ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

শিক্ষা

বেদখল সম্পত্তি দেড় যুগেও ফেরত পাননি অধ্যাপক অরুণ কুমার

রাবি করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০০ ঘণ্টা, জুলাই ১, ২০২২
বেদখল সম্পত্তি দেড় যুগেও ফেরত পাননি অধ্যাপক অরুণ কুমার

রাবি: খ্যাতিমান পদার্থবিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক অরুণ কুমার বসাক। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের এবং পদার্থবিজ্ঞানে দেশের একমাত্র ইমেরিটাস অধ্যাপক তিনি।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে তার প্রকাশনার সংখ্যা প্রায় ২০০।  

৮২ বছর বয়সী এই শিক্ষাবিদের সম্পত্তি দখল করে বিগত ১৮ বছরের বেশি সময় ধরে তার প্রতিবেশী হয়রানি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ে জিতলেও সেই জমিকে তিনি দখলমুক্ত করতে পারছেন না।  

জানা গেছে, রাজশাহী মহানগরীর সাগরপাড়া এলাকায় অধ্যাপক বসাকের নিবাস। জমিটি বসাকের স্ত্রী দেবিকা বসাকের নামে ছিল। ২০২০ সালের নভেম্বরে স্ত্রী দেবিকা বসাকের মৃত্যুর পর নি:সন্তান বসাকই এ বাড়িটির মালিক হন। ২০০৩ সালে তার প্রতিবেশী ইয়াহিয়া ফেরদৌস নিজের জমিতে দোতলা বাড়ি তৈরি করেন। ইয়াহিয়া ফেরদৌস সাগরপাড়া ওয়াকফ এস্টেট নামের একটি এস্টেটের মোতোয়াল্লি বা তত্ত্বাবধায়ক। বাড়ি তৈরির সময় ইয়াহিয়া ফেরদৌস প্রতিবেশী বসাকের বাড়ির সীমানাপ্রাচীর ভেঙে দুই ফুটের বেশি জায়গা দখল করে নিজের বাড়িটি নির্মাণ করেন।

এরপর নির্মাণ বিধি ভঙ্গের অভিযোগে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) কাছে অভিযোগ করেন দেবিকা। ফেরদৌসের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিতে আরডিএ সময় নেয় সাত মাস। ততদিনে জমির একটি অংশ দখল করে ভবন নির্মাণ শেষ করে ফেলেছেন ফেরদৌস। অবৈধ স্থাপনা অপসারণের জন্য ফেরদৌসকে চূড়ান্ত নোটিশ দিতে ৫ বছর সময় নেয় আরডিএ এবং ২০০৮ সালের মে মাসে সেই নোটিশ দেয়।

ফেরদৌস সেই সিদ্ধান্তকে রাজশাহীর আদালতে চ্যালেঞ্জ করেন। একই সঙ্গে দেবিকার বিরুদ্ধে ওয়াকফ্ এস্টেটের জমি দখলের অভিযোগ আনেন। পরে আদালত এই অভিযোগ খারিজ করে দেন। ২০১৪ সালে ফেরদৌস আপিল করলে জেলা আদালত বাদীকেই ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন। ২০১৭ সালে ফেরদৌস মামলাটি হাইকোর্টে নিয়ে যান।  

২০২০ সালের জানুয়ারিতে হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখেন এবং আরডিএর সিদ্ধান্তকে বৈধতা দেন। একই রায়ে হাইকোর্ট ফেরদৌসকে দেবিকার কাছে ক্ষমা চাইতে এবং অধ্যাপক অরুণ ও তার পরিবারকে হয়রানি না করার প্রতিশ্রুতি দিতে বলেন।  

হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী ২০২০ সালের অক্টোবরে ফেরদৌস তার অবৈধ অবকাঠামো সরিয়ে নিলেও এখনও জমির ওই অংশ দখল করে আছেন। তিনি জায়গাটির চারপাশে ধাতব গ্রিল ও গাছ লাগিয়ে রেখেছেন।

জানতে চাইলে অধ্যাপক অরুণ কুমার বসাক বাংলানিউজকে বলেন, আরডিএ সময় মতো পদক্ষেপ নিলে বিষয়টি এত দূর গড়াত না। আমি পড়াশোনা ও গবেষণা নিয়েই ব্যস্ত থেকেছি আজীবন। সম্পত্তি দেখাশোনা করতে পারিনি। আর এ সুযোগটাই কাজে লাগিয়েছেন আমার প্রতিবেশী। আমি এখন নিজের বাড়িতেই অনিরাপদ বোধ করি।  

তিনি আরও বলেন, দখলদার ফেরদৌস তার অবৈধ অবকাঠামো সরিয়ে নিলেও এখনও জমির ওই অংশ দখল করে আছেন। এটা নিয়ে আরডিএ’র কাছে প্রতিকার চেয়ে একাধিকবার অভিযোগ জানালেও কোনো প্রতিকার পাইনি। সমাধান খুঁজতে দুয়ারে দুয়ারে গিয়েছি, কিন্তু লাভ হয়নি। কেউই আমাকে সাহায্য করেননি।

জানতে চাইলে প্রতিবেশী ফেরদৌস বাংলানিউজকে বলেন, আদালত আমাকে বলেছেন আমি যেন অধ্যাপক বসাককে সন্তুষ্ট করি। আমি জায়গাটি থেকে গাছগুলো কেটে ফেলব। প্রাচীরটি কবে অপসারণ করবেন জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দেননি।  

আরডিএ কর্মকর্তা আবুল কালাম বাংলানিউজকে বলেন, ইমারত বিধি লঙ্ঘন করায় আমরা ইয়াহিয়া ফেরদৌসকে তার অবৈধ অবকাঠামো অপসারণের নোটিশ দিয়েছিলাম। উচ্চ আদালতের রায়ের পর সম্প্রতি ইয়াহিয়া ফেরদৌস বাড়ির নির্মিত অবৈধ অংশ অপসারণ করেছেন। তবে তাকে উচ্ছেদের বিষয়টি আরডিএ’র কর্তৃত্বে নেই। অধ্যাপক বসাক আদালতে উচ্ছেদের মামলা করতে পারেন। আদালত আদেশ দিলে আমরা উচ্ছেদের পদক্ষেপ নিতে পারব।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ০১, ২০২২
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।