ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

সম্পাদকীয়

বিশেষ সম্পাদকীয়

জয়ের পরও সু চির সামনে কঠিন পথ!

... | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৫
জয়ের পরও সু চির সামনে কঠিন পথ! ছবি: সংগৃহীত

মায়ানমারের নির্বাচনে অং সান সু চির দল বিপুল জয় পেয়েছে। সমরজান্তার নানা টালবাহানা, বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে অবশেষে দেশব্যাপী এমন একটি অভূতপূর্ব শান্তিপূর্ণ, অহিংস, অবাধ, নিরপেক্ষ ও বিপুল অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন যে হতে পেরেছে, সেটা এক বড় ঘটনা।



সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) জন্য তো বটেই, সেইসঙ্গে দেশটির গণতন্ত্র-বঞ্চিত, দমনপীড়নক্লিষ্ট জনগণের জন্য বড় আশাবাদের নির্বাচন এটি।
 
এবারের নির্বাচনটা নানাভাবে ব্যতিক্রমী। আগের ‘স্টিমরোলার-নীতি’ বা দমনপীড়নের ক্রনিক মানসিকতা থেকে সরে-আসা-নীতির প্রতিফলনও দেখা গেছে এতে। এটা সম্ভব হয়েছে মূলত একুশ শতকের বৈশ্বিক বাস্তবতার কারণে।

বাইরের চাপ ও গণতন্ত্রকামী মানুষের দীর্ঘ ত্যাগ-তিতিক্ষারও ফল এটি। মায়ানমারের ইতিহাসে এটাই প্রথম উন্মুক্ত-অবাধ-পক্ষপাতহীন ও আগাগোড়া অহিংস নির্বাচন।

শতকরা ৮০ শতাংশের বেশি ভোটারের উপস্থিতিই বলে দেয় গণতন্ত্রের জন্য, একটা ইতিবাচক পালাবর্তনের জন্য মানুষ কতোটা মুখিয়ে ছিল।  
 
অতীতের জোর-জবরদস্তির মানসিকতা থেকে সমরজান্তা যে অনেকখানি সরে এসেছে, এবার সেটা স্পষ্ট হয়েছে তাদের আচরণে। সেনা-সমর্থিত দল ইউএসডিপি(USDP)-র জ্যেষ্ঠ প্রভাবশালী নেতা কিই উইনের (Kyi Win) বক্তব্যেও তার স্পষ্ট প্রতিধ্বনি মেলে: ‘আমাদের দল ইউএসডিপি পুরোপুরি গো-হারা হেরেছে। জিতেছে এনএলডি (NLD)। অং সান সু চিকে এখন দায়িত্ব নিতে হবে। তাকে অভিনন্দন জানাই।
 
প্রেসিডেন্ট থিন সিনও (Thein Sein) সু চিকে অভিনন্দন জানাতে প্রস্তুত। সব মিলিয়ে গণতন্ত্র বিকাশের পথে সবচেয়ে বড় সুযোগটি এই নির্বাচন। গণতন্ত্রের চর্চা ও সর্বক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশের পথে এই নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ এক যাত্রাবিন্দু ।
 
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং যুক্তরাষ্ট্রের কার্টার সেন্টারের মতো পর্যবেক্ষক প্রতিষ্ঠানগুলোও বলেছে এই নির্বাচন শান্তিপূর্ণ, পক্ষপাতহীন, বিশ্বাসযোগ্য ও স্বচ্ছ হয়েছে। ইইউ মিশন এবারের নির্বাচনকে ’৯৫ শতাংশ ইতিবাচক’ বলেছে।

এসত্ত্বেও মায়ানমারে গণতন্ত্র বিকাশের পথ এতোটা সহজ হবে না। সংবিধানই গণতন্ত্রের পূর্ণ বিকাশের পথে কাঁটা বিছিয়ে রেখেছে। এই সংবিধানটি রচনা করেছে সমরজান্তা।

অন্যায় জেনেও আপসটা করেছিলেন সু চি নিজেই। এর খেসারত তাকে ও তার দলকে দিতে হবে। জয়টা আহামরি হলেও সু চি কিন্তু প্রেসিডেন্ট পদে বসতে পারবেন না।

সংবিধানে সে-পথ রুদ্ধ। সংবিধানে সংযোজিত একটি ধারায় বলা হয়েছে, যদি কারো ছেলে-মেয়েরা বিদেশি নাগরিক হয়, তাহলে তিনি প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না। সু চির দুই পুত্রই ব্রিটিশ নাগরিক।

প্রেসিডেন্ট পদে বসতে তিনি পারুন বা না পারুন সুচি অবশ্য বলছেন,: “I’ll make all the decisions...প্রেসিডেন্ট পদে যেই বসুক তাকে তো আমিই বসাব’’---এটাও কিন্তু কথার কথা! 

দেশ পরিচালনার ক্ষমতা তিনি খুব একটা পাবেন না। সংবিধানে সংস্কার না আনা পর্যন্ত সে আশায় গুড়েবালি। এমন একটি অন্যায় ধারার সংযোজন তো সমরজান্তা এমনি এমনি করেনি!

তাকে প্রেসিডেন্ট পদে বসতে না দেবার অন্যায় ধারাটি কিন্তু তিনি নিজেই মেনে নিয়ে নিয়েছেন। এ কারণে তার সরকারের হাত-পা বাঁধা অবস্থাটি তাকে দেখে যেতে হবে।

আরেকটা আপোস করেছিলেন সু চি, নতুন সংবিধানে সামরিক বাহিনীর জন্য মোট আসনের ২৫ শতাংশ সংরক্ষণ ও মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদ সেনাবাহিনীর জন্য রাখার বিধান রয়েছে।

অর্থাৎ ক্ষমতায় গেলেও সুচির দলকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায়ই সাঁতার কাটতে হবে। তবু মায়ানমারের কঠিন সেনানিগড়ের মধ্যে বসে এতটুকু আপস তার করা ছাড়া উপায়ও হয়তো ছিল না। অন্তত গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরুটা করাটা তো সম্ভব হলো।

এখন দেখা যাক, সুচি ও তার দল কিভাবে অসাধ্য সাধন করে। গণতন্ত্রের বিকাশ, দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্র পরিচালনা, সংখ্যালঘু মুসলমানদের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া, দারিদ্র্য বিমোচন, জাতিগত সংঘাতকে সামাল দেওয়া এবং সবোর্পরি ব্যাপক সাংবিধানিক সংস্কারসহ নানা চ্যালেঞ্জ সামনে।

ব্যর্থ হলে গণতন্ত্রের পথ আগের চেয়েও  কঠিন হয়ে পড়বে। আর সফল হলে রচিত হবে উত্তরণ ও উন্নয়নের পথে এক সোপান। সু চি কি পারবেন?

বাংলাদেশ সময়: ০৮০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৫
জেএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।