ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

শিক্ষা

ইবিকে সেশনজটমুক্ত মডেল বিশ্ববিদ্যালয় করা হবে

শরিফুল ইসলাম জুয়েল, ইবি কসেপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৪৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৪
ইবিকে সেশনজটমুক্ত মডেল বিশ্ববিদ্যালয় করা হবে

ইবি: চলতি বছরের ১ জানুয়ারি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল হাকিম সরকারের দায়িত্বের এক বছর পূর্ণ হয়েছে।

তার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই নানা ঘটনায় ইবি প্রায় সবসময়ই আলোচনার শীর্ষে থেকেছে।

ছাত্র সংগঠনগুলোর হানাহানি, প্রশাসনের দুর্নীতি, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনসহ বছরব্যাপী অন্যান্য উপাচার্যের চেয়ে ব্যস্ত সময় পার করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম ইনস্টিটিউট থেকে আসা এ শিক্ষক।

দায়িত্বের এক বছর শেষে সাফল্য-ব্যর্থতাসহ নানা বিষয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা হয় ইবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল হাকিম সরকারের।

আলাপকালে তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের শুরুতেই সেশনজটমুক্ত ক্যাম্পাস গড়ার উদ্দেশ্য থাকলেও গত এক বছরে তা পুরোটা সম্ভব হয়নি। এ ক্যাম্পাসে নতুন হওয়ায় বছর গেছে এখানকার পরিবেশ বুঝতেই।

এই বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষা, গবেষণা ও অন্যান্য দিক থেকে একটি আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করার স্বপ্ন দেখেন তিনি। এখানে পর্যাপ্ত আবাসিক সুবিধা বাড়াতেও তিনি বদ্ধপরিকর।

শুক্রবার রাতে ক্যাম্পাসে উপাচার্যের বাসভবনে বাংলানিউজকে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি।

নিচে তার সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো-

বাংলানিউজ: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে এক বছরে আপনার সফলতা কতটুকু বলে মনে করেন?

উপাচার্য: মূলত সফলতা তো কোনো ব্যক্তি বিশেষ হয় না এটা একটি গ্রুপ থেকে। এখানে প্রশাসনের সবার সহযোগিতায় যতটুকু পেরেছি আমি করার চেষ্টা করেছি। এক্ষেত্রে সব মতাদর্শের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী এমনকি ছাত্রনেতারাও আমাকে সহযোগিতা করছে।

উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে নতুন প্রশাসন ভবনে ৪৫০ সিটের একটি একাডেমিক কাউন্সিলরদের কনফারেন্স রুম, উপাচার্যের দপ্তর, উপ-উপাচার্যের দপ্তরসহ কয়েকটি দপ্তর নির্মাণ কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়া ড. ওয়াজেদ আলী বিজ্ঞান ভবনের কাজ রাজনৈতিক কারণে স্থগিত রয়েছে। এটা সচল করার চেষ্টা চলছে।
8575451
এর বাইরেও কেন্দ্রীয় মসজিদ ও মীর মোশারফ হোসেন একাডেমিক ভবনের তৃতীয়তলার কাজ চলছে। শেখ হাসিনা ছাত্রী হলের নির্মাণ কাজও প্রায় শেষের পথে।

বাংলানিউজ: সামনে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আপনার ভাবনা কি?

উপাচার্য: সামনে আমি চেষ্টা করছি বিশ্ববিদ্যালয়কে দলমতের উর্ধ্বে এসে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে ইউনিভারসাল লেভেলে নিয়ে যাব। এছাড়া আমাদের শিক্ষার্থীদেরকে গবেষণামূলক কাজের মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী এলাকার সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে চাই। যাতে তারা তাদের জ্ঞানের আলো সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারে।

বাংলানিউজ: বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি বিভাগে সেশনজট তীব্র আকার ধারণ করছে, এমনকি কয়েকটি বিভাগে ৮টি করে ব্যাচ রয়েছে। এসব নিরসনে আপনার পরিকল্পনা কী?

