ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

শিক্ষা

যে কারণে বশেমুরবিপ্রবি’র ভিসির পদত্যাগ চান শিক্ষার্থীরা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৫৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৯
যে কারণে বশেমুরবিপ্রবি’র ভিসির পদত্যাগ চান শিক্ষার্থীরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। ছবি: বাংলানিউজ

গোপালগঞ্জ: গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের পদত্যাগের স্বপক্ষে ২০টি কারণ উল্লেখ করেছেন শিক্ষার্থীরা। 

এসব কারণের পাশাপাশি আরও কিছু কারণ ব্যাখা করেছেন তারা। অন্যদিকে, সচেতন শিক্ষক সমাজের ব্যানারে ১৬ দফা দাবি করা হয়েছে।

 

১. বাকৃবি-তে জামায়াত বিএনপি’র নেতৃত্বে ছিল, যে কি না বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, এটা কখনোই মেনে নেওয়া যায় না।

২. যৌক্তিক কারণ ছাড়াই অন্যায়ভাবে ছাত্র-ছাত্রীদের বহিষ্কার ও বহিষ্কারের হুমকি। প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীদের বাকস্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া। যার ফলশ্রুতিতে সিএসই বিভাগের অর্ঘ্য বিশ্বাসের (২০১৬-২০১৭ সেশন) আত্মহত্যা। সম্প্রতি নিজের ক্লাস অপরিষ্কার থাকা নিয়ে ফেসবুকে লেখার কারণে ইইই বিভাগের ৫ জনকে বহিষ্কার।

৩. একাধিকবার নারী কেলেঙ্কারিতে যুক্ত ও যৌন হয়রানির অভিযোগ। ভিসি’র বাসভবনে বিউটি পার্লার।

৪. ভর্তি বাণিজ্যের মাধ্যমে অযোগ্য ছাত্রদের ভর্তি এবং নিজের অনুগত পেটোয়া বাহিনী তৈরি করা। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে শিক্ষা ও সাংবাদিক শামস জেবিনের ওপর হামলা।

৫. শিক্ষক ও কর্মকর্তা নিয়োগে দুর্নীতি ও নিয়োগ বাণিজ্য। আক্কাস আলির মত একজন অযোগ্য ব্যক্তিকে সিএসই বিভাগের চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা ও যৌন হয়রানির সুস্পষ্ট অভিযোগ প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও তাকে সমর্থন করা এবং যথাযথ শাস্তির আওতায় না আনা।
৬. ২০১১ প্রতিষ্ঠাকালীন ভর্তি ফি ৩০০০-৪০০০ টাকা যা ২০১৮-১৯ সালে অযৌক্তিকভাবে ১৬০০০-১৮০০০, প্রায় ৫ গুণ বৃদ্ধি করা।

৭. প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণে অনীহা ও বাজেটের সম্পূর্ণ টাকা লোপাট।

৮. ৮ বছরেও শহীদ মিনারের বেহাল দশা (কাঠের)।

৯. প্রতি আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া নিয়ে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি (নাটক)। আর নয় কোনো মিথ্যা প্রতিশ্রুতি, মোস্তাক-মীরজাফরের মত ভিসির অপসারণ চাই।
 
১০. বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস রুম এবং ক্যাম্পাসের পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণে গাফিলতি।

১১. গাছপালা পরিচর্যার নামে ২ কোটি টাকার গোবর বাণিজ্য।

১২. পর্যাপ্ত আবাসন সুবিধা না থাকা সত্ত্বেও মাসিক জনপ্রতি ৩৫০ টাকা আদায় (৪ জনের রুমে উঠানো হচ্ছে ৬-৭ জন)।

১৩. মাসিক ফি ২০০ টাকা করে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে আদায়কৃত ৮ বছরের উন্নয়ন ফি এর টাকা লোপাট।

১৪. প্রস্তাবিত মেইন গেটের টাকা লোপাট।

১৫. অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা। সম্প্রতি আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জিনিয়া (সাংবাদিক) বাজেট সম্পর্কে জানতে চাওয়ায় ও ফেসবুক এ স্ট্যাটাস এর জন্য নিজ কক্ষে অকথ্য ভাষায় গালি দেওয়া ও পরবর্তীতে মিথ্যা অভিযোগে বহিষ্কার।

১৬. ক্লাস রুম সংকট কিন্তু থেমে নেই অতিরিক্ত সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি, প্রতি সেমিস্টারে কম্পিউটার ফি (২৫০) নিলেও বিভাগে পর্যাপ্ত কম্পিউটার সুবিধা না দেওয়া, অতিরিক্ত বাস ভাড়া আদায় ( জন প্রতি ৬০০), লাইব্রেরিতে বইয়ের সংকট, জিমনেসিয়াম নিয়ে দুর্নীতি, কমন রুমের বরাদ্দকৃত টাকা লোপাট।

