ঢাকা, বুধবার, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ মে ২০২৪, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫

শিক্ষা

দারিদ্র্য দমিয়ে রাখতে পারেনি রুমিকে

রেজাউল করিম বিপুল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৪৮ ঘণ্টা, মে ২০, ২০১৪
দারিদ্র্য দমিয়ে রাখতে পারেনি রুমিকে ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ফরিদপুর: মা সালেহা বেগম মানুষের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করেন। বাবা শেখ রুনু শারীরিক অসুস্থতার কারণে বেকারিতে কাজ করে অনিয়মিত।

সালেহা-রুনু দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে বড় রুমি।

ফরিদপুর শহরের উত্তর আলীপুর গ্রামে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমিতে অবৈধ বসবাস। মাথা গোঁজার ঠাঁই না থাকায় ওই গ্রামের কুমার নদের পাড়ে সরকারি জমিতে একটি জীর্ণ কুঠিরে অনাহারে-অর্ধহারে দিনকাটে রুমি ও তার পরিবারের।

২০১৪ সালে ফরিদপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ-প্লাস পেয়েছে রুমি।

জানা যায়, অভাব অনটনের কারণে এসএসসি পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় অধিকাংশ দিন না খেয়েই পরীক্ষা দিতে গেছে রুমি। অর্থ সংকটে প্রাইভেট পড়তে পারেনি সে। পলি নামে প্রতিবেশি এক কলেজশিক্ষার্থীর কোনোরকম সহ‍ায়তায় লেখাপড়া চালিয়ে গেছে রুমি।
 
সরেজমিনে আলীপুরে রুমির বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, সোমবার সকালে বাড়িতে খাবার নেই। তার উপর কয়েকজন মিডিয়াকর্মী বাড়িতে উপস্থিত রুমির খবর সংগ্রহের জন্য।

এসময় কথা হয় রুমির সঙ্গে। রুমি বাংলানিউজের প্রতিবেদকের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার আগেই মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে। রুমির কান্নায় প্রতিবেশিরাও ভিড় করে রুমির বাড়িতে। রুমির ঈর্ষণীয় ফলাফলে তারাও খুশি।

রুমি বাংলানিউজকে বলে তার সাফল্যের কথা।

সে বলে, আমি আমার কষ্টের কথা বলতে পারছি না। আমি কোন কষ্টের কথা বলবো। অভাবের কারণে আমার প্রতিটি দিনই এত কষ্টে গেছে যে, আমি কোন দিনের কথা বলবো তা বুঝতে পারছি না। তবে, কষ্ট যাই হোক বাবা-মার দুঃখ ঘুচাবো সেই প্রতিজ্ঞা নিয়ে লেখাপড়া করছি, করবো।

রুমি বলে, বাবা-মার আদর্শ সন্তান হয়ে জীবনে মানুষের মত মানুষ হতে চাই। এতসব কথার মধ্যেও দু’চোখ দিয়ে অঝোরে ঝরছিল তার চোখের লোনাজল। বার বার বুঝিয়েও তার কান্না থামানো যাচ্ছিল না।
 
রুমির কান্না দেখে পাশ থেকে কাঁদতে থাকেন খালা নাসিমা। কাঁদতে কাঁদতেই তিনি বলেন, কতদিন আমার রুমি একুট মাছ খায় না তা মনেও নেই। মাঝে মধ্যে মাছ খেতে চায়, আমার সব কিছু বুঝে চুপ করে যায়। এত কষ্টের পরও ও যে লেখাপড়া করছে তা বলে বুঝানো যাবে না।

রুমি ও তার খালা যখন এসব কথা বলছিলেন তখন রুমির বাবা, মা, ছোই ভাই-বোনও কাদঁছিল আবেগে-খুশিতে।

রুমির মা সালেহা বেগম বলেন, মানুষের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে মেয়েকে লেখাপড়া করাচ্ছি। অনেক অভাব-অনটন কষ্টের মধ্যেও আজ আমার সুখের সীমা নেই। রুমিকে কোনো দিন ভাল জামা কাপড়, ভাল একটু খাবার দিতে পারি নাই। তারপরও রুমির ভাল ফলাফল আমার কষ্ট ভুলিয়ে দিয়েছে।

রুমির মা বলেন, কয়েকদিন শরীর খারাপ, তাই এখন কাজে যেতে পারছি না। খেয়ে না খেয়েই দিন যাচ্ছে। তিন সন্তানের লেখাপড়া একসঙ্গে চালাতে পারি না। এরই মধ্যে একমাত্র ছেলে আকাশকে (১৩) শহরের একটি টিভি-ফ্রিজের দোকানে কাজে দিয়েছি। ছোট মেয়ে সুমি আলীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীতে লেখাপড়া করে। কতদিন এভাবে চলবে তা জানি না।

পারিবারিক সূত্র জানায়, অর্থাভাবে রুমির মা দীর্ঘদিন অসুস্থ থেকেও চিকিৎসা নিতে পারছেন না। চিকিৎসার অভাবে দাত ও মুখের ব্যথা নিয়েই দিনাতিপাত করছেন তিনি।

বাবা রুনু বলেন, শরীরের কারণে বেকারিতে নিয়মিত কাজ করতে পারি না। বাকি যে ক’দিন কাজ করতে পারি তাতে তিন চার হাজার টাকা পাই। এতে তো খাওয়া খরচ চলে না। ছেলে মেয়েদের পড়াবো কী করে?
 
রুমির বিষয়ে সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা পঞ্চাননী সাহা বাংলানিউজকে বলেন, সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত হবেই। কোনো বাধাই এই প্রতিভা দমিয়ে রাখতে পারবে না। তার প্রমাণ দিয়েছে রুমি। আমাদের বিদ্যালয়ের বাণিজ্য শাখার শিক্ষার্থী রুমি প্রমাণ করেছে দারিদ্র্য শিক্ষার বাধা হতে পারে না।

তিনি বলেন, রুমি তার নিজের চেষ্টায় অনেক দূর এগিয়ে গেছে। সামনে আরও কঠিন পথ ওর। আগামী দিনে একটি সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে সমাজের সামর্থবানরা এগিয়ে আসবে, দাঁড়াবে রুমির পরিবারের পাশে-এটাই প্রত্যাশা।

বাংলাদেশ: ০৬৩৩ ঘণ্টা, মে ২০, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।