ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

শিক্ষা

রাবির বিভিন্ন ফি ৫ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি

জনাব আলী, রাবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০১৪
রাবির বিভিন্ন ফি ৫ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি

রাবি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা, সনদপত্র উত্তোলনসহ বিভিন্ন ফি পাঁচ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে।

সরকারি বরাদ্দের ওপর নির্ভর না করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর অভ্যন্তরীণ আয় বৃদ্ধি করতে সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (বিমক) নির্দেশে এ ফি বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে জানা গেছে।



বর্ধিত ফি ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কৌশলপত্র অনুযায়ী ২০২৬ সালের মধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজস্ব অর্থায়নে চলার নির্দেশনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে বিভিন্ন ফি বৃদ্ধি করা হয়েছে। এভাবে ফি বৃদ্ধি করায় দরিদ্র শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়বে এবং নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানদের জন্য উচ্চ শিক্ষার দ্বার বন্ধ হয়ে যাবে বলে মনে করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

তবে প্রয়োজনের কথা বিবেচনা করে এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখেই এসব ফি বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানায়, গত ২৩-২৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৫০তম সিন্ডিকেট সভায় এ বর্ধিত ফি বৃদ্ধির বিষয়টি অনুমোদন করা হয়। এ বছরের জানুয়ারি থেকে এই বর্ধিত ফি কার্যকর করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সম্মান শ্রেণীতে তিনঘণ্টা স্থিতিকালের তত্ত্বীয় পরীক্ষার ফি ৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০০ টাকা, তিনঘণ্টার বেশি স্থিতিকালের পরীক্ষার ফি ৬০ টাকা থেকে ১২৫ টাকা করা হয়েছে। স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) শ্রেণীতে ৬০ টাকার পরীক্ষার ফি বাড়িয়ে করা হয়েছে ১২৫ টাকা। বিভিন্ন বিভাগে কোর্স উন্নয়ন ফি ১০০ টাকা থেকে পাঁচগুণ বাড়িয়ে ৫০০ টাকা করা হয়েছে। নন কলেজিয়েট ফি ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০০০ টাকা এবং মাস্টার্সে তত্ত্বীয় পরীক্ষার ফি ২০০ টাকা থেকে পাঁচগুণ বাড়িয়ে ১০০০ টাকা করা হয়েছে।

এছাড়া, সাময়িক সনদপত্র (সাধারণ) উত্তোলনের ফি ১০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা এবং সাময়িক সনদপত্র (জরুরী) উত্তলোনের জন্য ফি ২০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০০০ টাকা করা হয়েছে। মূল সনদপত্র ২০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০০ টাকা, জরুরি নম্বরপত্র ২২৫ টাকার ফি বাড়িয়ে ৬০০ টাকা, সাবসিডারি মার্কস সার্টিফিকেট ফি ১৫০ থেকে বাড়িয়ে ৫০০, ডুপ্লিকেট মার্কস সার্টিফিকেট ৩০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০০০ টাকা, ডুপ্লিকেট প্রবেশপত্র ৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০০ টাকা, নাম সংশোধনী ফি ২৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০০ টাকা করা হয়েছে।

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদের অধীনে মেডিকেল কলেজগুলোতে পরীক্ষার ফি বৃদ্ধি করা হয়েছে তুলনামূলক বেশি হারে। চিকিৎসা অনুষদে এমবিবিএস, বিডিএস পরীক্ষার ফি প্রতি বিষয় ১২০০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ১৫০০ টাকা করা হয়েছে। স্নাতকোত্তর- এমএস, এমডি এফফিল পরীক্ষার ফি ২০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০০০ টাকা করা হয়েছে। স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা কোর্সের বিভিন্ন পরীক্ষার ফি ১৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০০০ টাকা করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফি এমন হারে বৃদ্ধি হলে দরিদ্র পরিবারের অনেক শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষা থেকে ছিটকে পড়বে বলে মত দিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে নিজস্ব অর্থায়নে চলার কৌশলপত্রকে অযৌক্তিক বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগি অধ্যাপক সেলিম রেজা নিউটন জানান, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিজস্ব অর্থায়নে চলার প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়।

বিশ্বব্যাংকের এ কৌশল বাস্তবায়ন করা হলে তা উচ্চশিক্ষার জন্য সর্বনাশ ডেকে আনবে বলে দাবি করে তিনি জানান, এভাবে ফি বৃদ্ধি করা হলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালগুলো বড়লোক শ্রেণীর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ও ফি বৃদ্ধি বিষয়ে গঠিত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক সায়েন উদ্দিন আহমেদ জানান, সনদপত্র উত্তোলন ও পরীক্ষার ফি কিছু কিছু ক্ষেত্রে বৃদ্ধি করা হয়েছে। সরকারের অভ্যন্তরীণ আয় বৃদ্ধির নির্দেশনায় এসব ফি বৃদ্ধি করা হয়েছে।

তবে তিনি দাবি করে জানান, এসব ফি বৃদ্ধির প্রভাব সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর পড়বে না। সাধারণ শিক্ষার্থীদের যেসব ফি নিয়মিত দিতে হয় সেগুলা কম বৃদ্ধি করা হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে যেসব সনদপত্র উত্তোলন করা হয় সেখানে কিছুটা বেশি বাড়ানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
 
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিন বলেন, সবকিছুরই তো ব্যয় বাড়ছে। বিভিন্ন খাতে খরচ বাড়ছে তাই কিছু খাতে ফি বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিছুটা ইউজিসির (বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন) নির্দেশনা এবং আমাদের প্রয়োজনের কথা বিবেচনা করে আভ্যন্তরীণ ব্যয় সংকুলানের জন্য এসব ফি বৃদ্ধি করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।