ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

শিক্ষা

৫৪৩ দিন পর বাজলো ঘণ্টা, চোখে চোখে উচ্ছ্বাস

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০২১
৫৪৩ দিন পর বাজলো ঘণ্টা, চোখে চোখে উচ্ছ্বাস স্কুলে ঢুকছে শিক্ষার্থীরা।

খুলনা: হৈ হৈ করে ঘাড়ে ব্যাগ নিয়ে স্কুলে ঢুকছে শিক্ষার্থীরা। চিৎকার, আর বাঁধভাঙা জোয়ারে আনন্দের বহিঃপ্রকাশ তাদের।

ঢং ঢং করে বাজলো ঘণ্টাধ্বনি। সবাই ঢুকলো শ্রেণিকক্ষে। তাদের বরণ করে নিতে প্রতিটি শ্রেণিকক্ষ, স্কুলের আঙিনা সাজানো হয়েছে রঙিন কাগজ, জরির মালা, বিভিন্ন রঙের বেলুন ও কাগজের ফুল দিয়ে।

সব মিলিয়ে আনন্দে আপ্লুত শিক্ষার্থীরা। যে কারণে রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) সময়ের অনেকে আগেই তারা স্কুলে চলে এসেছে।

এদিন সেন্ট জোসেফস উচ্চ বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী বিজয় রায় বাংলানিউজকে বলে, স্কুল ১০টায় শুরু হলেও আমি ৭টার সময় চলে এসেছি। স্কুল খুব সুন্দর করে সাজিয়েছে। দেখে ভীষণ ভালো লাগছে।

একই স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী দীপ্ত সরকার বলে, অনেক দিন পর সহপাঠীদের সঙ্গে দেখা হয়েছে। করোনার কারণে ঘরবন্দি থাকতে থাকতে হাঁপিয়ে উঠেছিলাম। এখন স্কুল খুলেছে। আগের মতো স্কুলে এসে ক্লাস করতে পারবো। এর চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে।

সেই ব্ল্যাক ও হোয়াইট বোর্ড, সেই চক-ডাস্টারের গন্ধ, সেই চেয়ার-টেবিল, লম্বা করিডোরে দৌড়ঝাঁপ। যেন অনেকদিন পর প্রাণ ফিরে পেয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। এতে শিক্ষার্থীরা যেমন আনন্দিত তেমনি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন অভিভাবকরাও।

সরকারি করোনেশন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী রাজিয়া সুলতানার মা বলেন, এতদিন বন্দি জীবনে আমার মেয়ে অনেক মানসিক চাপে থাকতো। এখন ক্লাসে এসে স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাবে। এতে স্বস্তি পাচ্ছি আমরা।

সালাহ উদ্দিন ইউসুফ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ঠাকুরদাস তরফদার বাংলানিউজকে বলেন, শিক্ষার্থীদের বরণের জন্য সকাল ৭টায় স্কুলে এসে বসে আছি। যদিও ক্লাস শুরু সকাল ১০টায়।  

করোনার কারণে বাংলাদেশে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এরপর ৫৪৩ দিন পর চালু হয়েছে সশরীরে ক্লাস।

খুলনা জেলা শিক্ষা অফিসার খন্দকার রুহুল আমীন বাংলানিউজকে বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মেনে  জেলার সকল সরকারি-বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা খুলে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৪২০টি স্কুল, ১২৫টি মাদরাসা ও ৭৩টি কলেজ রয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সূত্রে জানায়, খুলনা জেলায় ১ হাজার ১৫৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৪২০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে মহানগরে ১৫৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ১শ’টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। বাকিগুলো জেলার নয়টি উপজেলায় অবস্থিত।

হাজী শরীয়াত উল্লাহ বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক শেখ জাহিদুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করানো হয়েছে। প্রথম দিন ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়েছে। দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকার পর স্কুল খোলায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমরাও অনেক আনন্দিত।

খুলনা সরকারি মহিলা কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক বিকাশ রায় বাংলানিউজকে বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক অতি প্রাচীন। সংক্রামক ব্যধির আগ্রাসন সে সম্পর্ক ভেঙে গৃহবন্দি করেছিল। তবে সেই বন্দিদশা ছেড়ে আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরেছে শিক্ষার্থীরা। এটা আসলে কতটা আনন্দের তা ভাষায় ব্যক্ত করে বোঝানো যাবে না।

মাদরাসাতুল ইত্তিহাদের প্রিন্সিপাল জহির আমিন বলেন, অনেকদিন পর বাচ্চাদের কোলাহলে মুখরিত হয়ে গেল মাদরাসা আঙিনা। ঘণ্টাধ্বনির শব্দ পেল শিক্ষার্থীরা। তাদের পদচারণায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোববার প্রথম দিনে খুলনা জেলা স্কুল, সরকারি করোনেশন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, খুলনা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, খুলনা সরকারি ল্যাবরেটরি উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি ইকবাল নগর বালিকা বিদ্যালয়, সেন্ট জোসেফস উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, কেডিএ খানজাহান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি মহসিন উচ্চ বিদ্যালয়, খুলনা বিদ্যুৎ কেন্দ্র মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি অনেক বেশিই ছিল। এদিন অধিকাংশ স্কুলের সামনেই দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়েছে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা গেছে অভিভাবকদেরও।

খুলনা জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. সাদিকুর রহমান খান বাংলানিউজকে বলেন, জেলা শিক্ষা পরিবার ও জেলা প্রশাসন স্কুল খোলার আগে প্রধান শিক্ষকদের নিয়ে বসেছিল। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা, স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন, বিদ্যালয়ের প্রস্তুতি এবং শিক্ষার্থীদের নির্দেশনা নিয়ে ওসব বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আজ সকাল থেকে বিভাগীয় কমিশনার, খুলনা জেলা প্রশাসক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকসহ আমরা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখেছি। সব জায়গায় পরিবেশ সন্তোষজনক। আশা করছি সরকারি যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তা প্রতিপালনের মধ্য দিয়ে আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম আগামী দিনে চলমান রাখা যাবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১১৩৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০২১
এমআরএম/এনএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।