনে নিলাম।

** পুরো রচনা ই-ম্যাগাজিনে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

ঈদ সংখ্যা এর সর্বশেষ