ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

শিক্ষা

শিক্ষার্থীদের দোরগোড়ায় প্রাথমিকের শিক্ষকরা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০২০
শিক্ষার্থীদের দোরগোড়ায় প্রাথমিকের শিক্ষকরা ..

ফেনী: করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে ছয় মাসের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। স্কুল খোলার মতো পরিস্থিতি এখনও তৈরি হয়নি বলে জানিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

কিন্তু এ সংকটকালেও থেমে নেই সরকারি প্রাথমিকের শিক্ষা কার্যক্রম। সংসদ টিভি, বেতার ও প্রত্যেকটি জেলা অনলাইন স্কুলের মাধ্যমে পাঠদান করে আসছিলেন শিক্ষকরা।  

সম্প্রতি ফেনীতে আরও একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ চোখে পড়ে। শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন শিক্ষকরা। শিক্ষার্থীদের বাড়ি পরিদর্শনের কর্মসূচি ও পড়াশোনার খোঁজ-খবর নেওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারেও উৎসাহিত করছেন তারা। শিক্ষকদের এমন উদ্যোগকে প্রশংসা করছেন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা।  

এদিকে দীর্ঘদিন পর শিক্ষকদের দেখতে পেয়েও দারুন খুশি শিক্ষার্থীরা। অভিভাবকরা বলছেন, শিক্ষকরা বাড়ি এসে শিক্ষার্থীদের খোঁজ নেওয়ার বিষয়টি বাচ্চাদের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে এবং বাচ্চাদের পড়াশোনায় আগ্রহী করে তুলছে।  

সোনাগাজী উপজেলার মঙ্গলকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মৃদুলা শর্মা তুলতুল জানায়, শিক্ষকরা বাড়ি যাওয়াতে সে অনেক খুশি। শিক্ষকরা তাকে পড়ালেখা করার জন্য বলেছেন, অনেক কিছু শিখিয়ে গেছেন।  

মৃদুলার বাবা নিখু চন্দ্র শীল বলেন, শিক্ষকরা বাড়ি আসায় অনেক উপকার হয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীরা দীর্ঘদিন স্কুলে না যাওয়ায় তাদের মধ্য থেকে মনোযোগ হারিয়ে গিয়েছিল, শিক্ষকরা আসায় সে মনোযোগ ফিরে এসেছে। আর সে কারণেই বাচ্চারা আবার পড়ার টেবিলে বসতে আগ্রহী হচ্ছে।  

এ বিষয়ে কথা হয় ফেনী সদর উপজেলার দমদমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফেরদৌস আরা শাহিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, হোমভিজিটে গিয়ে যে কয়টি বিষয়ে জোর দিয়েছি তাহলো শিক্ষার্থীদের নিজেকে ও পরিবারকে করোনামুক্ত রাখতে, তথা সুস্থ থাকার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। এটা মানার জন্য রেডিও, টিভি দেখতে বলা। যেহেতু স্কুলে লম্বা ছুটি চলছে তাই বাড়িতে পড়াশোনার ব্যাপারে অভিভাবকদের মূল ভূমিকা নেওয়া।  

এছাড়া সংসদ টিভি দেখা, অনলাইন ক্লাসগুলো মনোযোগ সহকারে দেখার জন্য জোর দিয়ে বলি। এমনকি যাদের স্মার্টফোন নেই তাদের বাচ্চাদের সহযোগিতা করতে পাশের বাড়ির লোকদের অনুরোধ করি। কয়েকদিন পর পর অভিভাবকদের ফোনও করি। স্টুডেন্টদের সঙ্গেও কথা বলি।

দাগনভূঞা হীরাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাশেদা আক্তার বলেন, মূলত শিক্ষকদের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংযুক্ত থাকতে বলা হয়েছে। শিক্ষক শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষার্থীদের ভাগ করে দেওয়া আছে। শিক্ষকরা ফোনে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশনে সম্প্রচারিত পাঠদান দেখা, বাড়ির কাজ সংরক্ষণ করা, রেড়িওতে প্রচারিত পাঠদান শোনা এসব বিষয়ে খবর নেওয়া।

এ বিষয়ে কথা হয় ফেনী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ডিপিও) নুরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ফেনীতে মোট ৫৫৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। সবগুলো বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ফোনের মাধ্যমে তাদের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংযুক্ত আছেন। শিক্ষকরা ঘরে বসে শিখি কার্যক্রমের আওতায় পাঠের বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে আসছেন। যেসব শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের ফোন নেই স্বাস্থ্যবিধির আলোকে মাস্ক পরে তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিক্ষকরা খোঁজখবর নিচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় আগ্রহী করে তুলছেন।  

নুরুল ইসলাম বলেন, হঠাৎ স্কুল খুলে ফেললে আমরাতো শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নিয়ে ফেলতে পারবো না। তাদের তৈরি রাখতে এ ধরনের কর্মসূচি। এসব কর্মসূচির ফলে শিক্ষার্থীরা ঘরে বসেই শিখতে পারবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১১১৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০২০
এসএইচডি/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।