ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

ইলিশ আহরণ, আয় বাড়ছে বরগুনার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের

জাহিদুল ইসলাম মেহেদী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০২২
ইলিশ আহরণ, আয় বাড়ছে বরগুনার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের

বরগুনা: প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষা, জাটকা রক্ষাসহ সরকারের নানা পদক্ষেপে সমুদ্রে বেড়েছে ইলিশসহ সব ধরনের মাছের উৎপাদন। সরকারের সুন্দর ব্যবস্থাপনার কারণে এরই মধ্যে ইলিশের পুরোনো ঐতিহ্য ফিরে এসেছে।

 

বাংলাদেশের দ্বিতীয় মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র বরগুনা জেলার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের হিসেব বলছে গত অর্থ বছরের তুলনায় এ অর্থ বছরে ইলিশের পরিমাণ বেড়েছে দ্বিগুণ। মা ইলিশ শিকারের ওপর অবরোধসহ সরকারের নানামুখী পদক্ষেপের কারণে ইলিশের উৎপাদন বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। মাছে-ভাতে বাঙালি যেন তার পুরোনো ঐতিহ্য ফিরে পেয়েছে। সে হিসেবে অবতরণ কেন্দ্রটির রাজস্ব আদায়ের পরিমাণও বেড়েছে প্রায় কোটি টাকা। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট সূত্রে এ খবর জানা গেছে।

বাংলাদেশের দ্বিতীয় মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র পাথরঘাটার ব্যবস্থাপক মির রাশেদুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ২০২০-২১ অর্থবছরে ১ হাজার ১৫২.৫৬ মেট্রিক টন ইলিশ ও ১ হাজার ৫৮১.৩৬ মেট্রিক টন সামুদ্রিক নানা প্রজাতির মাছ বিক্রি হয়েছে। আর ২০২১-২২ অর্থবছরে ২ হাজার ৪৭৫.৯৩ মেট্রিক টন ইলিশ ও ২ হাজার ৩২৪.২১ মেট্রিক টন সামুদ্রিক নানা প্রজাতির মাছ বিক্রি হয়েছে অবতরণ কেন্দ্রটিতে। বিক্রিত মাছের মূল্য থেকে শতকরা ১ টাকা ২৫ পয়সা হারে রাজস্ব আদায় করায় ২০২০-২১ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৯৯ লাখ ৯৬ হাজার ৬৫৬ টাকা। আর ২০২১-২২ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ কোটি ৯২ লাখ ৯২ হাজার ৩২৯ টাকা। তার এ হিসেব মতে এক বছরের ব্যবধানে বিক্রির উদ্দেশ্যে সমুদ্র ও নদী থেকে শুধু এ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ১ হাজার ৩২৩.৩৭ মেট্রিক টন ইলিশ বেশি এসেছে গত অর্থ বছরের থেকে। তার মতে সমুদ্রে মাছের উৎপাদন বাড়ায় জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ।

ঢলুয়া ইউনিয়নের বড় ঢলুয়া গ্রামের জেলে জামাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, সরকার তো বছরে তিনবার অবরোধ দেয়, গভীর সমুদ্রে নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন নদীতে অন্য জেলেদের সঙ্গে মাছ শিকার করি। এতে বিপুল পরিমাণ রূপালি ইলিশ পেয়েছি যা বিক্রি করে পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছি। মনে হয় এ বছর নদীতে ইলিশের পরিমাণ একটু বেড়েছে।

পাথরঘাটা অবতরণ কেন্দ্রের পাইকার জালাল মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, পদ্মা সেতু চালু হয়েছে প্রতিদিন মাছ পাঠাতে পারবো দেশের বিভিন্ন জায়গায়। এতে জেলে ও পাইকার উভয়ের আয় বাড়বে।

পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের মার্কেটিং অফিসার বিপ্লব কুমার সরকার বাংলানিউজকে জানান, জাটকা ও ইলিশ রক্ষায় সর্বসাধারণকে সম্পৃক্ত করার জন্য পাথরঘাটায় বিভিন্ন ধরনের জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
 
বাংলাদেশের মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বাংলানিউজকে জানান, ৪ থেকে ৫ বছর আগে সমুদ্রে ইলিশের আকাল শুরু হয়েছিল। সমুদ্র থেকে খালি হাতে ফিরতে হতো জেলেদের। সামান্য কিছু ইলিশ ধরা পড়লেও ইলিশের সাইজ ছিল ছোট। বর্তমানে বড় ইলিশে ভরে যায় অবতরণ কেন্দ্রটি। নিষেধাজ্ঞার বাইরে যতটুকু সময় পাওয়া যায় তাতে সমুদ্রে গিয়ে খালি হাতে ফিরতে হয় না জেলেদের। ট্রলার ভর্তি ইলিশ নিয়ে আসতে পারে জেলেরা। আর সে ইলিশের ৮০ শতাংশই বড় সাইজের।

তিনি আরও বলেন, দেশের জেলেরা সরকারের দেওয়া আইন মেনে চলছে। কিন্তু ভারতীয় জেলেরা এই সুযোগে বাংলাদেশ জলসীমায় প্রবেশ করে ইলিশ শিকার করে নেয়। ভারতীয় জেলেদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সরকারকে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।

পাথরঘাটা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু জানান, এখন প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ সঠিকভাবে ডিম ছাড়তে পারে। ডিম থেকে জাটকায় রূপান্তরিত ইলিশকে রক্ষায় পালন করা হয় জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ, ৬ মাসের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রক্ষা করা হয় জাটকা। জাটকা রক্ষা পাওয়ায় আজ ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে। এছাড়াও ৬৫ দিনের জন্য সমুদ্রে দেওয়া নিষেধাজ্ঞায় বাড়ে সব ধরনের মাছ। আগামী কয়েক বছরে সামুদ্রিক মাছের উৎপাদন আরও কয়েকগুন বাড়বে বলেও দাবি করেন তিনি।

বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বাংলানিউজকে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের সময়োপযোগী ও ফলপ্রসূ পদক্ষেপের কারণে ইলিশের উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে ইলিশ আহরণের পরিমাণ ২০০৮-০৯ অর্থ বছরের ২ দশমিক ৯৯ লাখ মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২০-২১ অর্থ বছরে ৫ দশমিক ৬৫ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। সারাবিশ্বের মোট উৎপাদিত ইলিশের ৮০ শতাংশের বেশি আহরিত হয় এ দেশের নদ-নদী থেকে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২০ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।