ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

শিক্ষা

এবার মেডিক্যাল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রেও ভুল!

ইলিয়াস সরকার, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২, ২০১১
এবার মেডিক্যাল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রেও ভুল!

ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গ’ ইউনিটের প্রশ্নপত্রে ভুলের পর এবার মেডিক্যাল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রেও ভুল ধরা পড়েছে।

২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের পরীক্ষায় ১০০টি প্রশ্নের মধ্যে অন্তত ১০টি ভুল রয়েছে বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী।


 
মেডিক্যাল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ভুলের কথা উল্লেখ করে গত ১৬ অক্টোবর হাইকোর্টে এক পরীক্ষার্থীর অভিভাবক রিট করেন। ওই দিন প্রশ্নপত্র আদালতে উপস্থাপন করতে না পারায় ভুলগুলো চিহ্নিত হয়নি। এছাড়া পরীক্ষা শেষে প্রশ্নপত্র রেখে দেওয়ার কারণে অসঙ্গতির সংখ্যা তখন নিশ্চিত করতে পারেনি বলে জানান রিটকারীর আইনজীবী।

রিটের পর এমবিবিএস ও বিডিএসের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ কেন আইন বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

ওই রিটে আদালত দুই সপ্তাহের মধ্যে স্বাস্থ্য সচিব, শিক্ষা সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মেডিক্যাল শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন বিভাগের পরিচালককে রুলের জবাব দিতে বলেন।

এছাড়া মামলার বিবাদীদের একই সময়ের মধ্যে ওই দুই পরীক্ষার বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনের প্রশ্নপত্র ও মূল্যায়ন পদ্ধতি আদালতে দাখিলের নির্দেশ দেন।

রিটকারীর আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ ইউসুফ বৃহস্পতিবার রাতে বাংলানিউজকে বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষ বুধবার প্রশ্নপত্র আমাদের দিয়েছে। যেহেতু আমাদের দিয়েছে, মনে হয় আদালতকেও প্রশ্নপত্র দিয়ে থাকতে পারে। আশা করছি- আগামী সপ্তাহে এ বিষয়ে শুনানি হবে। ’

তিনি বলেন, ‘এ রিট আবেদনের রুল জারি করেছেন বিচারপতি ফরিদ আহাম্মদ ও বিচারপতি শেখ হাসান আরিফের বেঞ্চ। কিন্তু বিষয়টি শুনানির জন্য বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের বেঞ্চ নির্ধারণ করা হয়েছে। ’

ব্যারিস্টার ইউসুফ আরো বলেন, ‘বুধবার প্রশ্নপত্র পাওয়ার পর আমরা ১০টি প্রশ্নে ভুল পেয়েছি। ’

সেগুলো হলো, বাংলা ভার্সনের ৩৪ নম্বর প্রশ্নে জানতে চাওয়া হয়েছে- “...কোনটি সত্য নয়?’’ উত্তর একই থাকলেও ইংরেজি ভার্সনে প্রশ্ন করা হয়, “...কোনটি সত্য?’’(Which of the following will be ture for the above informationin case of concave mirror?)

একই ভাবে বাংলা ভার্সনের ৯৩ নম্বর প্রশ্নে জানতে চাওয়া হয়, “নিম্নের কোনটি দেহের ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা রাখে না?’’ কিন্তু ইংরেজি ভার্সনে জানতে চাওয়া হয়, “... Which one of the followings is releted to maintain the equilibrium of the body?)

এছাড়া ২১, ২৫ ও ৪০ নম্বর প্রশ্নের সবগুলোতে একাধিক সঠিক উত্তর রয়েছে। ২১ নম্বর প্রশ্নের A ও C, ২৫ নম্বরের C ও D এবং ৪০ নম্বরের অ ও উ তে এ ধরণের ভুল রয়েছে।

১৫ নম্বরের বাংলা প্রশ্নে “কোন জাতীয় বস্তু বহুদিন রোদে বা পানিতে থাকলে নষ্ট, ক্ষয় বা বৃদ্ধি হয় না?” অথচ ইংরেজি ভার্সনে “রোদে ও পানিতে ” কথাটি উল্লেখ নেই (What the type of the following object is not destroyed, decayed or increased for long period?)। ফলে ইংরেজি ভার্সনের প্রশ্ন কোন অর্থ বহন করছে না।

