ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

শিক্ষা

শঙ্কা নিয়েই খুলছে সিরাজগঞ্জ চরাঞ্চলের ১২৫ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২১
শঙ্কা নিয়েই খুলছে সিরাজগঞ্জ চরাঞ্চলের ১২৫ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

সিরাজগঞ্জ: একদিন পরেই স্কুল খুলবে তাই ধোয়া মোছার কাজ চলছে সিরাজগঞ্জ চরাঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। বেশিরভাগ স্কুল মাঠের চারদিকে উঠেছে বন্যার পানি।

কোনো কোনো স্কুলের পানি নেমে গেলেও এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশরই যাতায়াতের রাস্তাগুলো এখনো তলিয়ে রয়েছে। তাই বাচ্চদের স্কুলে পাঠানো ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন অনেক অভিভাবক।

সদর উপজেলার পার পাচিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দফতরি হাসি খাতুন। স্কুল ধোয়া-মোছার কাজে ব্যস্ত তিনি। তার মেয়েকেও লাগিয়ে দিয়েছেন একই কাজে। সবেমাত্র স্কুল মাঠের পানি নেমে গেছে। তবে চারদিকে এখনও পানিতে থৈ থৈ করছে। এ অবস্থাতেই খোলা হচ্ছে এ স্কুলটি। এ কারণেই এতো ধোয়া মোছা বলে জানালেন, হাসি খাতুন।  

শুক্রবার (১০ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় ওই স্কুলের বেশ ক’জন অভিভাবকের সঙ্গে। তারা বলেন, স্কুল মাঠের চারদিকে পানি। বাচ্চদের পাঠানো ঝুঁকিপূর্ণ। চারদিকের পানি না শুকানো পর্যন্ত তারা সন্তানদের স্কুলে পাঠানো নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে রয়েছেন বলে জানান।  

সদর উপজেলার এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষিকা সালেহা খাতুন বলেন, আমরা স্কুল খোলার জন্য সব প্রস্তুতি নিয়েছি। বাচ্চাদের আমরা সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দেব। স্কুলের পাশে আমরা দু-একজন শিক্ষককে পাহাড়ায় রাখবো যাতে করে কোনো বাচ্চা পানির আশপাশে না যায়।  

একই উপজেলার খোকশাবাড়ি ইউনিয়নের বেলতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে হাঁটু পানি থাকলেও এর উঁচু ভবনটিতে আশ্রয় নিয়েছেন বন্যা কবলিত ৬টি পরিবার।  

এখানে আশ্রয় নিয়েছেন স্কুলটিতে। রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) স্কুল খোলার ঘোষণা হলেও তার কোনো নমুনা চোখে পড়েনি স্কুলটিতে। খোলার কোনো প্রস্তুতি চোখে পড়েনি এ স্কুলটিতে।  

ওই স্কুলের কক্ষে আশ্রয় নেওয়া রব্বানি ও ফজল করিম বলেন, বন্যায় তাদের বাড়িঘর তলিয়ে গেছে। তিন-চারদিন ধরে পানি নামতে থাকলেও বাড়ির শুকোতে আর প্রস্তুত করতে অন্তত ৪/৫ দিন সময় লাগবে। এ কয়দিন স্কুল ঘরেই থাকতে হবে।  

মুক্তি খাতুন নামে একজন অভিভাবক বলেন, অনেকদিন পর স্কুল খুলছে। বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানো যেমন খুব প্রয়োজন। আবার স্কুলে আশ্রয় নেওয়া মানুষগুলোর দু:খ-কষ্টও দেখা দরকার।  

সদর উপজেলা সহকারি প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবিদা সুলতানা বলেন, ১২ তারিখে পাশের কোনো বাড়িতে হলেও স্কুল চালানো হবে।  

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সয়দাবাদ ইউনিয়নের ছাতিয়ানতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ছোনগাছা ইউনিয়নের ভাটপিয়ারী, পাঁচ ঠাকুরী, কাজিপুর উপজেলার খাস রাজবাড়ি ইউনিয়নের কালিকাপুর, মাইজবাড়ি ইউনিয়েনের মল্লিকপাড়া, চৌহালী উপজেলার উমারপুর ইউনিয়নের পাথরাইল, হাফানিয়া ও পাথরাইল উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালসহ জেলার নিম্নাঞ্চলের শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করেছে বন্যার পানি। এর মধ্যে ১০৫টির মতো প্রাইমারি স্কুল ও ২০টার মতো মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদরাসা এবং কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। পানি নেমে গেলেও এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশরই যাতায়াতের রাস্তাগুলো এখনো  তলিয়ে রয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীদের স্কুল পাঠানা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন অভিভাবকরা। তবে সংশয় দূর করে স্কুলে পাঠদান কার্যক্রম নিরাপদ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন শিক্ষা কর্মকর্তা ও শিক্ষকরা।  

আকিব, রুবেল, শাকিল, শিউলী, বিলকিসসহ একাধিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা স্কুল যাওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে রয়েছে। যে কোনভাবেই তারা স্কুলে যাবে। দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর পর স্কুল খোলায় উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে এসব ছাত্র-ছাত্রীদের মনে।  

শাহানা বেগম, নূরী খাতুন, আব্দুল খালেক, মিজানুর রহমান, রোস্তম আলী, হবিবর রহমান নামে বেশ ক’জন অভিভাবক বলেন, অনেকদিন পর স্কুল খুলবে-বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানো দরকার। কিন্তু তাদের নিরাপত্তার কথাটা ভেবে-চিন্তেই স্কুলে পাঠাতে হবে।  

চৌহালী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মনিরুজ্জামান বলেন, এ উপজেলাটি এমনিতেই দুর্গম। তার ওপর ২৫টার মত স্কুলে পানি উঠেছিল। এখন পানি নেমে গেছে। আমরা সব স্কুল খোলার প্রস্তুতি নিয়েছি।  

জেলা সহকারি প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আল এমরান খন্দকার বলেন, জেলার ১০৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে পানি উঠেছিল। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সবগুলো বিদ্যালয় মাঠের পানিই নেমে গেছে। বিদ্যালয়গুলো ধোয়া মোছার কাজ চলছে। আশা করছি ১২ সেপ্টেম্বর সবগুলো স্কুল একযোগে খোলা সম্ভব হবে। তারপরও কোনো স্কুল যদি খোলা সম্ভব না হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশের কারও বাড়ির পরিত্যক্ত কাচারি ঘরে স্বল্প পরিসরে হলেও ক্লাস নেওয়া হবে।  

তিনি আরও বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল খোলা হবে। বাচ্চাদের তাপমাত্রা পরীক্ষা, মুখে মাস্ক বাধ্যতামূলক থাকবে। নির্দিষ্ট দূরত্ব মেনেই বাচ্চাদের ক্লাসে বসানো হবে।  

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. শফিউল্লাহ বলেন, জেলার ২০ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা এবং কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠে পানি উঠেছিল। এখন সবগুলোর পানি নেমে গেছে। পাঠদান কার্যক্রম চালাতে আর কোনো সমস্যা হবে না।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২১
এমআরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।