রাজধানীর সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তরের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভাজন তৈরি হয়েছে। বিভাজিত শিক্ষার্থীরা সোমবার (১৩ অক্টোবর) শিক্ষা ভবন এলাকায় পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করছে।
একদল প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাদেশ দ্রুত জারির দাবিতে শিক্ষা ভবন অভিমুখে পদযাত্রা করছে। আরেক দল দাবি করছে, পদযাত্রার নামে মব সৃষ্টি করে সরকারি সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করার চেষ্টা হচ্ছে এবং এজন্য তারা শহীদ মিনারে শান্তির মিছিল ও ঐক্য সমাবেশ করবে। পরে তারা শিক্ষা ভবনে আসবে।
গত শুক্রবার সাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর আন্দোলনের পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে ১৩ অক্টোবর সকাল সাড়ে ১০টায় শিক্ষা ভবন অভিমুখে শান্তিপূর্ণ উপায়ে পদযাত্রার কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়।
অপর পক্ষে, সাত কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ (অনার্স, মাস্টার্স ও এইচএসসি) শনিবার ‘মার্চ এগেইনস্ট মব ভায়োলেন্স টু শিক্ষা ভবন’ কর্মসূচি ঘোষণা করে।
শিক্ষা ভবন অভিমুখে পদযাত্রা
প্রস্তাবিত কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ দ্রুত জারির দাবিতে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের পদযাত্রা সকাল সাড়ে ১০টায় শিক্ষা ভবন অভিমুখে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
সাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর আন্দোলনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সাত কলেজের সমন্বয়ে প্রস্তাবিত ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রণীত ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে প্রকাশিত ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অধ্যাদেশ-২০২৫’ এর খসড়া নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে নানা তর্ক-বিতর্ক হয়েছে! কিন্তু আমাদের লক্ষ্য এখন শুধুই অধ্যাদেশ। ইতোমধ্যে সকলেই অবগত আছেন, গত ৯ অক্টোবর পর্যন্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয় উক্ত অধ্যাদেশের খসড়ার বিষয়ে সকল অংশীজনের মতামত নিয়েছেন। সূত্রে জানতে পেরেছি যে, মন্ত্রণালয় অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে দ্রুতই সমাধান দেবেন। কিন্তু আমরা বিগত দিনগুলোতে লক্ষ্য করেছি যে, দ্রুত সমাধানের নাম করে বিশ্ববিদ্যালয় গঠন ইস্যুতে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে কর্তৃপক্ষের তীব্র কালক্ষেপণ হয়েছে। আমরা আর কোনো কালক্ষেপণে যেতে চাই না। বিশ্ববিদ্যালয় যে মডেলেই হোক না কেন, সকলে যে মতামত দিয়েছে তারই প্রেক্ষিতে দ্রুত খসড়া হালনাগাদ করে অধ্যাদেশ দিতে হবে এবং অধ্যাদেশ জারি কত দ্রুত হবে বা কবে হবে সেটা জানার জন্য আগামী ১৩ অক্টোবর সকাল সাড়ে ১০টায় আব্দুল গণি রোড ও কলেজ রোড সংলগ্ন শিক্ষা ভবন অভিমুখে শান্তিপূর্ণ উপায়ে পদযাত্রার কর্মসূচি পালন করছে সাত কলেজ তথা প্রস্তাবিত ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তবে অধ্যাদেশ জারির চূড়ান্ত দিনক্ষণ না জানালে বর্তমান শিক্ষার্থীরা অধ্যাদেশ নিয়েই তবে পড়ার টেবিলে ফিরবে।
শহীদ মিনারে শান্তির মিছিল ও ঐক্য সমাবেশ, পরে শিক্ষা ভবন
সাত কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ (অনার্স, মাস্টার্স ও এইচএসসি)- ব্যানারে এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি সাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর কমিটি নামে একটি ক্ষুদ্র, বিচ্ছিন্ন ও বিপথগামী শিক্ষার্থী গোষ্ঠী এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর এবং উসকানিমূলক ‘মার্চ টু শিক্ষা ভবন’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। আমরা সাত কলেজের অনার্স, মাস্টার্স ও এইচএসসি পর্যায়ের প্রকৃত সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের উদ্দেশ্যমূলক এ কর্মসূচি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছি।
২০২৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটি সাত কলেজের সমস্যা নিরসন এবং আধুনিকায়নের লক্ষ্যে প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি খসড়া অধ্যাদেশ তৈরি ও প্রকাশ করেছে। উক্ত খসড়ার ওপর মতামত প্রদানের সুযোগ ৯ অক্টোবর শেষ হয়েছে। এখন শিক্ষা মন্ত্রণালয় সকল মতামত যাচাই-বাছাই করে একটি বাস্তবসম্মত ও শিক্ষার্থীবান্ধব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
