ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

শিক্ষা

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি: প্রশ্ন ফাঁসে ‘ফেঁসে’ যাবে মেধাবীরা!

ইসমাইল হোসেন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০১৪
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি: প্রশ্ন ফাঁসে ‘ফেঁসে’ যাবে মেধাবীরা! ছবি : ফাইল ফটো

ঢাকা: প্রশ্ন ফাঁসে ভালো ফল উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে মেধা তালিকা তৈরিতে প্রভাব ফেলবে আশঙ্কায় ভর্তি পরীক্ষার নম্বরে এইচএসসির ফল যোগ করার প্রক্রিয়ায় প্রশ্ন উঠবে বলে মনে করছেন শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষাবিদরা।
 
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিযুদ্ধে শুধু ভর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত ফলকেই প্রাধান্য দেওয়ার পক্ষে মত দিয়ে এখনই এ বিষয়ে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তারা।


 
শিক্ষার্থীদের এ দাবির সঙ্গে একমত বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এবং বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদও।

তারা বলছে, এ বিষয়ে ভেবে পদক্ষেপের অবকাশ রয়েছে।
 
ঈদের পর আগামী মাসে এইচএসসির ফল প্রকাশিত হতে যাচ্ছে। এর পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল-ডেন্টালে ভর্তিযুদ্ধ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে ২০১৪-২০১৫ শিক্ষাবর্ষে সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষার তারিখও ঘোষণা করেছে।
 
চারটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এসএসসি-এইচএসসির নম্বর দিয়ে মেধা স্কোর তৈরি করা হয়।
 
আগামী ১২ সেপ্টেম্বর ‘ক’ ইউনিটের মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা শুরু হবে। বিগত শিক্ষাবর্ষে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে এসএসসি ও এইচএসসি থেকে ৮০ এবং ভর্তি পরীক্ষা ১২০ নম্বরের নিয়ে মেধাতালিকা তৈরি করা হয়।
 
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা আগামী ১৩-২৫ সেপ্টেম্বর। সর্বশেষ, পরীক্ষায় এইচএসসিতে ৬০ নম্বরসহ ১০০ নম্বরের স্কোর দিয়ে মেধা তালিকা তৈরি করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার দিনগুলোতে বিকেলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েও ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ৭২ নম্বরের পরীক্ষার নম্বরের সঙ্গে এইচএসসির ১৮ এবং এসএসসির ১০ নম্বর দিয়ে তৈরি হয় মেধাতালিকা।
 
এছাড়াও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা আগামী ২৮-১ নভেম্বর, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪ নভেম্বর, কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা ২৩-২৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ও ভর্তি পরীক্ষার সূচি ঘোষণা করছে।
 
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গত বছর ১০০ নম্বরের পরীক্ষা এবং এসএসসি-এইচএসসি থেকে ২৫ নম্বর নিয়ে মেধাতালিকা তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে এইচএসসিতেই ১৫ নম্বর।
 
মেডিকেল বর্তি পরীক্ষায় ১০০ নম্বরের পরীক্ষার সঙ্গে এসএসসির ৪০ ও এইচএসসির ৬০ নম্বর দিয়ে মেধা তালিকা তৈরি করা হয়েছে গত শিক্ষাবর্ষে।
 
তবে এর বাইরে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) নম্বর যোগ হয় না এসএসসি-এইচএসসির।
 
আটটি অনুষদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা ১৯-২৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে, তবে ৪০ নম্বর স্কোর থাকলেও গত বছর থেকে স্কোরিং তুলে দেওয়া হয়েছে।
 
বিগত এপ্রিল-মে মাসে অনুষ্ঠিত এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ১০ বোর্ডের অধীনে ১১ লাখ ৪১ হাজার ৩৭৪ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। তারাই অবতীর্ণ হবে ভর্তিযুদ্ধে।
 
কিন্তু এবার এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ফলে যারা প্রশ্ন পেয়ে ভালো ফল করবে, তারা ভর্তি পরীক্ষাতেও এগিয়ে থাকবে বলে আশঙ্কা শিক্ষার্থীদের।

ঢাকা বোর্ডের ইংরেজি দ্বিতীয়পত্রে প্রশ্ন ফাঁসের প্রমাণ মেলায় তা স্থগিত রাখা হয়েছে। এছাড়াও রসায়ন, পদার্থসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ের প্রশ্ন ফাঁসের প্রমাণ পাওয়া গেলেও বাতিল হয়নি।
 
একাধিক বিষয়ের প্রশ্ন ফাঁসের প্রমাণ নিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মানববন্ধন করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল।
 
যারা প্রশ্ন পেয়ে ভালো ফল করবে, তাদের তুলনায় আমরা পিছিয়ে পড়বো আশঙ্কার কথা জানিয়ে রংপুর পুলিশ লাইন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী শাকিল আহমেদ বলেন, এইচএসসির নম্বর যোগ করে ভর্তি পরীক্ষার মেধাতালিকা তৈরি হলে আমরা যদি চান্স না পাই, তার দায় কে নেবে!
 
ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকা তৈরিতে এসএসসি-এইচএসসির নম্বর বাদ দেওয়ার পক্ষে জোরালো মত দেন শাকিল।
 
ড. জাফর ইকবালও শিক্ষার্থীদের এ আশঙ্কার সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন।
 
প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে সাম্প্রতিক এক কলামে তিনি লিখেছেন, ‘যারা এবারে এইচএসসি দিয়েছে, তাদের আশ্বস্ত করতে হবে যে, ভর্তি পরীক্ষায় এইচএসসির ফলাফল যেন কোনো বড় ভূমিকা রাখতে না পারে, সেটি নিশ্চিত করা হবে। সব বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে সম্মিলিতভাবে এ কাজটি করতে হবে। ’
 
বিষয়টিকে গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করেন বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভাপতি এবং হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. রুহুল আমীন।
 
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ঈদের পর নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কমিটির মিটিংয়ে বিষয়টি উপস্থাপন করে লিখিত পরীক্ষায় নম্বর বাড়িয়ে দেওয়ার প্রস্তাব করবো।
 
অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেও এ ব্যাপারে অনুরোধ করবো, বলেন বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভাপতি।
 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বাংলানিউজকে বলেন, ভালো ফল হচ্ছে কিনা- এইচএসসির ফলের পরই বলা যাবে। তবে আমাদের স্কোর আগের মতোই থাকছে।

শিক্ষার্থীরা যাতে আগেই মানসিক প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারে, সেজন্য এইচএসসির ফলের অনেক আগেই ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করতে চাই- সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেছিলেন ঢাবি উপাচার্য।

ভর্তি পরীক্ষায় মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রভাব ফেলবে কিনা- প্রশ্নে ইউজিসি চেয়ারম্যান এ কে আজাদ বলেন, এবার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।
 
মেধা তালিকা তৈরির সময় স্কোর কমিয়ে দেওয়ার পক্ষেও মত দিলেও যে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার নম্বর বেশি, সেখানে খুব একটা প্রভাব পড়বে না বলে মত তার।
 
সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নিতে চাইলেও কিছু বিশ্ববিদ্যালয় রাজি হয়নি জানিয়ে এ কে আজাদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বায়ত্তশাসিত, তাই মেধাতালিকা তৈরির সিদ্ধান্ত নিজস্ব একাডেমিক কাউন্সিল ঠিক করবে।
 
বাংলাদেশ সময়:  ০৬৩৬ ঘণ্টা,  জুলাই ২৫, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।