উপাচার্য: বিষয়টি সম্পর্কে আমি আগে থেকেই অবগত এবং এটা আমার পরিকল্পনার মধ্যে আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের শুরুতে আমার স্বপ্ন ছিল সেশনজটমুক্ত ক্যাম্পাস গড়া। এজন্য খুব দ্রুতই আমি বিভাগে বিভাগে গিয়ে খোঁজ নিয়ে পরিকল্পনা মাফিক পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। এই বিশ্ববিদ্যালয় যাতে সেশনজটমুক্ত একটি মডেল বিশ্ববিদ্যালয় হয় তেমন পরিকল্পনাও নিচ্ছি।

আমারও তো অভিজ্ঞতার দরকার ছিলো, আমি তো এখানে নতুন। এজন্য এক বছর সময় লেগেছে। আশা করি খুব দ্রুতই বিষয়টার সমাধান হবে।

বাংলানিউজ: সেশনজটের পেছনে সান্ধ্যকালীন প্রোগ্রামের কোনো প্রভাব আছে বলে মনে করেন কি?

উপাচার্য: সান্ধ্যকালীন প্রোগ্রামের কোনো খারাপ দিক নেই। যদিও আমাদের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সেক্ষেত্রে জ্ঞানের আলো সম্প্রসারণের মাধ্যমে সান্ধ্যকালীন প্রোগ্রাম থেকে যদি কিছু আয় হয় সেটা তো খারাপ কিছু নয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে সেটা যেন আমাদের মূল দায়িত্ব থেকে দূরে সরিয়ে না রাখে। এবং কোনো শিক্ষক যদি এমন করেন তাহলে তার বিরুদ্ধে নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলানিউজ: স্বাধীন দেশের প্রথম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য ছিল সম্পূর্ণ আবাসিক করা। কিন্তু ৩৪ বছর পরেও শতকরা ২০/২২ ভাগ শিক্ষার্থী আবাসিক সুবিধা পায়, এ ব্যাপারে কিছু ভাবছেন কিনা ?

উপাচার্য: আয়তনের দিক থেকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় সপ্তম বিশ্ববিদ্যালয়। এর অবস্থান ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য মুগ্ধ করার মতো। তাছাড়া বিশ্বের অনেক দাতা সংস্থারও সুদৃষ্টি আমাদের ওপর আছে। আর আবাসিক হল তো দুই একদিনের বিষয় নয়, আমি চেষ্টা করবো আগামী পাঁচ বছরে আরো কিছু আবাসিক হলের কাজ শুরু করার। তবে শতভাগ সফল হতে পারবো কি না জানি না।

বাংলানিউজ: প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইবি মাত্র ২২টি বিভাগ খোলা হয়েছে, নতুন কোনো বিভাগ খোলার পরিকল্পনা আছে কিনা?

উপাচার্য: আধুনিক যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন নতুন বাস্তবমুখী বিভাগ খোলার পরিকল্পনাতো অবশ্যই আছে। সেক্ষেত্রে ফার্মেসি, কৃষি বিজ্ঞান, মার্কেটিং, প্রত্নতত্ত্ব, সমাজবিজ্ঞান, সমাজকর্মসহ বিভিন্ন বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে ইউজিসির কাছে আবেদন করা হবে।

বাংলানিউজ: বর্তমান সরকার ডিজিটাল দেশ গড়ার জন্য অঙ্গীকারাবদ্ধ। সেখানে ইবিতে ওয়াই-ফাই থাকলেও শিক্ষার্থীরা তেমন কোনো সুবিধা পাচ্ছে না কেন?

উপাচার্য: ওয়াই-ফাই এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। আমরা এটা পরীক্ষামূলকভাবে চালাচ্ছি। খুব দ্রুতই আমি কম্পিউটার সেকশনের পরিচালকের সঙ্গে আলোচনা করে চলতি বছরের মধ্যে যাতে সকল শিক্ষার্থী পুরোপুরিভাবে এই সুবিধা ভোগ করতে পারে সেই ব্যবস্থা করবো।

বাংলানিউজ: বাংলানিউজ সম্পর্কে আপনার কোনো পরামর্শ...

উপাচার্য: বাংলানিউজের ইউনিক ফিচার হলো এটা সকলের আগে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করে। এই একটা গুণই বর্তমানের অবস্থান ও জনপ্রিয়তাকে ধরে রাখতে যথেষ্ট। তবে স্লোগানে যেহেতু বিনোদনের বিষয়টি আছে, সেহেতু শহরে বিনোদনের পাশাপাশি আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং গ্রাম্য ও লোকজ সংস্কৃতিকে একটু গুরুত্ব দেওয়া দরকার বলে আমি মনে করি।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।