ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

সম্পাদকীয়

বিশেষ সম্পাদকীয়

আসছে তরুণদের মন জয় করার নির্বাচন!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৭ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০১৭
আসছে তরুণদের মন জয় করার নির্বাচন! ভোটকেন্দ্রের লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেয়ার অপেক্ষায় তরুণ ভোটাররা ‍

দোরগোড়ায় কড়া নাড়ছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সময়-দেয়ালের ওপারেই ২০১৯ সাল।রাজনৈতিক দলগুলোও নড়েচড়ে বসেছে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ অনেক আগে থেকেই সক্রিয় মাঠের রাজনীতিতে।

এদিকটায় দূরদর্শী তারা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেখানেই যাচ্ছেন ভোট চাচ্ছেন।

তার সরকারের উন্নয়নমুখি বিপুল কর্মযজ্ঞের ফিরিস্তি তুলে ধরছেন। এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য তার দলকে আবার ক্ষমতায় আনার জন্য আর্জি জানাচ্ছেন ভোটারদের কাছে। তার প্রতিটি জনসভা যেন নির্বাচনী জনসভা।

আর আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ ও দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দল বিএনপি? তারাও বসে নেই। ভুল পথে হেঁটে হেঁটে ক্রমশ ক্ষীণস্বাস্থ্য আর হীনবল হয়ে পড়া দলটি এবার দেরিতে হলেও আড়মোড়া ভেঙে জেগে উঠেছে। রাজনীতির মাঠের এই রুগ্ন কুশীলব এবার নায়কের আসনটি পেতে মরিয়া। তৃণমূল পর্যায়ে নিজেদের ঢেলে সাজাতে চায় তারা। ৫০টিরও বেশি কমিটি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এরই মধ্যে সফর শুরু করেছে। উদ্দেশ্য বিভেদ-কোন্দল কমিয়ে ভাঙা ঘর ঠিক করা। শেষমেষ ২০১৯ সালে নির্বাচনী ট্রেনটি ধরা। ২০১৪ সালের ভুলটি এবার তারা আর করবে না। তারা বুঝেছে, বয়কটের রাজনীতি আঁকড়ে থাকলে পায়ের তলায় মাটি থাকবে না। না ধরলে ট্রেন চলে যাবে। গন্তব্যে পৌঁছানো হবে না আর।

আওয়ামী লীগ, বিএনপি আর জাতীয় পার্টি সবাই সিট বেল্ট বেঁধে প্রস্তুত। জোট গড়াও শুরু হয়ে গেছে। চুনোপুটি দলগুলোকেও জোটে ভেড়াচ্ছে তারা। সংখ্যায় শক্তিবুদ্ধি আর সংখ্যাতেই মাহাত্ম্য---আপাতত শো-ডাউনের জন্য হলেও এই নীতি এখন সচল।

কিন্তু ভোটার যারা তারা কি ভাবছে? আর ভোটারই এবার কারা? ভুললে চলবে না, আজকের বদলে যাওয়া বাংলাদেশে ভোটারের চেহারাও গেছে বদলে। ভোটারের মোট সংখ্যার একটা বড় অংশ এবার প্রযুক্তিবান্ধব। এরা ডিজিট্যাল ভোটার। বয়সে তরুণ, ভবিষ্যমুখি, টগবগে আর স্বাপ্নিক। গোটা দুনিয়াই এই ডিজিট্যাল প্রজন্মের আঙলের ডগায় ---অন দেয়ার ফিঙ্গার টিপস।  

২০১৯ সালে ভোটারসংখ্যায় তারুণ্যের কাফেলাটি হবে আরও দীর্ঘ। দলগুলোর জয়-পরাজয়ের আসল নিয়ামক হয়ে উঠবে এরাই---এই ‘টেকনো-স্যাভি’ তরুণরাই। এই ডিজিট্যাল ভোটারদের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট যাদের বাক্সে পড়বে তারাই আগামী মেয়াদে ৫ বছরের জন্য বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের হাল ধরবে। এরাই হবে নির্বাচনী ফলাফলের নির্ধারক ও নিয়ামক। ভোটারের সনাতনী সংজ্ঞাটাও এবার তাই আর হালে পানি পাবে না। অনলাইন মিডিয়ার নিত্যনতুন কমিউনিকেশন ম্যাজিক বদলে দিয়েছে সব। এমনকি অজপাড়াগাঁয়েও মানুষ চায় যখন ঘটনা তখন সংবাদ। দিনবদলের এই ক্ষণে ডিজিট্যাল মিডিয়াপ্রেমী তরুণ ভোটাররা কি ভজবে দলগুলোর সনাতনী, সেই পুরনো কাঁসুন্দিতে? নেতাদের ফাঁকা আর ফাঁপা বুলিতে? না, সে আশায় গুড়েবালি। দলগুলোও সেটা বুঝতে পেরেছে।  

