ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

শিক্ষা

সচিবের ‘গাড়িতে’ খুদে শিক্ষার্থী, আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৯
সচিবের ‘গাড়িতে’ খুদে শিক্ষার্থী, আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন ক্লাসে এক ছাত্রীর পড়া শুনছেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাকছুদুর রহমান পাটওয়ারী। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: কখনও সরকারি গাড়িতে তুলে নিয়ে উৎসাহ দিচ্ছেন, কখনও বা গাছতলায় বসে গল্প করছেন, কখনও ফুল দিয়ে জানাচ্ছেন শুভেচ্ছা। এভাবে সরকারের একজন সচিবের গাড়িতে ঘুরে, খোলা মনে গল্প করে আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্নে বিভোর খুদে শিক্ষার্থীরা।

অফিস ছুটির ফাঁকে নিজ এলাকা এবং তার বাইরে শিশু শিক্ষার্থীদের উৎসাহ যোগাতে সরকারের বাড়তি দায়িত্ব পালন করা নিয়ে সেই গল্পই করছিলেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাকছুদুর রহমান পাটওয়ারী।

সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তা বিশেষ করে সচিবেরা নিজ নিজ এলাকায় মেন্টরের দায়িত্ব পালন করছেন, আর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ছয়জন সচিব নিজ নিজ জেলার মেন্টর।

তারা প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনাসহ শিক্ষার্থীদের উৎসাহ যোগাচ্ছেন।

ভূমি সচিব মাকছুদুর রহমান চাঁদপুরে মেন্টর হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তার এলাকা এবং এলাকার বাইরের প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে কিছু কর্মকাণ্ড হাতে নিয়ে কাজ করছেন। তা নিয়েই আলোকপাত করেন এই মেন্টর।

ভূমি সচিব মাকছুদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, শুধু প্রাথমিক শিক্ষা নয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে চাঁদপুর জেলার সব কাজের মেন্টরের দায়িত্বে রয়েছেন তিনি।
শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলছেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাকছুদুর রহমান পাটওয়ারী।  ছবি: বাংলানিউজপ্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং ভিত্তি মজবুত করতে বিদ্যালয় পরিদর্শন করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে উৎসাহ দেন বলেও জানান তিনি।

মাকছুদুর রহমান জানান, মেন্টর হিসেবে ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবকদের সামনে কথা বলি। প্রাথমিক শিক্ষার ভিত্তি শক্ত হলে অন্যান্য স্তরেও শিক্ষার্থীদের ভিত মজবুত হবে। এজন্য পড়াশোনা আনন্দদায়ক করতে হবে।

‘বিদ্যালয় পরিদর্শনের সময় শ্রেণিকক্ষে ঢুকে হয়তো এক বাচ্চাকে বলি- তুমি রিডিং পড়ো। যখন বলি তুমি সুন্দরভাবে পড়েছো, অন্যরা হাত তালি দেয়, এতে ওই বাচ্চা খুশি হয়। আবার শ্রেণিকক্ষে কোনো বাচ্চাকে বোর্ডে কিছু লিখতে দিই, ভয় পেলেও অনেকে লিখে দেয়। এতে বাচ্চারা আনন্দ পায়। ’

সচিব বলেন, মাঝে মধ্যে শিশু-শিক্ষার্থীদের নিজ গাড়িতে তুলে নিই, বলি- তুমি ভালোভাবে পড়ালেখা করলে শুধু এরকম সরকারি গাড়ি নয়, হেলিকপ্টারেও উঠতে পারবে। তখন বাচ্চারা খুশি হয় এবং তাদের মধ্যে স্পৃহা বাড়ে।

নিজ গাড়িতে এক শিশুকে তোলার এক ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মেন্টর মাকছুদুর রহমান বলেন, একদিন এক স্কুলে গিয়ে এক বাচ্চাকে আমার গাড়িতে উঠতে বলি, সে ভয় পেয়ে গেল। পরে তাকে বোঝানো গেল।
শিক্ষার্থীদের বইয়ের পড়া দেখিয়ে দিচ্ছেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাকছুদুর রহমান পাটওয়ারী।  ছবি: বাংলানিউজসচিব বলেন, আমরা প্রাথমিকের শ্রেণিকক্ষ সুন্দরভাবে সাজিয়েছি। সমাজে সবার দায়িত্ব নিজ নিজ এলাকার মেন্টরের দায়িত্ব পালন করা। এজন্য মাঝে মধ্যে স্কুল ভিজিটে যাওয়া উচিত, বাচ্চাদের উৎসাহ দেওয়া হলে তাদের আত্মবিশ্বাস আরো বাড়বে। ম্যানেজিং কমিটিতে যারা আছে তারা গেলে আরো মান উন্নত হবে।

মাকছুদুর রহমান আরো বলেন, পরিদর্শনে গিয়ে দু’একটা বিদ্যালয়ে নোটবই দেখলাম। প্রাথমিক শিক্ষার জন্য নোটবইয়ের কোনো প্রয়োজন নেই। এ বিষয়ে বাচ্চা এবং তাদের অভিভাবকদের বুঝিয়েছি।

‘আর নিজ জেলার মেন্টর হিসাবে সরকারের উদ্যোগগুলো নিয়ো আমরা জনগণের সামনে কথা বলি,’ যোগ করেন সরকারের এই সচিব।

প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে উদ্ভাবনী কাজের মধ্যে জেলায় জেলায় এই মেন্টর দিয়ে তদারকির চিন্তা করেছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমি নিজে মাগুরা জেলার মেন্টরের দায়িত্ব পালন করছি। এছাড়াও জনপ্রশাসন সচিব পটুয়াখালী, ডাক ও টেলিযোগোগ সচিব সাতক্ষীরা, পরিকল্পনা কমিশনের একজন সদস্য (সচিব) ভোলা, পরিসংখ্যান সচিবকে নওগাঁয় এবং জেলার মেন্টর হিসাবে নিয়োজিত রয়েছেন।

মান সম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য ছয়জন সচিবসহ কর্মকর্তাদের ৬৪ জেলায় এই মেন্টর নিয়োগ করা হয়েছে বলে জানান প্রাথমিক শিক্ষা সচিব।

তারা বাচ্চাদের রিডিং পড়া, লেখা, বলা ও শোনার দক্ষতা বৃদ্ধি; খেলাদুলাসহ সহশিক্ষা কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধকরণ; শিক্ষকদের লেসন প্ল্যান অনুযায়ী ক্লাস ও বাচ্চাদের স্বাস্থ্যের প্রতি নজর রাখা; ইউনিফরম নিশ্চিত করার পাশাপাশি পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম তদারকি করে থাকেন।

সচিব এবং কর্মকর্তারা নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে এবং সব সময় খোঁজ-খবর নিয়ে সমস্ত কার্যক্রম পরিচালনার ফলে প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নত হচ্ছে বলে দাবি করেন আকরাম-আল-হোসেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৯
এমআইএইচ/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad