ঢাকা, সোমবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

শিক্ষা

স্কুল-মাদরাসা মাঠ ঘিরে অবৈধ মেলা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০২৪
স্কুল-মাদরাসা মাঠ ঘিরে অবৈধ মেলা

লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জে অবৈধভাবে মেলা বসানো হয়েছে। সেখানে থাকা একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মাদরাসা ও একটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র ঘিরে বসেছে মেলার পসরা।

এতে গত তিনদিন ধরে দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনো শিক্ষার্থীই আসছে না।  

শিক্ষকরা জানিয়েছেন, মেলা চলায় শিশুরা বিদ্যালয়ের আসে না। আর অভিভবকরাও নিরাপত্তার কারণে তাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাচ্ছেন না।  

ফলে প্রতি বছর মেলা চলাকালে পাঁচ থেকে সাতদিন দুটি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শত শত বছর ধরে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর গ্রামে হজরত দেওয়ান শাহের (র.) মাজারকে কেন্দ্র করে বাৎসরিক মেলার আয়োজন করা হয়। কয়েক বছর আগেও মাজারের দায়িত্বরত লোকজন মেলার আয়োজন করতেন।  

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ২০১১ সালের পর থেকে স্থানীয় প্রভাবশালী এবং আওয়ামী লীগের নেতারা মেলাকে তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন। মেলায় বসানো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে মোটা অংকের চাঁদা আদায় করে থাকেন তারা। প্রতি বছর কয়েক লাখ টাকা আদায় করে বিভিন্নভাবে ম্যানেজ করে মেলা পরিচালনা করেন তারা।  

স্থানীয় লোকজন আরও জানান, মেলাকে কেন্দ্র করে মূলত অর্থ বাণিজ্য করার উদ্দেশ্য থাকে প্রভাবশালীদের। ফলে ওই স্থানে থাকা হজরত দেওয়ান শাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং হজরত দেওয়ান শাহ (র.) মহিলা দাখিল মাদরাসার শিক্ষা কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ রাখতে হয়। এছাড়া সেখানে থাকা একটি সরকারি কমিউনিটি ক্লিনিকে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা দান ব্যাহত হচ্ছে।  

খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরে মেলার আয়োজন করে আসছেন চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছাবির আহমেদ, জেলা আওয়ামী লীগের সহ প্রচার সম্পাদক মনছুর আহমেদ ও থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক কাজী মামুনুর রশীদ বাবলু। এবারও এ তিনজন মেলার আয়োজক। অনুমোদন না নিয়ে মেলা আয়োজন করেছেন তারা। প্রশাসনিকভাবে মেলার অনুমোদন নিতে না পারলেও মেলার কার্যক্রম গত ১৪ জানুয়ারি থেকে চলে আসছিল। তার ওই দিন থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মহিলা মাদরাসার শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে আছে।  

মাজারের আশেপাশে ছোট-বড় মিলিয়ে হাজার খানেক স্টল বসানো হয়েছে। সাত থেকে ১০ দিনের জন্য প্রতিটি স্টল থেকে ১০ থেকে ৩০ হাজার টাকা করে ভাড়া নেওয়া হয়। এতে প্রতি বছর লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন মেলার আয়োজকরা।

কয়েকজন স্টল মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মেলায় ব্যবসা করার জন্য তারা স্টল ভাড়ার একটি অংশ পরিশোধ করেছেন। তবে মেলা শেষ হওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ মেলার অনুমোদন মেলেনি। তাই হাজার হাজার টাকা খরচ করে লোকসানে পড়বেন তারা।  

বুধবার (১৭ জানুয়ারি) দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, মাজারের আশেপাশে জমজমাট পসরা বসানো হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশেপাশে এবং বিদ্যালয় ভবনের নিচে স্টল বসানো হয়েছে। বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে গিয়ে কোনো শিক্ষার্থীকে পাওয়া যায়নি। কয়েকজন শিক্ষককে বিদ্যালয়ে দেখা গেলেও পাঠাদান বন্ধ ছিল।  

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফজলুন নাহার বাংলানিউজকে বলেন, প্রতি বছর মেলার সময় বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা আসতে চায় না। বিদ্যালয়ের আশেপাশে মেলায় আসা অপরিচিত লোকজন থাকায় ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভয় কাজ করে। তাদের অভিভাবকরা নিরাপত্তাহীনতার কারণে ছেলেমেয়েদের বিদ্যালয়ে পাঠান না৷ বিদ্যালয়ে ১৪০ জন শিক্ষার্থীর কেউ আসছে না।  

একই কথা জানিয়ে বিদ্যালয়ের সভাপতি জহিরুল ইসলাম বলেন, কয়েক বছর আগেও সুষ্ঠুভাবে মেলার কার্যক্রম চলত। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে এখন মেলার কার্যক্রম ব্যবসা কেন্দ্রীক হয়ে গেছে। অনুমোদন না থাকলেও কিছু কিছু লোক মেলা বসিয়ে বাণিজ্য করেন।

দেওয়ান শাহ (র.) মাজারের পাশে থাকা হজরত দেওয়ান শাহ (র.) মহিলা দাখিল মাদরাসাটি বন্ধ পাওয়া যায়। গত তিন থেকে চারদিন ধরে মাদরাসাটি অঘোষিতভাবে বন্ধ রয়েছে। বুধবার দুপুরে গিয়ে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী কাউকে পাওয়া যায়নি। মাদরাসায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।  

ফোনে কথা হয় মাদরাসা সুপার মাওলানা রওশন জালালের সঙ্গে। তিনি বলেন, মেলার কারণে মাদরাসা বন্ধ রাখা হয়েছে।  

বন্ধ রাখার জন্য প্রশাসনিক কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়েছে কিনা-এমন প্রশ্নে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।  

সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, মেলা চললেও শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখার কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ খবর নেব।  

এদিকে মাজারের পাশে থাকা একটি কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে। দায়িত্বরত সিএইচসিপি রতন চন্দ্র দেবনাথ বলেন, মেলা চলাকালে শিশু এবং অন্তঃসত্ত্বারা চিকিৎসা সেবা নিতে আসতে পারেন না।  

জেলা প্রশসাক (ডিসি) সুরাইয়া জাহান বাংলানিউজকে বলেন, মেলার কোনো অনুমোদন দেওয়া হয়নি। অনুমোদনহীন মেলা চললে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

মেলার কারণে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী না আসার বিষয়েও খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০২৪
এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।