ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

শিক্ষা

অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

স্টাফ ও রাবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২, ২০১৪
অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: বর্ধিত ফি বাতিল ও সান্ধ্যকালীন মাস্টার্স কোর্স বন্ধের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলার পর অনির্দিষ্টকাল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা ও শিক্ষার্থীদের সোমবার সকাল ৮টার মধ্যে হল ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক ইলিয়াস হোসেন।



রোববার সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক মিজান উদ্দীনের সভাপতিত্বে তার বাসভবনে সিন্ডিকেটের সভা বসে। সভায় সিন্ডিকেটের ১০ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য, উপ-উপাচার্যসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতনদের পদত্যাগসহ ৮ দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। রোববার সন্ধ্যা ৭টায় রাজশাহী প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তারা এ ঘোষণা দেন।

বর্ধিত ফি বাতিল ও সান্ধ্যকালীন মাস্টার্স কোর্স বন্ধের দাবি ছাড়াও তাদের নতুন দাবিগুলো হচ্ছে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, প্রক্টর ও ছাত্র-উপদেষ্টার পদত্যাগ, হামলাকারী ছাত্রলীগ কর্মীদের গ্রেফতার-দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার, পুলিশ সদস্যদের শাস্তি, আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যয় বহন, হল বন্ধ ঘোষণা না করা এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ-পুলিশের সংঘর্ষের পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

রাবি উপ-উপাচার্য সারওয়ার জাহান সজল বিকেলে বাংলানিউজকে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতেই বিজিবি মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বর্ধিত ফি প্রত্যাহার করা হবে মর্মে জরুরি ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি এ বিষয়সহ সাবির্ক পরিস্থিতি নিয়ে রাবি সিন্ডিকেটের জরুরি মিটিংয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে।

সান্ধ্যকালীন কোর্সের বিষয়ে তিনি বলেন, সান্ধ্যকালীন কোর্স একাডেমিক কমিটির বিষয়। একাডেমিক কমিটিতেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

ক্যাম্পাসে উদ্ভূত পরিস্থিতি ও ভাঙচুরের ঘটনায় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক খালেকুজ্জামানকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বিভিন্ন খাতে বর্ধিত ফি প্রত্যাহার ও সান্ধ্যকালীন কোর্স বন্ধের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর রোববার দুপুরে কয়েক দফা হামলা চালায় পুলিশ ও ছাত্রলীগ। এ ঘটনায় সাংবাদিকসহ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।

শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের চালানো গুলিতে অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহতদের বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রসহ রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার প্রতিবাদে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি ভবনে ভাঙচুর চালান।

দিনভর হামলা ও সংঘর্ষে আহত হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অমিত গোস্বামী, তারিন, স্বপন, রাজিব, তাওহিদ, বিলকিস নাহার, আতিক, শোভন, সালমা, মায়া, আশুরা, রবিউল, পরাগ, আশিক, রাখি, সাজু, আবদুর রশিদ, যুথিসহ অনেকে। আহত সাংবাদিকদের মধ্যে রয়েছেন মাছরাঙা টেলিভিশনের রাজশাহী প্রতিনিধি গোলাম রাব্বানী, সকালের খবরের রাবি প্রতিনিধি সুজন নাজির, নিউ এজ পত্রিকার নাজিম মৃধা, রাইজিং বিডির মেহেদী হাসান, শীর্ষ নিউজ.কমের জাকির হোসেন তমাল, দৈনিক মানবকণ্ঠের বুলবুল ‍আহমেদ ফাহিম প্রমুখ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বর্ধিত ফি প্রত্যাহার ও সান্ধ্যকালীন কোর্স বাতিলের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে রোববার সকাল ৮টা থেকে কর্মসূচি পালন করছিল তারা। সাড়ে ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা প্রশাসন ভবনের সামনে শান্তিপূর্ণ অবস্থান নেন। এ সময় সহকারী প্রক্টর সিরাজুল ইসলাম, হেলাল উদ্দিন ও জুলফিকার আলীর উপস্থিতিতে পুলিশ তাদের উঠে যাওয়ার নির্দেশ দেয়।

একই সময় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একটি মিছিল এসে আন্দোলনকারীদের পূর্ব পাশে অবস্থান নেয়। একপর্যায়ে বিনা উস্কানিতেই ছাত্রলীগকর্মীরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ককটেল ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। একই সময় পশ্চিম দিক থেকে পুলিশও শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে টিয়ায়শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এ সময় পুলিশের সহায়তায় ছাত্রলীগ গুলিও চালায় বলে অভিযোগ করেছে শিক্ষার্থীরা। ছাত্রলীগ নেতাদের সুদীপ্ত সালাম, মোস্তাকিম বিল্লা, ফয়সাল আহম্মেদ রুনুকে গুলি ছুড়তে দেখা গেছে।

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে সন্ধ্যাকালীন মাস্টার্স কোর্স চালু ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাসহ বিভিন্ন ফি দুই থেকে পাঁচ গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এর আগে থেকেই আইন ও বিজনেস স্টাডিজ অনুষদে সান্ধ্যকালীন কোর্স চালু রয়েছে।

গত মঙ্গলবার থেকে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ কর্মসূচি ও প্রশাসন ভবন ঘেরাও করার পর বৃহস্পতিবার থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে ধর্মঘট করে আসছেন শিক্ষার্থীরা।

বাংলাদেশ সময়: ২১০২ ঘণ্টা/আপডেটেড: ২১২২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০১৪



*রাবিতে বিজিবি মোতায়েন, সিন্ডিকেট সভা চলছে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।