ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

শিক্ষা

৩১ বছর ছুটি না নিয়ে মন্ত্রীর পুরস্কার পেলেন শিক্ষক

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৮
৩১ বছর ছুটি না নিয়ে মন্ত্রীর পুরস্কার পেলেন শিক্ষক ক্লাসে পাঠদানরত শিক্ষক সত্যজিত বিশ্বাস

যশোর: টানা ৩১ বছরের চাকরিজীবনে এক দিনও ছুটি না নেওয়া ও স্কুলের সব নিয়ম মেনে চলে কর্তব্যপরায়ণতার বিরল নজির স্থাপনকারী সেই শিক্ষক পেলেন মন্ত্রীর পুরস্কার। 

অনন্য এ নজির স্থাপনে পুরস্কার হিসেবে যশোরের অভয়নগর উপজেলার ধোপাদী উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক সত্যজিত বিশ্বাসকে এক লাখ টাকার চেক দিয়েছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান।

সোমবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে অভয়নগরের ধোপাদী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বর্ণাঢ্য এক আয়োজনের মধ্যদিয়ে মন্ত্রীর পক্ষে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এবং জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের মহাপরিচালক স্বপন কুমার রায় এ চেক তুলে দেন।

ধোপাদী মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি তপন কুমার বসুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, সাবেক জাতীয় সংদস্য ও ধোপাদী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের উপদেষ্টা সদস্য এমএম আমিন উদ্দিন, অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এমএম মাহমুদুর রহমান, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কেএম নওশাদ, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার দেবাশীস কুমার বিশ্বাস, ধোপাদী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম প্রমুখ।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানসংবর্ধনা ও চেক বিতরণী অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, শিক্ষক সত্যজিত বিশ্বাস ৩১ বছর চাকরি জীবনে একদিনও ছুটি নেননি, কোনোদিন এক মিনিট দেরি করেও স্কুলে আসেননি। এমনকি বাবার মরদেহ বাড়ি রেখে স্কুলে ক্লাসে এসে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করিয়েছেন। বিয়ের দিনও ক্লাস নিয়েছেন। ছুটি নেননি অসুস্থতার মধ্যেও।

বাড়ি থেকে সাত কিলোমিটার কাঁচা রাস্তায় বর্ষার দিনে হাঁটু কাদা মাড়িয়ে চরম কষ্ট-দুর্ভোগে স্কুলে আসতে হয়েছে তাকে। এখন রাস্তাটি পাকা হওয়ায় বর্ষা মৌসুমেও বাইসাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসতে পেরে খুবই আনন্দিত তিনি।

ধোপাদী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষক সত্যজিত বিশ্বাস স্কুলে কোনোদিন দেরি করে আসেননি। কর্মরত জীবনে কোনো দিন ছুটিও নেননি। তবে কয়েকবছর আগে একদিন স্কুলে এসে দেখলাম, শিক্ষার্থীরা সত্যজিত স্যারকে নিয়ে হৈ চৈ করছে। শিক্ষকের মাথায় পানি দিচ্ছে। এগিয়ে গিয়ে দেখি জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। আমি তাকে ছুটি নিতে অনুরোধ করেছিলাম। তিনি ছুটি নেননি।

এছাড়াও সত্যজিত বিশ্বাসের বাবা মাধব চন্দ্রের মৃত্যুর দিনও স্কুল থেকে ছুটি নেননি। উপস্থিত অতিথিরা এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাবা সকাল সাড়ে ৭টার দিকে আমার (সত্যজিত) হাতের উপরই মারা গিয়েছিলেন। সকাল ৮টা পর্যন্ত বাবার মরদেহের পাশে ছিলাম। অন্যদের সৎকারের আয়োজন করতে বলে স্কুলে গিয়েছিলাম। স্কুলে ১২টা পর্যন্ত ক্লাস নিয়ে এসে সৎকারের শেষ অংশে অংশ নিয়েছিলাম।

শিক্ষক সত্যজিৎ বিশ্বাস বলেন, বিয়ের দিনও আমি ছুটি নেইনি। হিন্দু ঐতিহ্য অনুযায়ী আমাদের বিয়ে হয় সন্ধ্যায়। ক্লাস নিয়েই সেদিন বিয়ে করতে গিয়েছিলাম। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সেরে পর দিনই স্কুলে যাই। ক্লাস শেষ করে শ্বশুর বাড়ি থেকে নববধূকে নিয়ে বরযাত্রীদের সঙ্গে বাড়ি ফিরেছিলাম।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব স্বপন রায় বলেন, শিক্ষক সত্যজিত বিশ্বাসের কর্মজীবনে কোনোদিন ছুটি না নেওয়া এবং কর্তব্যপরায়ণের বিষয়ের সংবাদ কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ইফায়েস ওসমান মহোদয়ের নজরে আসে। পরে তার নির্দেশনা মোতাবেক এ ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিয়ে সত্যতা জানতে পেরে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিদ্যালয়ের উন্নয়নে এক লাখ টাকার চেক স্কুল পরিচালনা কমিটির হাতে ও এক লাখ টাকার চেক শিক্ষক সত্যজিত বিশ্বাসের হাতে তুলে দেওয়া হয়।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৩, ২০১৮
ইউজি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।