ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

শিক্ষা

রাতের আধারে কলেজ হাওয়া, শিক্ষার্থীরা বিপাকে

নুরুল আমিন,স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ৪, ২০১৪
রাতের আধারে কলেজ হাওয়া, শিক্ষার্থীরা বিপাকে

ঢাকা: কলেজ প্রতিষ্ঠার ১০ বছরে ৫ বার ক্যাম্পাস পরিবর্তন করেছে ঢাকা পাবলিক কলেজ। সর্বশেষ শনিবার দিবাগত রাতে ‘বিনা নোটিশে’ ঢাকা পাবলিক কলেজের অধ্যক্ষ মোস্তফা কামাল ক্যাম্পাসটির আসবাবপত্র নিয়ে ভবন ছেড়ে চলে গেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এতে শিক্ষা জীবন নিয়ে বিপাকে পড়েছে কলেজের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

রাতের আধারে ক্যাম্পাস থেকে মালামাল ছড়িয়ে ফেলার খবর শুনে গত ২দিন ধরে  কলেজটির কলাবাগান ক্যাম্পাস ভিড় জমাচ্ছেন এখানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা।

সোমবার সকালে ক্যাম্পাসের সামনে বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থী ও অভিভাবক ও স্থানীয়দের উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা নিয়ে তালা ঝুলানো ভবনের সামনে বসে থাকতে দেখা গেছে।

এভাবে কাউকে না জানিয়ে ক্যাম্পাসে তালা ঝুঁলিয়ে চলে যাওয়া কোনভাবেই মেনে নিতে পারছে না শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

এই ঘটনায় কলেজটির গভর্নিং বডির ২ সদস্য কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কলাবাগান থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।

এ বিষয়ে কলাবাগান থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মো. ইকবাল বাংলানিউজকে জানান, ঢাকা পাবলিক কলেজের গভর্নিং বডির ২ সদস্য থানায় একটি লিখিত অভিযোগ নিয়েছে। কলেজের গর্ভনিং বডির মোট ৯ জন সদস্য আছে। অন্যাদের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে থানায় এক শিক্ষিকা নির্যাতনের একটি মামলাও রয়েছে। এর আগেও কলেজের বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত জটিলতা তৈরি করে ঢাকা পাবলিক কলেজের অধ্যক্ষ মোস্তফা কামাল কলেজটির ভবন গত কয়েক বছরে ফার্মগেট, তালতলা, পান্থপথ, শেওড়াপাড়া, গ্রীনরোড, মহাখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় স্থানান্তর করেছেন বলে জানান কলেজটির যুক্তিবিদ্যার শিক্ষিকা নুরুন নাহার পারভীন।

কলেজটিতে চলতি সেশনে বাণিজ্য বিভাগে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থী সজিব বাংলানিউজকে জানান, কলেজে ভর্তি হয়েছি মাত্র কয়েক দিন হলো। খবর পেলাম
অধ্যক্ষ স্যারসহ কয়েক শিক্ষক কলাবাগানের কলেজ ক্যাম্পাস ছেড়ে সব মালপত্র নিয়ে চলে গেছেন। তাই বিষয়টি জানার জন্য এখানে ছুটে এসেছি। এসে দেখি কলেজে তালা ঝুলছে।

কলেজের ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য মো. আজহার মোল্লা বাংলানিউজকে বলেন, অভিভাবকদের প্রতিনিধি হিসেবে ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যাওয়ার বিষয়টি আমাকে জানানো হয়নি। সকালে গভর্নিং বডির পক্ষ থেকে কলাবাগান থানা এবং স্থানীয় সাংসদ ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নুর তাপসের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি। বিষয়টি সম্পর্কে জানার জন্য কলেজের প্রিন্সিপালকে ফোন দিলে তিনি আমার ফোন ধরেননি।

কলাবাগান এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার আপন ছোট ভাই সজিব ও দুই চাচাত ভাই রাসেল ও রাজিবকে দুই সপ্তাহ আগে ১৫ হাজার টাকা খরচ করে কলেজটিতে ভর্তি করেছিলাম। এখন দেখি প্রিন্সিপাল কলেজের মালপত্র নিয়ে চলে গেছে। এখন শুনি ছাত্র ছাত্রী শিক্ষক, অভিভাবকদের কাউকে না জানিয়েই কলেজটির ভবন মহাখালীতে নেয়া পরিকল্পনা হয়েছে।

কলেজটির ভবনের তালা ঝুলছে এমন খবর পেয়ে ছুটে এসেছেন কলেজের অর্থনীতি বিষয়ের শিক্ষক সালমা খাতুন।

তিনি বলেন, একটা কলেজের শিক্ষক হয়েও আমরা জানতে পারবো না কলেজটির ক্যাম্পাস কোথায় নেয়া হচ্ছে, তার মালপত্র কিভাবে কোথায় যাচ্ছে। এটা অধ্যক্ষের কেমন স্বেচ্ছাচারিতা?

