ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

শিক্ষা

জবির নতুন ক্যাম্পাস: ২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন

জবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১৮
জবির নতুন ক্যাম্পাস: ২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন ২০১৮-১৯ অর্থবছরের নবম অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা

জবি: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) বহুল প্রতীক্ষিত নতুন ক্যাম্পাস স্থাপনের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়নে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে।

মঙ্গলবার (৯ অক্টোবর) ২০১৮-১৯ অর্থবছরের নবম অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়।

এতে জবিকে একটি পরিপূর্ণ ও অত্যাধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রূপান্তরের জন্য নতুন ক্যাম্পাস স্থাপন, ভূমি অধিগ্রহণ এবং ভূমির উন্নয়নের জন্য এক হাজার ৯২১ কোটি ৬৪ লাখ ৫৩ হাজার টাকা ব্যয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পটি অনুমোদন করেন প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন একনেক কমিটি।

এরআগে প্রকল্পটি বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অনুমোদন পেয়েছিল।

এছাড়া গত ৩ অক্টোবর বাংলাদেশ সচিবালয়ের ১১৭তম সভায় ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া ইউনিয়নের পশ্চিমদি মৌজায় প্রায় ২০০ একর ভূমি অধিগ্রহণের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।  

জানা যায়, ২০১৭ সালের ১১ জুলাই একনেক সভায় ২৮৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সাড়ে সাত একর জায়গায় একটি ২০তলা একাডেমিক ভবন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে এক হাজার সিটের আবাসিক ছাত্র হলের জন্য ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন’ শিরোনামের একটি প্রকল্প উপস্থাপন করেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য নজরুল ইসলাম।  কিন্তু প্রকল্পের প্রস্তাবনা দেখার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই ৭ একর, ১০ একর দিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যার সমাধান হবে না। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য খুচরা একটি হল ও একাডেমিক ভবন দিয়ে কাজ হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক মানের করে গড়ে তুলতে হবে। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল, ক্যাম্পাস, একাডেমিক ভবন, লাইব্রেরিসহ সব ধরনের সুযোগ সুবিধা থাকতে হবে। ’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছিলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস এমনভাবে কর যাতে কেউ ঢাকা এলে এই ক্যাম্পাস একবার হলেও ঘুরে যেতে বাধ্য হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যতো জমি লাগবে, যতো টাকা লাগবে, তার জোগান দেওয়া হবে। ’

একটি পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা তৈরি করে তার কাছে উপস্থাপনের নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্দেশের এক বছরের মধ্যে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পাঠিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ২০০ একর জমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়নের এ প্রস্তাবটি মঙ্গলবার একনেক সভায় উপস্থাপন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাদের যে ভূমি সংকট ছিল সেটা সমাধানের যাত্রা শুরু করলাম। ইদানিংকালে বাংলাদেশে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়কে ২০০ একর জমি দেওয়ার নজির নাই। সর্বোচ্চ তিরিশ চল্লিশ একর দেয়। এখন আমরাই সর্বোচ্চ জায়গা এবং প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা পেলাম। এরআগে এতো টাকা কোনো বিশ্ববিদ্যালয়কে দেওয়া হয়নি। আমাদের আশা পূর্ণ হয়েছে। এখন আমাদের এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে হবে। ’

তিনি আরও বলেন, ‘এ প্রকল্পের মধ্যে অত্যাধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারপ্ল্যান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ১ অক্টোবর ২০১৮ থেকে এ প্রকল্পের মেয়াদ শুরু হয়েছে। প্রকল্পটির অধীনে ভূমি অধিগ্রহণ, নিচু জমি ভরাট করা, পুকুর খনন, গাছ লাগানো, কতটা হল, কতটা বিল্ডিং, খেলার মাঠ, টিএসসি ও ডিজাইনের জন্য ৩৫ কোটি টাকার মতো বাজেট। এই প্রজেক্ট আমরা সময়মত সাবমিট করবো। এরপরে এই প্রজেক্টের অধীনে আরেকটা পাঁচ বছর বা তার বেশি মেয়াদি প্রজেক্ট তৈরি করা হবে। সেই প্রজেক্টের মধ্য দিয়ে নতুন ক্যাম্পাসের কাজ সম্পন্ন হবে। ’

জবির প্রকল্প অনুমোদনে ছাত্রসংঠনগুলোর কৃতজ্ঞতা
জবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদীন রাসেল বাংলানিউজকে বলেন, দেশের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রধানমন্ত্রী এতো বিশাল পরিমাণ বরাদ্দ দিয়েছেন। এজন্য আমরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। শিগগির আমরা তাকে ফুল দিয়ে আনুষ্ঠানিক ধন্যবাদ জানাব। একই সঙ্গে আগামী দুই মাসের মধ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু ভাইকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের কেরানীগঞ্জের জমিতে একটি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠান করবো।  

বুধবার (১০ অক্টোবর) ছাত্রলীগের উদ্যোগে একটি আনন্দ মিছিল করা হবে বলেও জানান তিনি।  

ছাত্র ইউনিয়ন জবি শাখার সভাপতি রুহুল আমিন বাংলানিউজকে বলেন, প্রকল্প অনুমোদনে আমরা অত্যন্ত খুশি। আমরা বুধবার আনন্দ মিছিল করবো। পাশাপাশি এই প্রকল্প যেন দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়িত হয়, সেই দাবিও জানাবো।

জবি শাখা ছাত্রফ্রন্টের একাংশের সভাপতি মুজাহিদ অনিক তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘২০১৬ সালের দীর্ঘ ৩৩ দিনের রক্ত ও ঘামের ফসল অবশেষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘরে উঠতে যাচ্ছে। এ বিজয় জবির ২০ হাজার শিক্ষার্থীর। বুধবার সবাইকে আনন্দ মিছিলে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানাই। ’

এছাড়া প্রকল্পটি একনেকে পাস হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জবি উপাচার্য ড. মীজানুর রহমানকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন জবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি একেএম মনিরুজ্জমান, সাধারণ সম্পাদক আবদুল বাকী, জবি প্রেসক্লাবের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান দিপুসহ জবির বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা।

বাংলাদেশ সময়: ২২০১ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৯, ২০১৮
কেডি/জিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।