ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

শিক্ষা

রাবিতে আন্দোলনরতদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা-গুলি, আহত ৫০

স্টাফ ও রাবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২, ২০১৪
রাবিতে আন্দোলনরতদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা-গুলি, আহত ৫০

রাবি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রশাসনিক ভবনের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সমাবেশে হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে ককটেল বিস্ফোরণসহ গুলিও চালানো হয়।

এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, পুলিশের সহায়তায় ছাত্রলীগই এ ঘটনা ঘটিয়েছে।  


দুপুর ১২টার দিকে হামলার এ ঘটনা ঘটে।  


প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সকাল থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছিলেন। দুপুরে  তারা প্রশাসনিক ভবনের সামনে সমাবেশ করছিলেন। এসময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে। একপর্যায়ে গুলির ছোড়া হয়। এতে গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশতাধিক শিক্ষাথী-সাংবাদিক আহত হন।  


এদের মধ্যে রয়েছেন মাছরাঙা টেলিভিশনের রাজশাহী প্রতিনিধি গোলাম রাব্বানী, সকালের খবরের রাবি প্রতিনিধি সুজন নাজির, নিউ এজ পত্রিকার নাজিম মৃধা, রাইজিং বিডির মেহেদী হাসান, শীর্ষ নিউজ.কমের জাকির হোসেন তমাল, দৈনিক মানবকণ্ঠের বুলবুল ‍আহমেদ ফাহিম।  


এ ঘটনার পর থেকে ক্যাম্পাসে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। পুরো এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।  


পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।  


মতিহার থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) শামসুননুর বাংলানিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।  


এদিকে, রাবির ঘটনায় নিজেদের সম্পৃত্ততা অস্বীকার করেছেন রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান রানা ও সাধারণ সম্পাদক তওহিদ আল তুহিন।  


তারা দুপুর আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফটেরিয়ায় সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরবেন বলেও জানিয়েছেন।


বেলা দেড়টার দিকের সর্বশেষ প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, ছাত্রলীগ তাদের দলীয় টেন্টে অবস্থান করছে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরিতে ঢুকে গেছে। ক্যাম্পাসে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।  


এর আগে সকাল ১০টার দিকে ক্যাম্পাসে গোল্ডেন জুবেরি টাওয়ারের সামনে দু’টি হাতবোমার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।


ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষাসহ বিভিন্ন বর্ধিত ফি প্রত্যাহার ও বিভিন্ন বিভাগে চালুকৃত সন্ধ্যাকালীন মাস্টার্স কোর্স

বন্ধের দাবিতে তৃতীয় দিন রোববার সকালে ধর্মঘটের সমথর্নে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।  


ধর্মঘট পালন করতে রোববার সকাল ৭টার দিকে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হল ও পার্শ্ববর্তী ছাত্রবাস থেকে ক্যাম্পাসের টুকিটাকি চত্বরে এসে জড়ো হতে থাকে। সকাল ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের টুকিটাকি চত্বর থেকে কয়েক হাজার শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়।  


এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বড়ির উপস্থিতিতে পুলিশ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মাইক কেড়ে নেয় এবং তা ভাঙচুর করে। এতে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধাক্কা-ধাক্কির ঘটনা ঘটেছে।


একই সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পুলিশের সহযোগিতায় বিভিন্ন একাডেমিক ভবনের তালা ভাঙার চেষ্টা করে। খবর পেয়ে শিক্ষার্থীরা ছুটে এসে তাদের বাধা দেয়।  


এরপর থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ৫০-৬০ জন করে ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ভবনের সামনে অবস্থান নেয়। এছাড়াও কয়েক হাজার শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে।  


বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি প্রফেসর সারওয়ার জাহান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা দাবি মেনে নেওয়ার পরও শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন, এটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মেনে নিতে পারে না। যাতে ক্যাম্পাসে শিক্ষার পরিবেশ ফিরে আসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেই ব্যবস্থা করছে।  


শিক্ষার্থীদের বাধা দেওয়া হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।


শিক্ষার্থীদের কঠোর আন্দোলনের মুখে শনিবার বর্ধিত ফি বাস্তবায়ন স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীদের দাবি পুরোপুরি মেনে না নেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।


সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে সন্ধ্যাকালীন মাস্টার্স কোর্স চালু ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাসহ বিভিন্ন ফি দুই থেকে পাঁচ গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এর আগে থেকেই আইন ও বিজনেস স্টাডিজ অনুষদে সান্ধ্যকালীন কোর্স চালু রয়েছে।  


গত মঙ্গলবার থেকে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ কর্মসূচি ও প্রশাসন ভবন ঘেরাও করার পর বৃহস্পতিবার থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে ধর্মঘট করে আসছেন শিক্ষার্থীরা।


রাবি প্রক্টর তারিকুল হাসান বাংলানিউজকে জানান, ক্যাম্পাসের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।


বাংলাদেশ সময়: ১১৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০১৪/আপডেটেড-১৪১০ ঘণ্টা।  

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।