তিনি বলেন, ২০০৫ সালে প্রথম বিনা বেতনে এ কলেজে শিক্ষকতা শুরু করেছিলাম। এরপর ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা বাড়ে। কলেজটি এমপিওভুক্ত হয়। পাশাপাশি কলেজটির অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দূর্নীতির অভিযোগও উঠতে থাকে। বারবার ব্যবস্থাপনা কমিটির তদন্তে তার প্রমাণও পাওয়া গেছে।

যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে একই কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মমিনুল হক স্যারের স্ত্রী ও একই কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক শিরীন আক্তারকে অধ্যক্ষ স্যারের পক্ষের কয়েক শিক্ষক ব্যাপক মারধরও করেছিল।

এর আগে ২৭ মে অধ্যক্ষের আর্থিক দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় ঢাকা পাবলিক কলেজের অধ্যক্ষের অনুগত কয়েকজন শিক্ষক তাদেরই সহকর্মী এক শিক্ষিকাকে
পিটিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

হামলার শিকার শিরীন আক্তার কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক। তিনি আহত হয়ে রাজধানীর শমরিতা হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।

শিরিন আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, ইংরেজি শিক্ষক প্রভাষক এম কে হানিফ,হিসাব বিজ্ঞানের শিক্ষক রবিউল আলম ও গণিতের  প্রভাষক মো. শাহজাহান আমার উপর হামলা করেছে। তারা আমার স্বামীকেও মারধর করেছে। তারা অধ্যক্ষের মদদে আমাদের উপর হামলা করেছেন এসব শিক্ষকরা।

কলেজটির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ইফতেখারুল আলম জানান, কলেজটির ভবন স্থানান্তর করার বিষয়ে আমাকে কিছু জানানো হয়নি। কেন, কার নির্দেশে এমনটি করা হলো তা খুঁজে বের করা হবে জানান তিনি।

ভবনটির মালিক রাহেলা পারভীন সাংবাদিকদের জানান, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকায় আমার বাসার চারটি তলা ভাড়া নিয়েছিল। পাঁচমাস ধরে তারা ভাড়া পরিশোধ করতে পারছিলামনা। তাই ২ মাসের মধ্যে  অধ্যক্ষকে আমি বাসা ছাড়ার নোটিশ দিয়েছিলাম। ’

ঈদের আগে রাতে তিনি আমাকে জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে শেখ রেহানার স্বামী তাকে কলেজ ভবনটি ছেড়ে মহাখালীর একটি বাসা ভাড়া নিতে বলেছেন। এজন্য রাতেই তাকে বাসা ছাড়তে হবে বলে জানান তিনি।

রোববার সকালে শুনি তিনি কলেজের কাউকে না জানিয়ে বিনা নোটিশেই কলেজটির ভবনে তালা ঝুলিয়ে কলেজের সব মালপত্র নিয়ে শনিবার গভীর রাতে বাসাটি ছেড়ে গেছেন।

ঢাকা পাবলিক কলেজের অধ্যক্ষ মোস্তফা কামাল বাংলানিউজকে জানান, কলেজ ৭ তারিখ পর্যন্ত বন্ধ। খোলার পর ক্যাম্পাস স্থানান্তরের কথা সবাইকে জানাতাম। তাছাড়া বাসার ভাড়া পরিশোধ না করতে পারায় মালিক বাসা ছাড়তে নোটিশ দিয়েছিল।

তিনি জানান,  একজন বাজে শিক্ষক আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। আমি কলেজ স্থানান্তরের নোটিশ সবাইকে জানিয়েছিলাম। ষড়যন্ত্রকারীরা নোটিশ ছিড়ে ফেলেছে।

তবে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মমিনুল হক বলেন, বাসার ভাড়া বাবদ ১৫ লাখ টাকা অগ্রিম দেয়া ছিল। কেবল ভাড়ার কারণে বাসা ছাড়তে হয়েছে তা সত্য না। এলাকার সবাই অধ্যক্ষের দুর্নীতির বিষয়ে জেনে ফেলেছিল। তিনি বুঝতে পারছিলেন এ কলেজে তার টিকে থাকা সম্ভব না। তাই বাধ্য হয়ে কলেজটি ধ্বংস করে দিতে তিনি কাউতে কিছু না জানিয়ে রাতের অন্ধকারে কলেজের মালামাল নিয়ে বাসা ছেড়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ০৪, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।