‘কিন্তু দুঃখজনকভাবে দেখা যাচ্ছে, প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে ১ শতাংশেরও কম (১,৫০,০০০×১% = ১,৫০০) একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী মার্চ টু শিক্ষা ভবন কর্মসূচির নামে মব সৃষ্টি করে সরকারি সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করার অপচেষ্টা করছে। এ ধরনের আচরণ সাত কলেজের সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়ার পথে বড় অন্তরায় এবং সাত কলেজ ও দেশের সার্বিক স্থিতিশীলতার জন্যও মারাত্মক হুমকি স্বরূপ। ’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আমরা স্পষ্টভাবে জানাতে চাই, সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষার্থীর নীরবতা যেন ভুলভাবে ব্যাখ্যা না করা হয়। সাত কলেজের ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত মব সৃষ্টি কারীদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নেওয়া যাবে না। আমরা চাই, সরকারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হোক তথ্যনির্ভর, অংশগ্রহণমূলক এবং বাস্তবসম্মত এবং নিরপেক্ষ এমন একটি স্থিতিশীল, শিক্ষাবান্ধব কাঠামোর ওপর ভিত্তি করে যা সাত কলেজের ঐতিহ্য ও স্বতন্ত্র কাঠামো অক্ষুণ্ণ রাখবে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে, আমরা সাত কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। আগামী সোমবার (১৩ অক্টোবর) সকাল ১১টায় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে শান্তির মিছিল ও ঐক্য সমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পরিস্থিতি অনুযায়ী সমাবেশ শেষে শান্তিপূর্ণভাবে ‘মার্চ এগেইনস্ট মব ভায়োলেন্স টু শিক্ষা ভবন’ কর্মসূচি পালন করা হবে।
এছাড়া, আগামী ২৭ অক্টোবর বেলা ১১টায় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে মহাসমাবেশ (অনার্স, মাস্টার্স, এইচএসসি ও প্রাক্তন) করা হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, তাদের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীদের কলেজ আইডি কার্ড দেখে প্রকৃত পরিচয় যাচাই করুন, যাতে শিক্ষার্থীদের নামে কোনো বহিরাগত বা স্বার্থান্বেষী মহল অপতৎপরতা চালাতে না পারে। একই সঙ্গে কলেজ প্রশাসনের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি, যারা নগদ অর্থ ও চাকরির প্রলোভনে মব সৃষ্টি ও বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে, তাদের ক্লাস উপস্থিতি ও একাডেমিক রেকর্ড প্রকাশ করা হোক। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অনুরোধ, এই আন্দোলনের নেপথ্যে থাকা ইন্ধনদাতাদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
সাত কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা (অনার্স, মাস্টার্স ও এইচএসসি) বলছেন, আমরা শান্তি চাই ও স্থিতি। সাত কলেজ সমস্যার টেকসই সমাধান চাই। সাত কলেজের ঐতিহ্য ও স্বতন্ত্র মর্যাদা যেন কোনো গোষ্ঠীর হীন ইচ্ছার বলি না হয়, এইচএসসি যেন উদ্বাস্তু না হয়, ইডেন ও বদরুন্নেসা যেন কম্বাইন্ড না হয়, চলমান শিক্ষার্থীদেরকে যেন সেশনজটে ফেলা না হয়, শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ যেন না হয়—এটাই আমাদের অঙ্গীকার।
অধ্যাদেশে ৬ হাজারের বেশি মতামত, শিগগিরই পরামর্শ সভা
রোববার (১২ অক্টোবর) শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, প্রস্তাবিত ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ অধ্যাদেশের খসড়া বিষয়ে অংশীজনসহ সর্বসাধারণের মতামত গ্রহণের উদ্দেশ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের ওয়েবসাইটে গত ২৪ সেপ্টেম্বর খসড়াটি প্রকাশ করা হয়, যা ৯ অক্টোবর তারিখ পর্যন্ত উন্মুক্ত ছিল। ইতোমধ্যে ছয় হাজারেরও অধিক মতামত পাওয়া গেছে।
বর্তমানে মতামতসমূহ সংকলন ও বিশ্লেষণের কাজ চলমান রয়েছে। উক্ত প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, শিক্ষাবিদ ও শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ অংশীজনের সাথে শিগগিরই ধারাবাহিক পরামর্শ সভা আয়োজন করা হবে। অংশগ্রহণমূলক ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সকলের মতামতের প্রতিফলন ঘটবে বলে আশা করা যায়।
অংশীজনের গঠনমূলক ও প্রতিনিধিত্বশীল মতামতের ভিত্তিতে এবং বিধিসম্মত প্রক্রিয়ায় খসড়া পর্যালোচনা, বিশ্লেষণ ও প্রক্রিয়াকরণ শেষে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, সর্বোপরি শিক্ষা ব্যবস্থার সর্বোত্তম কার্যকারিতা নিশ্চিত করার উপযোগী ও বাস্তবসম্মত অধ্যাদেশ প্রণয়নের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
কনসালটেশন প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্টদের বিশেষভাবে অনুরোধ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
কলেজগুলো হলো-ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, মিরপুর বাংলা কলেজ এবং সরকারি তিতুমীর কলেজ।
এমআইএইচ/এসআইএস