ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

সম্পাদকীয়

বিশেষ সম্পাদকীয়

খালেদা জিয়ার এই সিদ্ধান্ত ইতিবাচক

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১৬
খালেদা জিয়ার এই সিদ্ধান্ত ইতিবাচক

১৫ আগস্ট। স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচে কলঙ্কময় দিন।

ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে নিজ বাসভবনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পরিবার-পরিজনসহ নৃশংসভাবে খুন হন একদল কাপুরুষের হাতে। শিশু রাসেলকেও ছাড় দেয়নি খুনি হায়েনার দল। বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলাদেশের স্থপতিই ছিলেন না, ছিলেন বাঙ্গালি জাতির তিন হাজার বছরের ইতিহাসে সবচে বড় মহানায়ক ও ত্রাতা। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি। তাঁর ডাকে বাঙ্গালি ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মুক্তির মহাসমরে। ৩০ লাখ মানুষের প্রাণ বিসর্জন আর দু লক্ষাধিক নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে বাঙ্গালি পেয়েছিল স্বাধীনতা। অভ্যুদয় হয়েছিল বাংলাদেশ নামের এক নবীন রাষ্ট্রের; যে রাষ্ট্রটি আজ নানা দিক থেকে সমগ্র দুনিয়াকে পথ দেখাচ্ছে। হয়ে উঠেছে ইমার্জিং টাইগার বা উদীয়মান ব্যাঘ্র। নিম্ন মধ্য আয়ের দেশ।  

কিন্তু দু:খজনক ব্যাপার হলো, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার করাল দিনটিতেই বিএনপিনেত্রী জন্মদিন উদযাপন শুরু করলেন। অথচ আগে তিনি অন্য এক তারিখে জন্মদিন উদযাপন করতেন—এসত্য কারো অজানা নয়। ১৫ আগস্টে হঠাৎই ঘটা করে জন্মদিন উদযাপনের এই সিদ্ধান্তটি ছিল বিএনপির রাজনৈতিক প্রতিহিংসারই পরিচায়ক। এমন বিয়োগবিধুর একটি দিনে খালেদা জিয়ার জন্মদিন উদযাপনে সুবিবেচনা, ভব্যতা ও রুচির প্রকাশ ঘটেনি। এটি এক ধরনের নিষ্ঠুর আচরণেরও বহির্প্রকাশ।

যারা খালেদা জিয়াকে এমন একটি অভব্য পরামর্শ দিয়েছিলেন তারা নিজেদের মানসিক নীচতা ও দীনতাকেই প্রকট করেছিলেন। খালেদা জিয়াও তার পরামর্শকদের এহেন কাণ্ডজ্ঞানহীন পরামর্শকে কেন যে আমলে নিলেন! সে-ও এক বিস্ময়ই বটে! দেশে দেশে যুগে যুগে এমন কুপরামর্শক ঘিরে থাকে ক্ষমতাবানদের। কথায় বলে, ‘রাজা যতো বলে, পারিষদ শতগুণ’। এরাও তেমনই পারিষদনামের কলঙ্ক। এরা আসলে সুসময়ের মাছি বা সুযোগসন্ধানী চাটুকারের দল। এরা মিত্ররূপে ক্ষমতাবানের চারপাশে গুন্‌গুন করে বেড়ায়। তাই এদের মিত্রতাকে বলা হয়,  ‘ভ্রামরী মিত্রতা’।

স্বাধীন বাংলাদেশ একটি বৃহৎ পরিবারের মতো। এই বৃহৎ পরিবারের অংশ আমরা সবাই। বিএনপিও। কোনো পরিবারে কোনো বিয়োগান্তক দিনে বিয়ে-শাদি আনন্দ উদযাপন করা থেকে বিরত থাকাই রীতি। এক্ষেত্রে বিয়ে বা আনন্দ উৎসবেরও দিনক্ষণ পেছানো হয়। এটাই সামাজিক শোভনতা। মৃতের বাড়ির পাশে কোনো প্রতিবেশী কখনো আনন্দের বাজনা বাজায় না। এটা যুগ যুগ ধরে মান্য করা হয়। কিন্তু খালেদা জিয়া হাজার বছরের এই ভব্য-শোভন রীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সেটাই করে গেছেন পুরো এক যুগ। খালেদা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার দিনটিকেই জন্মদিন উদযাপনের জন্য বেছে নেওয়ায় জাতি স্তম্ভিত ও মর্মাহত হল। প্রতিবাদ উচ্চারিত হলো বিভিন্ন মহল থেকে। কিন্তু খালেদা তার সিদ্ধান্তে অনড়ই থাকলেন। জন্মদিন উদযাপনের হৃদয়হীন চর্চা চালিয়ে গেলেন।

এবার ঘটল ব্যতিক্রম! দেরিতে হলেও কুপরামর্শকদের কুপরামর্শের ফাঁদ থেকে বেরিয়ে এলেন খালেদা জিয়া।
                                       খালেদার ‘জন্মদিন’ উদযাপনের পুরনো ছবি
খালেদা তার কথিত ‘জন্মদিন’ উদযাপন করা থেকে বিরত থাকছেন এবার। তিনি এবার আর কেক কাটবেন না। তার এই সিদ্ধান্তটি বড় এক ইতিবাচক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। একইসঙ্গে তা শুভবোধের পথে যাত্রাশুরুরও ইঙ্গিত। এমন একটি সিদ্ধান্ত তিনি আরো আগেই নিতে পারতেন। তাহলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বৈরিতার, রেষারেষির এতোটা বাড়বাড়ন্ত হতো না। দুটি বড় দলের মধ্যে আলাপ আলোচনা পথও পুরোপুরি বন্ধ হতো না। তবুও ‘বেটার লেট দ্যান নেভার’।

বিএনপি এবার আরও একটি ইতিবাচক কাজ করতে পারে। আর সেটা হলো বঙ্গবন্ধুকে জাতির জনক হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করে নেওয়া। বাঙ্গালি জাতির এই মহান ত্রাতার নামটি হেলাফেলায় উচ্চারণ না করে নামের সঙ্গে ‘বঙ্গবন্ধু’ ও ‘জাতির পিতা’ শব্দটি উচ্চারণ করা বা লেখা। বঙ্গবন্ধুকে কেবল ‘শেখ মুজিব’ বলাটা কোনোমতেই সুরুচির পরিচায়ক নয়। বিএনপির মনে রাখা উচিত বঙ্গবন্ধু কোনো দলের নয়, সমগ্র দেশের---সমগ্র বাঙ্গালি জাতির চির গৌরবের অধিষ্ঠাতা। বিএনপি যদি এই উদারতাটুকু দেখায় তবে তাতে তাদের মানসিক উচ্চতাই প্রকাশ পাবে।

খালেদা জিয়ার এই ইতিবাচক সিদ্ধান্তটিকে আমরা সাধুবাদ জানাই। আমরা মনে করি, বৈরিতার পথ থেকে সরে আসার ক্ষেত্রে এটি বড় ভূমিকা পালন করবে। এই সিদ্ধান্তের সুফল যেন রাজনীতিতে সুবাতাস বয়ে আনে সেটাই আমাদের সবার কামনা।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১৬
জেএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।