ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

শিক্ষা

রাবিতে যে কারণে সান্ধ্যকোর্স ও বর্ধিত ফি

শরীফ সুমন ও জনাব আলী | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩১৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০১৪
রাবিতে যে কারণে সান্ধ্যকোর্স ও বর্ধিত ফি

রাজশাহী: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বিগত প্রশাসনের আমলে অবৈধভাবে নিয়োগকৃত অতিরিক্ত শিক্ষকসহ প্রায় ১ হাজার ৫০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা প্রদানে আর্থিকখাতে সৃষ্ট সংকট নিরসনের জন্যই সান্ধ্যকালীন কোর্স চালু ও বিভিন্ন ফি বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।

এসব কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বর্ধিত ফি প্রত্যাহার ও সান্ধ্যকোর্স বাতিলের দাবিতে গত কয়েকদিন ধরে আন্দোলন করে আসছিলো।

পরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বর্ধিত ফি প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিলেও সান্ধ্যকালীন কোর্স বহাল রাখার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও কর্মকর্তারা বাংলানিউজকে জানান, বিগত বিএনপি সরকারের দুই মেয়াদে ও আওয়ামী লীগের এক মেয়াদ পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৫ কোটি টাকার উপরে। অথচ বিগত ২০০১ সালের ১২ নভেম্বর সিনেট কর্তৃক নির্বাচিত তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক সাইদুর রহমান খানকে অব্যাহতি দেওয়ার সময় পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিক্সড ডিপোজিট (এফডিআর) ছিল প্রায় ২৫ কোটি টাকা। কিন্তু বিগত বিএনপি আমলের বহুল আলোচিত ৫৪৬ জন কর্মচারীর গণনিয়োগসহ প্রয়োজনের অতিরিক্ত শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের ফলে (এফডিআর) ভাঙানো শুরু হয়। এরপর বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও প্রায় ১ হাজার ৫০ জন শিক্ষক-কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগের ফলে তাদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভযাবহ অর্থ সংকটে পড়তে হয়। প্রায় ২৫ কোটি টাকার এফডিআর শেষের পরও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রাকসুসহ বিভিন্ন ফাণ্ডের অর্থ খরচ করছে।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, দুই যুগ ধরে রাকসুর কোনো নির্বাচন না হলেও রাকসু খাতে প্রতি বছরই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১৫ টাকা হারে আদায় করা হয়েছে। আর ২২ বছর ধরে অচল থাকলেও ৩০ টাকা হারে চাঁদা আদায় থেকে বাদ পরেনি টিএসসিসি। অনুসন্ধানে বর্তমানে রাকসুর তহবিল থেকে ৯৫ লাখ ও টিএসসিসির তহবিল থেকে ৯০ লাখ টাকা শিক্ষকদের বেতন কাঠামোতে চলে গেছে বলে সংগঠন দুটির কর্তা ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।

সংস্থাপন দফতর থেকে পাওয়া তথ্যে মতে, ২০০৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারিতে সাবেক উপাচার্য আব্দুস সোবহান দায়িত্ব নেওয়ার পর গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২০৪ পদের বিপরীতে ৩৬৮ জন শিক্ষক নিয়োগ দেন। যা বিজ্ঞাপিত পদের তুলনায় ৮১ শতাংশ বেশি।

এক অডিট প্রতিবেদনে গত ২৩ বছরে রাকসুর তহবিলে জমাকৃত ৯৮ লাখ ২৫ হাজার ৩৮১ টাকার মধ্যে ৯৫ লাখ টাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ঋণ নিয়েছেন। যেসব টাকা বিগত আব্দুস সোবহান প্রশাসন গত চার বছরে পদের বিপরীতে অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগের বেতন দিতে ব্যয় করেছেন।

আর বর্তমান প্রশাসন এসে অতিরিক্ত শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা দিতে পড়েছেন চরম আর্থিক সংকটে। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে কর্তৃপক্ষের প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব খাতের আয় বাড়ানোর প্রবল চাপ ছিল।  

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সান্ধ্যকোর্স একটি ক্লাস নিলে শিক্ষকরা দেড় হাজার থেকে ২ হাজার টাকা করে পান। দুই বছর মেয়াদী সান্ধ্যকোর্সে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর নিকট ১ লাখ থেকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত কোর্স ফি নেওয়া হয়। সেই হিসেবে ২০০৭ সাল থেকে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ৪টি বিভাগ এবং ২০১০ সাল থেকে আইন অনুষদের সান্ধ্য মাস্টার্স কোর্স থেকে ১ কোটি টাকা আয় করেছে। এর ৭৫ শতাংশ সান্ধ্য কোর্সের সঙ্গে জড়িত শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশ পান এবং অবশিষ্ট ২৫ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ফাণ্ডে চলে যায়। সেই হিসেবে এখন পর্যন্ত সান্ধ্যকোর্স থেকে প্রায় ২৫ লাখ টাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আয় করেছে।

সূত্র জানায়, অতিরিক্ত নিয়োগ দেওয়া জনবলের ব্যয়ভার বহন করতে হিমশিম খাওয়ায় সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ৭টি বিভাগে নতুন করে সান্ধ্যকালীন মাস্টার্স কোর্স খোলার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ফি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিলো। তবে এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মুখ খুলতে রাজি হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মিজানউদ্দিন এ বিষয়ে বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল বর্ধিত ফি প্রত্যাহার করা আমরা তা বাতিল করেছি। আর বিভিন্ন বিভাগে যে সান্ধ্যকোর্স চালু করা হয়েছে তা অনুষদ ও একাডেমিক কমিটির অনুমোদনের ভিত্তিতেই চালু করা হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এ সান্ধ্যকোর্স ও ফি বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করেই এখন অনিশ্চিত হয়ে গেছে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ। অনির্দিষ্টকালের বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষাজীবন শেষ করতে লাগবে দীর্ঘ সময়। এতে কষ্টে উপার্জিত অভিবাবকদের আয়ের ওপর নির্ভর করতে হবে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিন। কর্মজীবন শুরু করতেও লাগবে দীর্ঘদিন। এই সঙ্কট তৈরির জন্য বর্তমান প্রশাসন ও ছাত্রলীগকেই দায়ী করেছেন শিক্ষার্থীরা।

বাংলাদেশ সময়: ০৩২৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।