ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২১ মে ২০২৪, ১২ জিলকদ ১৪৪৫

শিক্ষা

‘বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না, আমার চলতে কষ্ট হয়’

রাবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০২২
‘বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না, আমার চলতে কষ্ট হয়’

রাবি: ‘বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না, আমার চলতে কষ্ট হয়। আমাকে ক্যান্টিন চালাতে সহযোগিতা করুন, বাকির খাতা পরিশোধ করুন’- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে টাঙানো একটি বিজ্ঞপ্তি এটি।

হলের ক্যান্টিন মালিক শফিকুল ইসলাম এ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন।  

দীর্ঘ ১২ বছর ধরে তিনি হলের ক্যান্টিন পরিচালনা করছেন। শিক্ষার্থীদের কখনও বাকি দিতে কার্পণ্য করেন না তিনি। কিন্তু কয়েক মাসে শিক্ষার্থীদের কাছে লাখ টাকার বেশি বকেয়া হয়ে যাওয়ায় আকুতি জানিয়ে এমন বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন তিনি।

হলের শিক্ষার্থীরা জানান, শিক্ষার্থীদের কাছে ক্যান্টিনের পরিচালক শফি ভাই এক নামে পরিচিত। বাকি নেওয়ার পর কবে টাকা দেবেন, সেটাও শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চান না তিনি। শিক্ষার্থীদের ওপর তার দৃঢ় বিশ্বাস। কিন্তু বিশ্বাস তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে জানতে চাইলে শফি বলেন, গত কয়েক মাসে শিক্ষার্থীদের কাছে লাখ টাকার বেশি বকেয়া পড়েছে। ক্যান্টিন চালাতে গিয়ে দোকানে অনেক টাকা বকেয়া জমেছে। আমার কাছে কোনো টাকা নেই। পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়েছি।

শফি জানান, ২০১০ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ক্যান্টিন পরিচালনার দায়িত্ব পান। এরপর থেকে নিয়মিত ক্যান্টিন পরিচালনা করছেন। লেখাপড়া না জানায় শিক্ষার্থীরা বাকি খেয়ে তা খাতায় লিখে রাখেন এবং পরে তারাই হিসেব করে বকেয়া পরিশোধ করতেন। অনেকে লেখাপড়া শেষে ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যেতেন বকেয়া পরিশোধ করে। বকেয়া টাকা না দিয়ে চলে যাওয়ার ঘটনা কম ছিল। ফলে খুব একটা কষ্ট হতো না। কিন্তু বিগত কয়েক মাস ধরে অধিকাংশ শিক্ষার্থী বকেয়া পরিশোধ করছেন না। এতে মুদি দোকান, মাছ মাংসের দোকানে বকেয়া হয়ে গেছে। দোকানের কর্মচারীদের বেতন দিতে তাকে ঋণ করতে হয়েছে।
 
শফিকুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়। তবে ১৯৭১ সালের পর থেকে মা-বাবার সঙ্গে রাজশাহীতে বসবাস করছেন। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুর এলাকার মির্জাপুরে স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে থাকেন। পাঁচজন কর্মচারী রয়েছেন তার ক্যান্টিনে। প্রতিদিন সাড়ে তিন হাজার টাকা পারিশ্রমিক দিতে হয় তাদের। তার স্ত্রী ও ছেলেরা ক্যান্টিনে সময় দেন।  

বাকিতে খাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে অধিকাংশই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী দাবি করে শফিকুল ইসলাম বলেন, ছাত্রলীগের ছেলেরাই বেশি বাকি খেয়েছেন। সাধারণ শিক্ষার্থী অল্প কয়েকজন হতে পারেন। বিষয়টি আমি কিবরিয়া (রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি) ভাই ও রুনু ভাইকেও (ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক) জানিয়েছি।  

জানতে চাইলে রাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে শফি ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। বিষয়টি নিয়ে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলব।

এ বিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাইখুল ইসলাম মামুন জিয়াদ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

বাংলাদেশ সময়: ২০০২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।