ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

শিক্ষা

একই ভবনে দুই বিদ্যালয়ের পাঠদান

এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৯
একই ভবনে দুই বিদ্যালয়ের পাঠদান গাঙ্গিনারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনেই চলছে শাঁখারিপট্টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান। ছবি: অনিক খান

উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গঠনে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই। তবে বাংলাদেশে শিক্ষাখাতে রয়েছে নানাবিধ সমস্যা। বিশেষ করে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষায় বিদ্যমান বাস্তবতায় রয়েছে ব্যাপক সমস্যা, সংকট ও বৈষম্য। 

ময়মনসিংহে প্রাথমিক শিক্ষার হালহকিকত নিয়ে ৫ পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদন লিখেছেন সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান। ছবি তুলেছেন ডিস্ট্রিক্ট ফটো করেসপন্ডেন্ট অনিক খান। আজ পড়ুন ধারাবাহিক প্রতিবেদনের শেষ কিস্তি।

সময়ের সাথে পাল্টে যায় বিদ্যালয়। একই স্থানে একই ভবনে পর্যায়ক্রমে চলে পৃথক দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান।

আশ্চর্য এমন চিত্র শিক্ষার শহর হিসেবে পরিচিত ময়মনসিংহে আরো রয়েছে। যেখানে দুই শিফটে চলে দুটি পৃথক বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম।

প্রায় ৫ বছর আগে ময়মনসিংহের তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন পরিত্যাক্ত ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকেই অন্য বিদ্যালয়ের ভবনে পর্যায়ক্রমে পরিত্যাক্ত ভবনের বিদ্যালয়গুলোর একাডেমিক ও দাপ্তরিক কার্যক্রম শুরু হয়। নিজেদের ভবন না থাকায ঝরেপড়া থেকে শুরু করে এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

ময়মনসিংহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোফাজ্জল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের পথে। অন্যগুলোর দরপত্র আহবান করা হয়েছে। দ্রুতই কাজ শুরু হবে। এখন সাময়িক দুর্ভোগ নিয়েই প্রতিটি বিদ্যালয় সফলতার সাথে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এ সমস্যায় কোনো শিক্ষার্থী ঝরে পড়েনি, ঝরে পড়ার সম্ভাবনাও নেই।

জানা যায়, ২০১৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে শহরের শাঁখারিপট্টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন পরিত্যাক্ত ঘোষণার পর গাঙ্গিনারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস করতে হচ্ছে প্রাক প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের।  

একই সময়ে সদর উপজেলার মালতী প্রভা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন পরিত্যাক্তের পর ২০১৪ সালের মে মাসে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রায় দুই কিলোমিটার দূরের চশমে রহমত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়।  

একই অবস্থা শহরের গোহাইলকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরও। সেখানেও ভবন নির্মাণ কাজ শেষের পথে থাকায় আপাতত ২শ’ গজ দূরেই গোহাইলকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ে পাঠদান চলছে বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের।

সাধারণত সরকারি একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুই শিফটে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত চলে। কিন্তু নিজেদের ভবনে অন্যদের বিকল্প হিসেবে ক্লাস করার সুযোগ দেওয়ায় গাঙ্গিনারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চশমে রহমত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাস সকাল ৭টা থেকে শুরু হয়ে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলছে।  

এ দুই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, এত সকালে ক্লাস করা তাদের জন্য দুরুহ এক ব্যাপার। এই সময়ের মধ্যে আবার কোনো বিরতিও পাওয়া যায় না। এটা তাদের জন্য অত্যন্ত কষ্টের।  

আবার এ দুই বিদ্যালয়ের ক্লাস শেষ হওয়ার পর শাঁখারিপট্টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মালতী প্রভা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাস শুরু হচ্ছে দুপুর ১২টা থেকে। বিরতিহীনভাবে তা চলছে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত।  

সরেজমিনে গাঙ্গিনারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চশমে রহমত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, নিজেদের বিদ্যালয়ের ক্লাস শেষ হওয়ার পর শিক্ষক মিলনায়তনে অবস্থান নিচ্ছেন অন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তারাও নিজেদের মতোই অফিস ভাগাভাগি করছেন।

অন্যত্র এসে ক্লাস করার ফলে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে শাঁখারিপট্টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লিপি মনি কর বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের এখানে শিক্ষার্থী কমেনি। তবে নিজেদের ভবন না থাকায় প্রথম দিকে সমস্যা হলেও এখন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা বাস্তবতার সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিয়েছেন।

আরো দেখা গেলো, পাঠদানের মতোই মাঠ না থাকায় খেলাধুলা ও চিত্তবিনোদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে গাঙ্গিনারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শাঁখারিপট্টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়ের সামনে এক চিলতে জায়গায় এবার বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতাও হয়েছে নামকাওয়াস্তে।

গাঙ্গিনারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে খেলার কোনো জায়গা নেই। ছোট্ট জায়গায় খেলে কোনো আনন্দও নেই।  

২০১৪ সালের শেষের দিকে ভবন না থাকা এসব বিদ্যালয়ের ওপর মাসব্যাপী একটি জরিপ চালায় সুশাসনের জন্য প্রচারাভিযান (সুপ্র)। ওই জরিপে বলা হয়, ভবন না থাকার কারণেই প্রতি বছর এসব বিদ্যালয়ের ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে।  

তবে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার তথ্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে ময়মনসিংহ সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল্লাহেল বাকী বাংলানিউজকে বলেন, ভবনের কারণে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার কোনো সুযোগ নেই। এমনকি ফলাফলের দিক থেকেও এই বিদ্যালয়গুলো ভালো করেছে।

পড়ুন অন্যান্য কিস্তি:
** সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শুধুই গরিবের স্কুল!
** কিন্ডারগার্টেন স্কুলের কাছে মার খাচ্ছে সরকারি প্রাথমিক
** নেই অফিস সহকারী, সব কাজই করেন শিক্ষকরা
** শিক্ষক সংকটে পর্যুদস্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০১৯
এমএএএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।