১৭. ক্যাফেটেরিয়া ও গাড়ির গ্যারেজকে ছাত্রী হোস্টেল বানিয়ে ব্যবসা করা।

১৮. ভিসির নির্দেশে কর্মচারীদের যখন তখন মেয়েদের হলে প্রবেশ ও লকার ভেঙে মেয়েদের ব্যক্তিগত জিনিসে হাত দেওয়া।

১৯. ছাত্র সংসদের নামে টাকা নিয়েও ছাত্র সংসদ নির্বাচন না করা।

২০. অডিটোরিয়াম. টিএসসি, ক্যাফেটেরিয়া না থাকা ও বিশেষায়িত বিভাগের পর্যাপ্ত ল্যাব সুবিধা না থাকা সত্ত্বেও বিভাগের পর বিভাগ খোলা।
 
অন্যদিকে, সচেতন শিক্ষক সমাজের ব্যানারে ১৬ দফা দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ শিক্ষকের স্বাক্ষরিত ওই সব দফায় বলা হয়েছে- উদ্ভূত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাবন্ধব, ন্যায্য ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ এবং শিক্ষক শিক্ষার্থী সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষে সচেতন শিক্ষক সমাজের পক্ষ থেকে ১৬টি দাবি পেশ করা হযেছে।

১. বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের সম্মানিত শিক্ষকগণকে উদ্দেশ্য করে জারি করা সব অন্যায্য কারণ দর্শানো নোটিশ প্রত্যাহার করা।

২. বিগত সময়ে বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যানশিপের ক্ষেত্রে জেষ্ঠ্যতা লঙ্ঘনের ঘটনা দ্রুত সংশোধন করা এবং ভবিষ্যতে এর পুনরাবৃত্তি না করার নিশ্চয়তা দেওয়া।

৩. সব বিভাগেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী প্লানিং কমিটি গঠন নিশ্চিত করা।

৪. বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান প্রমোশন বিধিমালা সংশোধন ও সবার জন্য সমান প্রয়োগ নিশ্চিত করা এবং আপগ্রেডেশনের ক্ষেত্রে শর্ত পূরণের তারিখ থেকেই কার্যকরি করা।

৫. বিশ্ববিদ্যালয়ের সব একাডেমিক, প্রশাসনিক পদ ও আবাসিকতাসহ বৈধ সুযোগ প্রদানের ক্ষেত্রে জেষ্ঠ্যতা লংঘনের ঘটনাগুলো সংশোধন করা এবং ভবিষ্যতে সকল ক্ষেত্রে জেষ্ঠ্যতা অনুযায়ী বন্টন নিশ্চিত করা।

৬. বিভিন্ন দাপ্তরিক সভায়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের সামনে সম্মানিত শিক্ষকগণের বিরুদ্ধে যেকোন অসম্মানজনক বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি না হওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া।

৭. বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগ্য শিক্ষার্থীদের সুযোগ নিশ্চিত করা।

৮. বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্ষেত্রেই বাক-স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।

৯. মেধা যাচাই সাপেক্ষে বিভিন্ন বিভাগের বিদেশি ছাত্র ভর্তি নিশ্চিত করা।

১০. ছাত্র ভর্তির ক্ষেত্রে শতভাগ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।
১১. শিক্ষার্থীদের সব ন্যায্য দাবির সঙ্গে সংহতি জানাই, বিশেষ করে শিক্ষা সংক্রান্ত শিক্ষার্থীদের সব ব্যয় বিদ্যমান বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাপেক্ষে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নিয়ে আসা।

১২. ছাত্রদের বিরুদ্ধে জারি করা সব অন্যায়্য কারণ দর্শানোর নোটিশ ও একাডেমিক শাস্তি প্রত্যাহার করা।

১৩. ভর্তি পরীক্ষার ফর্মের দাম সব বিশ্ববিদ্যালয় সাপেক্ষে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নিয়ে আসা।

১৪. ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশের দিনেই ফলাফলের হার্ডকপি সব ডিন এবং বিভাগীয় প্রধানের বরাবর পাঠানো।

১৫. ভর্তি পরীক্ষার আয়কৃত অর্থসহ সব আয়-ব্যয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।

১৬. বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর সব সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে সাংবাদিক সমিতির একজন সদস্য’র ওপর সংগঠিত ন্যাক্কারজনক হামলার দ্রুত বিচার চাই।  
  
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৯
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।