ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

শিক্ষা

পরিত্যক্ত ভবনে শিশুদের ক্লাস

টিটু দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৫ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০১৪
পরিত্যক্ত ভবনে শিশুদের ক্লাস ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কিশোরগঞ্জ: ঝড়-বৃষ্টি এলে আমরা বাড়ি চলে যাই, কখন যে স্কুল ভেঙ্গে মাথায় পড়ে এই ভয়ে থাকি সব সময়। এ ভয়ে মা আমাকে স্কুলে পাঠাতে চায় না।

আমিও স্কুলে মন দিয়ে ক্লাস করতে পারি না।

স্কুলের দুর্দশার কথা এভাবেই বলেছে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার চরকামালিয়া নামাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী মারুফা আক্তার।

শুধু মারুফা আক্তার নয় ওই স্কুলের অনেক ছাত্র-ছাত্রী পরিত্যক্ত ঘোষিত ভবনের কক্ষে ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করতে বাধ্য হয়। সেই সঙ্গে ঝুঁকি নিয়ে অফিস কক্ষে থাকেন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ১৯৯৩-১৯৯৪ অর্থ বছরে পিডিপি-১ এর আওতায় চার লাখ ২০ হাজার টাকার অর্থ বরাদ্দে স্কুলের ভবনটি নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের ছয় মাসের মধ্যেই এর ছাদের প্লাস্টার ধ্বসে পড়ে। এতে বৃষ্টি হলেই শেণিক্ক্ষ পানিতে ভরে যেত।

ভবন নির্মাণের ১৪ বছরের মাথায় ভবনটি পাঠদানে অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। যেকোন মুহূর্তে ধ্বসে পড়ে প্রাণহানির আশংকায় ২০০৮ সালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূরে আলম সিদ্দিকী ভবনটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন।

পরে পার্শ্ববর্তী ফোরকানিয়া নূরানী মাদ্রাসায় অস্থায়ীভাবে এক বছর পাঠদান কার্যক্রম চলে। এরপর স্কুল ক্যাম্পাসে পাঠদান চালু রাখার জন্য দুই চালা টিনের ঘর তৈরি করে পাঠদান অব্যাহত রাখা হয়। দুই চালা টিনের ঘর তৈরি করতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর কোটায় ত্রিশ হাজার টাকা, উপজেলা তহবিল থেকে চল্লিশ হাজার টাকা ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তিন বান্ডেল টিন বরাদ্দ দেওয়া হয়।

বর্তমানে স্কুলের ২১৫ জন শিক্ষার্থীর স্থান সংকুলান না হওয়ায় পরিত্যক্ত ভবনের একটি কক্ষে গাদাগাদি করে ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা। আর এতে জীবনের ঝুঁকি থাকা স্বত্ত্বেও ওই কক্ষে পাঠদানে বাধ্য হচ্ছেন শিক্ষকরা।

সম্প্রতি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের একটি কক্ষে প্লাস্টার ধ্বসে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আহত হন। এছাড়া, অফিস কক্ষের প্লাস্টার ধ্বসে সহকারী শিক্ষক শহীদুল্লা গুরুত্বর আহত হন।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক মুজিবুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, পরিত্যক্ত ভবনের একটি কক্ষে আসবাবপত্র ও স্কুলের কাগজপত্র রয়েছে। ঝুঁকি নিয়ে স্কুলের অফিস কক্ষ ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছি।

স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মাহবুবুর রহমান মুছা জানান, বর্তমান অবস্থায় পাঠদান খুবই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। অনেক অভিভাবকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীদের স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন। স্কুলের নতুন ভবন নির্মাণের জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসসহ জেলা শিক্ষা অফিসে বারবার যোগাযোগ করেও ভবন নির্মাণের কোন ফায়সালা পাচ্ছি না।

স্কুলের ২য় শ্রেণির ছাত্রী মাধবীর মা মরিয়ম বেগম জানান, ভাঙ্গা স্কুলে আমার মেয়েকে পাঠাতে ভয় পাই, ঝড় বৃষ্টি হলে স্কুল থেকে মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে আসি।
 
স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল গণি জানান, ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করায় শিক্ষার্থীরা দুর্ভোগে রয়েছে, এলাকার লোকজন বিভিন্ন সময়ে প্রশাসনকে জানিয়েও কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি।
 
এ ব্যাপারে সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সিদ্দিকুর রহমান জানান, স্কুলটির ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণার পর পাশের একটি দুচালা টিনের ঘরে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করছে। চলতি অর্থ বছরের বরাদ্দের তালিকায় অগ্রাধিকার রাখা হয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. গোলাম মওলা বাংলানিউজকে জানান, স্কুলের বিষয়ে বিস্তারিত জেনে আপনাকে পরে জানাব। এ বিষয়ে সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ভাল বলতে পারবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৩ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।