ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

শিক্ষা

বাবার মরদেহ বাড়িতে রেখে জেএসসি পরীক্ষা দিল নাফিজ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৫, ২০১৯
বাবার মরদেহ বাড়িতে রেখে জেএসসি পরীক্ষা দিল নাফিজ হাসপাতালে পরীক্ষা দিয়েছে নাফিজ। পরীক্ষা শুরুর ১০ মিনিট আগে তোলা ছবি।

নারায়ণগঞ্জ: জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় দেবে ছেলে। তার জন্য কলম কিনতে গিয়েছিলেন বাবা মো. ইসলাম মিয়া (৪৫)। কিন্তু, আর জীবিত বাসায় ফেরা হয়নি। বেপরোয়া গতিতে আসা মোটরসাইকেলের ধাক্কায় প্রাণ হারান তিনি।

বাবার মৃত্যুর সংবাদে জেএসসি পরীক্ষার্থী নাফিজ (১৪) গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। বাবার মরদেহ বাড়িতে রেখে কিছুতেই পরীক্ষায় অংশ নিতে রাজি নয় সে।

এ খবর শুনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সোহাগ হোসেন দ্রুত নিজের গাড়িতে করে নাফিজকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করিয়ে কেবিনেই পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেন।

সোমবার (৪ নভেম্বর) সকালে এ ঘটনা ঘটেছে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়া এলাকায়। নিহত লেপ-তোষক ব্যবসায়ী মো. ইসলাম মিয়া ওই এলাকার আব্দুস সামাদের ছেলে।

এলাকাবাসী ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, নাফিজ আড়াইহাজার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবছর জেএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। সোমবার (৪ নভেম্বর) ছিল তার ইংরেজি পরীক্ষা। সকাল ৮টার দিকে সে বাবাকে দোকান থেকে কলম কিনে আনতে বলে। ছেলের জন্য কলম কিনে বাসায় ফেরার পথে বাড়ির সামনের রাস্তায় বেপরোয়া একটি মোটরসাইকেলের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই মারা যান ইসলাম মিয়া। তার মৃত্যুর সংবাদে পরিবারের অন্য সদস্যরা আহাজারি করলেও বাবার জন্য নাফিজের কষ্টটা ছিল সবার চেয়ে বেশি। সে কান্নাকাটি করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ পর পরই জ্ঞান হারাতে থাকে সে।  

পরীক্ষার সময় হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু বাড়িতে বাবার মরদেহ রেখে ছেলে কিছুতেই পরীক্ষাকেন্দ্রে যেতে চাইছে না।  এমন মর্মান্তিক ঘটনার খবর শুনে নাফিজের বাসায় ছুটে যান আড়াহাইহাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহাগ হোসেন। তিনি নাফিজকে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন ও হাসপাতালের কেবিনে পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেন।  

পরে, নাফিজকে হাসপাতালে ভর্তি করে এক ঘণ্টা চিকিৎসা করিয়ে কিছুটা সুস্থ হলে পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। হাসপাতালের কেবিনের ভাড়া ফ্রি করার ব্যবস্থা করে দেন স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হাবিব ইসমাইল ভূইয়া।

ইউএনও সোহাগ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, খবর শুনে দ্রুত জেএসসি পরীক্ষার্থী নাফিজের বাসায় যাই। সেখানে তার পরিবারকে সান্ত্বনা দিয়ে অসুস্থ ছেলেটিকে হাসপাতালে ভর্তি করে সেখানেই তার পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। হাসপাতালে একজন শিক্ষক ও পুলিশ গার্ড দিয়েছেন।

তিনি বলেন, নাফিজ বাবাকে হারিয়ে এতিম হয়ে গেছে। তার লেখাপড়ার সব কিছু ফ্রি করে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। স্কুলের যত খরচ রয়েছে, সব ফ্রি করা হবে। আর নাফিজের বাবাকে ধাক্কা দেওয়া সেই মোটরসাইকেলের চালক রাসেলকে আটক করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০১৯
একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad