ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

শিক্ষা

আনন্দ ফিরেছে আনন্দ স্কুলে

ইসমাইল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৪
আনন্দ ফিরেছে আনন্দ স্কুলে

ঢাকা: শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে প্রতিষ্ঠিত আনন্দ স্কুলে শিশুদের সত্যিকারের ‘আনন্দ’ ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন প্রকল্পের পরিচালক শওকত আকবর।  

 

রিচিং আউট অব স্কুল চিলড্রেন (রস্ক) প্রকল্পের আওতায় ১০ বছর আগে সারা দেশের ৯০ উপজেলায় আনন্দ স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়।

 

 

শিশুদের ইউনিফর্ম, মিড-ডে মিল চালুসহ ভবিষ্যত কর্ম-পরিকল্পনার কথা জানিয়ে শওকত আকবর বলেন, এসব কর্মসূচি বাস্তবায়িত হলে ঝরে পড়া রোধের লক্ষ্য অর্জনসহ স্কুল নিয়ে ধারণা পাল্টে যাবে।  

 

দেশের অনুন্নত জনপদ এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি অধ্যুষিত উপজেলায় হত-দরিদ্র ও ঝরে পড়া শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির জন্য ২০০৪ সালে প্রকল্প শুরু হয় বলে বাংলানিউজকে জানান রস্ক প্রকল্পের পরিচালক শওকত আকবর।

 

প্রথম ধাপে ৯০টি উপজেলায় পাঁচ হাজার ৯৪১টি স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। এসব স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক লাখ ৩৫ হাজার ১৭৯ জন। প্রথম ধাপ ২০০৪ সাল থেকে ২০১২ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা শেষ হয় গত বছরের জুনে।

 

বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত এ প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপে বরিশাল বিভাগে ৭টি, চট্টগ্রামে ২৮টি, ঢাকায় ২২টি, খুলনায় ৫টি, রাজশাহীতে ১০টি, রংপুরে ১১টি এবং সিলেট বিভাগে ১৭টি স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে।

 

সাড়ে ছয়শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৩ সালের জুন থেকে ২০১৭ সাল পর‌্যন্ত। এই মেয়াদে পাঁচ হাজার স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হবে।  

 

প্রথম ধাপের ৯০ উপজেলার মধ্যে ৪৮ উপজেলাও দ্বিতীয় ধাপের উপজেলাগুলোর সঙ্গে যুক্ত হবে। সব মিলে এবার ১৪৮টি উপজেলায় এসব স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে।

 

এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১৬টি, সিলেটে ৪টি, রংপুরে ১৩টি, চট্টগ্রামে ৭টি, বরিমালে ১টি, রাজশাহীতে ৬টি এবং খুলনায় প্রতিষ্ঠিত হবে ১টি স্কুল।  

প্রকল্প পরিচালক শওকত আকবর বলেন, দ্বিতীয় ধাপে ২৩ হাজার স্কুলে মোট সাত লাখ ২০ হাজার শিক্ষার্থীর পাঠদানের টার্গেট ধরা হয়েছে।  

 

গত কয়েক বছরে আনন্দ স্কুলের নামে হরিলুটের অভিযোগ ওঠে। শিক্ষার্থীদের প্রকৃত সংখ্যা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে।  

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তার দায়িত্ব নেওয়ার এক বছর পর এসব অভিযোগ এখন নেই বলে দাবি করেন বর্তমান প্রকল্প পরিচালক।  

 

এসব স্কুলের শিক্ষার্থীদের কোনো ইউনিফর্ম না থাকলেও অতিরিক্ত অর্থ ছাড়া লাল-সবুজ রঙের ইউনিফর্ম তৈরি করা হয়েছে বলে জানান শওকত আকবর। আগামী ১০ বছরের মধ্যে সারা দেশে একই ইউনিফর্ম চালু হবে বলেও জানান তিনি।

 

আগে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিতো জানিয়ে শওকত আকবর বলেন, এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইআর) এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইডি প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এতে ইতিবাচক ফল আসবে বলেও দাবি তার।  

 

শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াটিও স্বচ্ছ হবে জানিয়ে প্রকল্প পরিচালক বলেন, আনন্দ স্কুলের শিক্ষকদের উপজেলা শিক্ষা কমিটি সিলেকশন করে থাকেন। শিক্ষকদের বেতন এবার থেকে নিজস্ব ব্যাংক হিসেবে দেওয়া হবে।  

 

উপকরণ নেওয়ার জন্যও ব্যাংক হিসাব খোলার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। বাড়তি খরচ ছাড়া উপকরণ কেনার টাকা দিয়ে প্রথমবারের মত বেঞ্চ তৈরি করা হচ্ছে।  

 

সামনের বছর শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যাগ সরবরাহ ছাড়াও মিড-ডে মিলের ব্যবস্থা করা হবে জানিয়ে শওকত আকবর বলেন, সার্বিক দেখভালের জন্য রয়েছে স্টিয়ারিং কমিটি।

 

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক হিসেবে দেখা যায়, বর্তমানে প্রায় ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে। তবে স্কুলগামী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৯৯ শতাংশ।  

 

আনন্দ স্কুলের জন্য এসব পদক্ষেপ ঝরে পড়া রোধ করবে জানিয়ে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের স্কুলগামী করে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনে সহায়ক হবে এসব স্কুল।

 

অনুন্নত জনপদে আরো একশ’ উপজেলায় আনন্দ স্কুলে পাঠদানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় দ্বিতীয় ধাপে তিন হাজার ১০২টি স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হবে।  

 

৮ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুরা পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়ার সুযোগ পাচ্ছে। এসব স্কুলের শিক্ষার্থীরা এবার পঞ্জম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নেবে।

 

বাংলাদেশ সময়: ০৩১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।