বাংলা ভার্সনের ২৪ নম্বর প্রশ্নে আয়নিক ব্যাসার্ধের এককের (nm) উল্লেখ থাকলেও ইংরেজি ভার্সনে এককের (nm) কথা উল্লেখ নেই। ফলে এটিও কোন অর্থ বহন করছে না।

২৮ নং প্রশ্নের C তে বাংলায় বলেছে, “সমাঙ্গবর্গ উদ্ভিদের জীবনচক্রে ভ্রুণ উৎপন্ন হয়”। অথচ ইংরেজি ঈ তে বলা হয়েছে “...........ভ্রুণ উৎপন্ন হয় না”(Thallophytic plants do not produce embryo)।

বাংলা ভার্সনের ৫৪ নম্বর প্রশ্নে বলা হয়, “তরল নাইট্রোজেন নিম্নের কোন তাপমাত্রা সৃষ্টি করতে পারে?’’ কিন্তু ইংরেজি ভার্সনে ‘কোন’ শব্দটি নেই। ইংরেজিতে রয়েছে what is the lowest temperature that can be formed by liquid nitrogen?

ভুলের কারণে উভয় ভার্সনের ৫৮(অ) নম্বর প্রশ্ন ও ইংরেজি ভার্সনের ৮ নম্বর প্রশ্ন কোন অর্থ বহন করে না।

ইংরেজি ভার্সনের ৫৮ নম্বরে প্রশ্ন করা হয়েছে “Which one is the property of diamagnetic substence উত্তরের A তে বলা আছে “Highly attracted weak magnetism.” এটি কোন অর্থ বহন করছে না।  

৮ নম্বর প্রশ্নে বলা হয়েছে-যথাযথ শব্দ দিয়ে শুন্যস্থান পূরণ করতে। আর তা হচ্ছে  “Do not hanger......money” ব্যারিস্টার ইউসুফের দাবি এখানে hanger হবে না। সঠিক কথাটি হবে Hunger বা অন্য কোন শব্দ।

বাংলা ভার্সনের ৭৩ নম্বর প্রশ্নে শ্বাসতন্ত্রের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলেও ইংরেজী ভার্সনে ‘শ্বাসতন্ত্র’ শব্দটি উল্লেখ নেই। ইংরেজি প্রশ্ন হচ্ছে “Which of the following statement is not true? ”

ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ ইউসুফ বলেন, ‘এসব ভুলের কারণে অনেকের ভবিষ্যত তথা জীবন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ’

তিনি মারজুকা আহমেদ জাকিয়া (রোল : ১৩১২৫৩) নামের এক পরীক্ষার্থীর ফলাফল পুনর্মূল্যায়নের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘জাকিয়া মেধাক্রমে ৬৬৯৬ নম্বরে ছিলো। কর্তৃপক্ষ তার ফলাফল পুনর্মূল্যায়নের পর একটি প্রশ্নে তার ১ দশমিক ২৫ নম্বর যোগ করা হয়। ফলে তার মেধাক্রম ১ হাজার ১১০ এগিয়ে আসে।

ব্যারিস্টার ইউসুফ বলেন, ‘এরকম অনেক পরীক্ষার্থী যোগ্য হওয়ার পরও ভর্তি হতে পারছে না। এর মাধ্যমে তাদের সাংবিধানিক (২৭ অনুচ্ছেদ) অধিকার ক্ষুন্ন হচ্ছে। প্রশ্নপত্রের ভুলের জন্য শিক্ষার্থীরা অপূরণীয় ক্ষতির শিকার হয়েছে। ’

পরীক্ষার পর শিক্ষার্থীদের প্রশ্নপত্র নিয়ে আসতে না দেওয়ার কারণে সময়মতো আদালতে প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না বলেও জানান তিনি।

তিনি চলতি বছরের মেডিক্যাল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার ভুল প্রশ্ন ও উত্তরের বিষয়ে বলেন,

‘মাত্র ১ নম্বরের কারণে মেধাক্রমে হাজার সিরিয়ালেরও বেশি ব্যবধান তৈরি করে। তাই প্রশ্নপত্র বা উত্তরপত্র মূল্যায়নে কর্তৃপক্ষ ভুল করলেও মাসুল গুনতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তাদের জীবন। ’
 
উল্লেখ্য, গত ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ও বিডিএস ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
 
বাংলাদেশ সময়: ০১৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১,২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।