ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

শিক্ষা

লেখক-পাঠকে মুখরিত ছিলো মতিহারের সবুজ চত্বর

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০১৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৯
লেখক-পাঠকে মুখরিত ছিলো মতিহারের সবুজ চত্বর পাঠকে মুখরিত ছিলো মতিহারের সবুজ চত্বর। ছবি: বাংলানিউজ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: মঞ্চে আসীন বাংলা কথাসাহিত্যের দুই দিকপাল দেবেশ রায় ও হাসান আজিজুল হক। বাংলা কথাসাহিত্য নিয়ে নিজেদের ভাবনা জানাচ্ছেন, চারদিকে অদ্ভুত নীরবতা। দর্শক সারিতে উপস্থিত কেউ কিঞ্চিৎ নড়চড়ও করছেন না। সবাই মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনছেন। 

এমন অসাধারণ দৃশ্যের অবতারণা হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত সাহিত্য বিষয়ক মেলা ‘চিহ্নমেলা চিরায়ত বাঙলা’য়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাসাহিত্য বিষয়ক ছোটকাগজ ‘চিহ্ন’ চতুর্থবারের মতো দুই দিনব্যাপী এ মেলার আয়োজন করে।

মেলা প্রাঙ্গণে ফুটিয়ে তোলা হয় চিরায়ত বাংলার আবহ। মঙ্গলবার (১২ মার্চ) সন্ধ্যায় সমাপনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শেষ হয় চিহ্নমেলা।

মেলায় দুই বাংলার কবি, সাহিত্যিক, পাঠক, সম্পাদক ও সংস্কৃতিকর্মীর সম্মিলন ঘটে। চিহ্নমেলার এ আয়োজন হয়ে ওঠে দুই বাংলার সাহিত্যিকদের প্রাণোচ্ছ্বল মিলনমেলা। জমকালো আয়োজন আর কবি-সাহিত্যিক-লেখক-পাঠকের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছিলো মতিহারের সবুজ চত্বর।

১১ মার্চ সকালে মেলার উদ্বোধন করেন উপ-মহাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক। প্রথমদিন রবীন্দ্র-তর্পণ, ডিজিটাল বাংলাদেশে বাঙালির সাহিত্য বিষয়ক আলোচনা, ছোট প্রকাশনা: সম্ভাবনা ও সমস্যা, গ্রন্থের পাঠ উন্মোচন, কথাসাহিত্যিক দেবেশ রায়ের একক বক্তৃতা অনুষ্ঠিত হয়। .দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার কবিতাপাঠের মধ্য দিয়ে শুরু হয় শেষ দিনের আয়োজন। সারাদিন ধরে চলে সাহিত্য আড্ডাসহ আলোচনা।

এদিন বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবৃতি সংগঠন ‘স্বনন’ বসন্তের কবিতা পাঠ করে। সন্ধ্যায় আটটি ছোটকাগজ ও এর সম্পাদককে ‘চিহ্ন’ সম্মাননা দেওয়া হয়। মেলায় সৃজনশীল ও মননশীল লেখনীর জন্য লেখক সরকার মাসুদ ও হোসেন উদ্দীন হোসেনকে চিহ্ন পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। সন্ধ্যায় ভারতের গানের দল ‘মন ভাষা’র সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে পর্দা নামে এ মিলনমেলার।

এবারের মেলায় হাসান আজিজুল হক, জুলফিকার মাতিন, মহীবুল আজিজ, আসাদ মান্নান, নাজমুন নেসা পিয়ারি, আবু হাসান শাহরিয়ার ও ভারতের দেবেশ রায়, প্রবাল কুমার বসু, প্রভাত চৌধুরী, বর্ণালি রায়, ইমানুল হকসহ দুই বাংলার প্রায় দুই শতাধিক লেখক, কবি, সাহিত্যিক, সম্পাদকরা অংশ নেন।  

মেলায় বাংলাদেশের ৯৫টি এবং ভারতের ৩০টি বাংলা সাহিত্য বিষয়ক ছোটকাগজের স্টল বসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সাহিত্যপ্রেমীরা ভিড় জমান চিহ্নমেলায়।

মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক দেবেশ রায় বলেন, বাংলা ভাষা আমাদের মাতৃস্তন্যের সঙ্গে, জীবনের প্রথম কান্নার সঙ্গে জড়িত। আমরা গর্বিত বাংলাভাষী। আমরা এক বিজয়ী সৈনিক। বিনয়ের সঙ্গে এই মেলায় এসেছি আপনাদের সবাইকে অভিনন্দন জানাতে। .কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক বলেন, আমাদের আমন্ত্রণে ওপার বাংলাসহ বাংলাদেশের নানা প্রান্ত থেকে সাহিত্যপ্রেমীরা এখানে এসেছেন। চিহ্নমেলার এ আয়োজন যেন হয়ে উঠেছিল সত্যিকারের মিলনমেলা। মেলায় লেখক-সাহিত্যিকদের যে মিলনমেলা হয়েছে তার সকল কিছুর কর্ণধার শহীদ ইকবাল। চিহ্ন পত্রিকা এমন একটা বিশিষ্টতা অর্জন করেছে যাতে মনে হয়—প্রতিনিয়তই বাংলা কবিতা, সাহিত্য, সংস্কৃতিতে নিজে পথ তৈরি করে এগিয়ে যাচ্ছে।

চিহ্নপ্রধান ও মেলার আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. শহীদ ইকবাল বলেন, বাংলা সাহিত্যে সৃজনশীল ও মননশীল লেখক তৈরির উদ্দেশ্য নিয়ে চিহ্নের পথচলা। এ মেলার ফলে দুই বঙ্গের সাহিত্যিকরা একত্রিত হন। এতে তাদের সঙ্গে আমাদের তরুণ লেখকদের সাহিত্য ভাবনার আদান-প্রদান ঘটে।

সোমবার (১১ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ কলাভবনের সামনের প্রাঙ্গণে বেলুন-ফেস্টুন উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন করেন, উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক। উদ্বোধন শেষে এক শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ শেষে মেলা প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়।

২০১১ সাল থেকে প্রতি তিন বছর পর পর চিহ্নমেলার আয়োজন করে আসছে ছোট কাগজ ‘চিহ্ন’। ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে চিহ্ন প্রতিবছর দুটি করে ‘চিহ্ন’ নামে বাংলা সাহিত্য বিষয়ক পত্র প্রকাশ শুরু করে। এতে বিভিন্ন সাহিত্যিক, কবি ও শিক্ষার্থীদের গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, ক্রোড়পত্র ইত্যাদি ছাড়াও বাংলা সাহিত্য বিষয়ে সমকালীন চিন্তা, মনোভাব, ধারণা, সাক্ষাৎকার বিষয়ক বিভিন্ন লেখা প্রকাশ হয়ে থাকে।

এছাড়াও কাগজটির নিয়মিত বিভাগে কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, বিজ্ঞানের সহজপাঠ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্যসহ বিভিন্ন লেখা প্রকামিত হয়। এছাড়াও সপ্তাহের প্রতি রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ কলাভবনের ১৩০ নম্বর কক্ষে সাহিত্য আড্ডার আয়োজন করে ‘চিহ্ন’।

বাংলাদেশ সময়: ০৮১৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০১৯
এমজেএফ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।