ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

শিক্ষা

পা দিয়ে লিখেই এসএসসি জয় করতে চায় তামান্না

উত্তম ঘোষ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২, ২০১৯
পা দিয়ে লিখেই এসএসসি জয় করতে চায় তামান্না পরীক্ষাকেন্দ্রে সবার সঙ্গে বসে পরীক্ষা দিচ্ছে তামান্না নূরা

যশোর: দেশব্যাপী একযোগে শুরু হয়েছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। প্রথম দিনের পরীক্ষায় অন্যদের মতো অংশ নিয়েছে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া ইউনিয়নের আলিপুর গ্রামের রওশন আলীর মেয়ে তামান্না নূরা।

তবে সারাদেশের লাখো পরীক্ষার্থীর চেয়ে একেবারেই ব্যতিক্রম তামান্না। জন্মগতভাবে হাত ছাড়া মাত্র একটি পা নিয়েই দুনিয়ার আলো দেখে সে।

তবে ছোট থেকে পড়াশোনার প্রতি অদম্য ইচ্ছাশক্তির কারণে হার মানতে বসেছে সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা। পা-ই এখন তার ‘স্বপ্নপূরণের হাতিয়ার’।

জানা যায়, চলতি এসএসসি পরীক্ষায় ঝিকরগাছার বাঁকড়া জে কে হাই স্কুলের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে তামান্না। স্থানীয় বাকড়া ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসেই পরীক্ষা দিচ্ছে সে। পরিবার, শিক্ষক, সহপাঠীদের ধারণা, প্রাথমিক বৃত্তি ও জেএসসি’র ধারাবাহিকতা রক্ষা করে এসএসসিতেও ভালো ফলাফল করবে তামান্না।

তামান্নার শিক্ষক ও সহপাঠীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে তামান্না কেজি, প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণির প্রতিটি ফলাফলে মেধাতালিকায় প্রথম হয়েছে। পাশাপাশি ‘এডাস বৃত্তি পরীক্ষায়’ প্রতিবছরই বৃত্তি পেয়েছে। এছাড়াও ২০১৩ সালে পিইসি এবং ২০১৬ সালে জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখে তামান্না।

পরীক্ষাকেন্দ্রে সবার সঙ্গে বসে পরীক্ষা দিচ্ছে তামান্না নূরা

তামান্নার বাবা রওশন আলী বাংলানিউজকে বলেন, জন্মের পর থেকে অর্থাভাবের পাশাপাশি সামাজিকভাবে অনেক প্রতিকূলতার মোকাবেলা করতে হয়েছে তার মেয়েকে। তবে কখনো আমরা ভেঙে পড়িনি। সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা করেই তামান্নার মা তাকে একটি পায়ের উপর ভর করে সব ধরনের শিক্ষা দিতে থাকে। তামান্না অক্ষরজ্ঞান তার মায়ের কাছ থেকেই শেখে। সে সময় বাড়ি থেকে দূরের ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি ও নিয়মিত স্কুলে পাঠানো আমাদের পক্ষে সম্ভব ছিলো না। তাই স্থানীয় আজমাইন এডাস স্কুলে তাকে নার্সারিতে ভর্তি করানো হয়। তামান্নার শ্রবণ ও মেধাশক্তি এতো ভালো ছিল যে একবার শুনলে বিষয়টি সে দ্রুত আয়ত্ব করতে পারতো।  

অক্ষর লেখা, পায়ের আঙুলের ফাঁকে চক ধরিয়ে লেখা, তারপর কলম ধরিয়ে লেখা আয়ত্ব করে সে। ধীরে ধীরে বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টানো, পায়ের আঙুলের ফাঁকে চিরুনি, চামচ দিয়ে খাওয়া, চুল আঁচড়ানো সবই সে আয়ত্ব করে ফেলে। তার দক্ষতা সবার নজরে আসে, বলেন তামান্নার বাবা।  

তামান্না নূরা বাংলানিউজকে বলে, ভালো প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছি। সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করে তামান্না বলে, আমার জন্য দোয়া করবেন যেন ভালো ফলাফল করতে পারি। পাশাপাশি সব শিক্ষক, বাবা-মা, সহপাঠী সবার কাছেও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে তামান্না।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০১৯
ইউজি/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।