তৃণমূলে ছড়িয়ে থাকা ভোটাররা, বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের ডিজিট্যাল মিডিয়াবান্ধব ভোটাররা,  নির্বাচন নিয়ে কি ভাবছেন, কি তাদের চাওয়া, কি তাদের অপছন্দ, কোন বাংলাদেশের স্বপ্নে বিভোর তারা?

এইসব প্রশ্নের জবাব খুঁজতে হবে দলগুলোকে। ডিজিট্যাল মিডিয়ার চোখ, বিশেষত অনলাইন মিডিয়ার চোখ সদা সতর্ক। তাই অতীতের মতো বাঁধা বুলি আউড়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হবার দিন শেষ। এখন তাই দলগুলোকে হাঁটতে হবে নতুন পথে। নতুন যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে।

সেইসঙ্গে একথাও মনে রাখতে হবে, পেছন দরজা দিয়ে আর ক্ষমতায় যাওয়া যাবে না। অগণতান্ত্রিক পথে ক্ষমতায় যাওয়া যাবে না। চলতে হবে সাংবিধানিক পথে। যে ব্যবস্থা সংবিধানে নেই, সে পথে চলতে যদি কেউ চায় তাহলে হালে পানি পাওয়া যাবে না। জোড়াতালির বিকল্প পথ, বিকল্প নির্বাচনী সরকারের অধীনে নির্বাচন করার আশাও তাই বৃথা। কোনো অদৃশ্য শক্তির আনুকল্য লাভের দুরাশাও বৃথা।

আর একটা কথা! মুক্তিযুদ্ধের স্পিরিটের বাইরে গিয়ে, যুদ্ধাপরাধীদের দুই বগলে নিয়ে যারা চলতে চায় তারাও বাস করছে বোকার স্বর্গে। তারুণ্য-উজ্জীবিত বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের সঙ্গে, মৌলবাদবাদী ও পশ্চাদপদ শক্তির সঙ্গে আঁতাতকারীদের নির্বাচনী ভবিষ্যৎ আর নেই। উগ্রতা, ধর্মান্ধতা, মৌলবাদ, হুজুগেপনা ও সাম্প্রদায়িকতার অন্ধ জিকির তুলে ফায়দা লোটার দিন আজ অবসিত। জ্বালাও-পোড়াও আর রক্তচক্ষু দেখানোর চেষ্টাও হবে চূড়ান্ত অপরিনামদর্শিতারই নামান্তর। এসবকে নর্দমায় ফেলে বাংলাদেশ এখন হাঁটছে এক উদার, ইতিবাচক ভবিষ্যতের দিকে। অতীতে যেসব রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠি নেতিবাচক উগ্র পথে, সন্ত্রাস-সহিংসতার পথে হেঁটেছিল তারা যেন একথা মনে রাখে।     

সামনের জাতীয় সংসদ নির্বাচন দলগুলোর জন্য হবে এক অগ্নিপরীক্ষা বা এসিড টেস্ট। দলগুলো যেন একথাটি মাথায় রাখে, তরুণ ভোটাররাই, অনলাইন বান্ধব, মুক্তমনা তরুণ প্রজন্মের ভোটাররাই হয়ে উঠবে নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের প্রধান নিয়ামক। সামনের নির্বাচনটা তারুণ্যের মন জয় করার নির্বাচন।

দেখা যাক, এ বিষয়ে নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দলগুলো কে কতোটা রাখতে পারে। তারা নিজেদের কতটুকু প্রস্তুত করে তুলতে পারে। হাতে সময় খুব কম। এভরি মিনিট কাউন্টস!

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৬ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০১৭
জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।