ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

শিক্ষা

শাহ মখদুম মেডিক্যালে শিক্ষার্থী পেটানোর ঘটনায় মামলা, গ্রেফতার ২

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০২০
শাহ মখদুম মেডিক্যালে শিক্ষার্থী পেটানোর ঘটনায় মামলা, গ্রেফতার ২

রাজশাহী: সদ্য বন্ধ ঘোষণা করা রাজশাহীর বেসরকারি শাহ মখদুম মেডিক্যাল কলেজ শিক্ষার্থীদের বাঁশ-রড দিয়ে পেটানোর ঘটনায় মামলা হয়েছে। এতে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মনিরুজ্জামান স্বাধীনসহ মোট ২২ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলায় নয় জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১৩ জনকে আসামি রয়েছে। এ মামলায় ইতোমধ্যে কলেজের এমডির স্ত্রী ও ভাইকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

শনিবার (২৮ নভেম্বর) দুপুরে রাজশাহী মহানগরীর চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুম মনির বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।  

তিনি বলেন, শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) সন্ধ্যার দিকে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এ হামলার ঘটনায় আহত ছাত্র আশিকুর রহমান বাদী হয়ে বন্ধ ঘোষিত শাহ মখদুম মেডিক্যাল কলেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মনিরুজ্জামান স্বাধীনকে প্রধান আসামি করে মোট ২২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। এ মামলায় শুক্রবার রাতেই অভিযান চালিয়ে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার দু’জন হলেন- এমডি মনিরুজ্জামান স্বাধীনের স্ত্রী বিউটি খাতুন ও ভাই মেহেদী হাসান মিথুল।  

অন্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলেও জানান ওসি সিরাজুম মনির।

হামলার ঘটনায় বর্তমানে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থীরা হলেন- রায়হান (২১), তাহসিন (২১), সাব্বির (২১), ফাওজিয়া (২১), বিদিশা (২১), মেধা (২১), রেফাত (২১), নিশাত (২১) ও জেবা (২১)।

এদিকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ও দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে সকালে  শাহ মখদুম মেডিক্যাল কলেজ ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ সমাবেশে শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশিত আদেশের বলে দ্রুত সময়ে অন্য প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজে তাদের মাইগ্রেশন সম্পন্ন করার দাবি জানিয়েছেন। বিক্ষোভ সমাবেশে কলেজের শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা জানান, শুরু থেকেই ভাড়া করা শিক্ষক ও সরঞ্জাম দিয়ে চলছিল রাজশাহীর বেসরকারি শাহ মখদুম মেডিক্যাল কলেজ। ২০১৩ সালে শিক্ষা কার্যক্রম চালুর পর থেকে নানা অঘটনের মধ্যদিয়ে বছর বছর শিক্ষার্থী ভর্তি করে আসছিল কলেজটি। প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ পরিচালনার কোনো শর্ত পূরণ না হওয়ায় গত ২ নভেম্বর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক নির্দেশপত্রে কলেজটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়।  

এ পর্যন্ত কলেজটিতে বিভিন্ন শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস কোর্সে মোট ২২৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের দেশের যেকোনো প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজে দ্রুত মাইগ্রেশনের ব্যবস্থার জন্য রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরপর থেকে শিক্ষার্থীরা দ্রুত মাইগ্রেশনের দাবিতে আন্দোলন করছেন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জারি করা নির্দেশপত্রে বলা হয়েছে- ২০১৩ সালে চালুর পর প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ পরিচালনার কোনো শর্তই পূরণ করতে পারেনি রাজশাহীর শাহ মখদুম মেডিক্যাল কলেজ। ফলে এটি পরিচালনা ও শিক্ষার্থী ভর্তির উপযোগী নয়। সেই সঙ্গে বন্ধ ঘোষণা করে চলতি শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি না করতে নির্দেশ দেওয়া হলো। শর্তহীনভাবে শিক্ষার্থীদের ছাড়পত্র দিতেও কলেজকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এ নির্দেশ পুনর্বিবেচনার আবেদন করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। এর পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার (২৮ নভেম্বর) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি টিম কলেজটি পরিদর্শনের নোটিশ দেন।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, মন্ত্রণালয়ের একটি টিম মেডিক্যাল কলেজটি পরিদর্শন করবে এবং তাদের দেখানোর জন্য শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় অন্য জায়গা থেকে মেডিক্যাল সরঞ্জাম এনে শাহ মখদুম মেডিক্যাল কলেজের ল্যাবে বোঝাই করা হচ্ছিলো। শিক্ষার্থীরা তা দেখে নিজেরা ছবি তুলছিলেন। এ সময় ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছেন এমডি মনিরুজ্জামান স্বাধীন।

শিক্ষার্থীরা আরও অভিযোগ করেন, শাহ মখদুম মেডিক্যাল কলেজের ওয়েবসাইটে ৪০ জন শিক্ষকসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে সব কিছু ঠিকঠাক চলছে এমন সব তথ্য তুলে ধরে প্রচার করে প্রতিটি সেশনে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে।

কিন্তু বাস্তবে ভাড়া করা শিক্ষক ও ভাড়ায় আনা মেডিক্যল সরঞ্জাম দেখিয়ে একাডেমিক অনুমতি নবায়ন করে আসছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। মূলত শাহ মখদুম মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসা বিজ্ঞান শিক্ষার কোনো পরিবেশ নেই।  

আরও পড়ুন>>
বাঁশ-রড দিয়ে পেটানো হলো শাহ মখদুম মেডিক্যালের শিক্ষার্থীদের

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০২০
এসএস/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।