ঢাকা: প্রায় তিন দশক পর দেশের কুরিয়ার সার্ভিসগুলো আইনের আওতায় আসছে।
জানা গেছে, গত জানুয়ারিতে পোস্ট অফিস (সংশোধন) আইন-২০১০ পাশ হওয়ার পর এর আওতায় এখন ‘মেইলিং অপারের্টস ও কুরিয়ার সার্ভিস বিধিমালা’ প্রণয়নের কাজ চলছে।
বাংলাদেশ পোস্ট অফিসের মহাপরিচালক মোবাশ্বের-উর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘কুরিয়ার সার্ভিসগুলো কীভাবে কাজ করে সে ব্যাপারে তাদের এখনও কোনো জবাবদিহিতা ও বৈধতা তৈরি হয়নি। এ মুহূর্তে এদের কারোরই লাইসেন্স নেই। সম্প্রতি পোস্টাল অ্যাক্ট সংশোধনের মাধ্যমে এদের আইনের আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ’
১৯৮২ সালে প্রথমবারের মতো দেশে কুরিয়ার সার্ভিসের কার্যক্রম চালু হয়। ব্যবসায়িক লেনদেনের জন্য দেশের অভ্যন্তরে টাকা-পয়সা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পাঠানোই ছিল এর মূল লক্ষ্য। সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস প্রথম এ উদ্যোগ নেয়। যদিও তখন এর কোনো আইনি ভিত্তি ছিল না।
এর আগে বাংলাদেশ বিমানের মাধ্যমে টাকা-পয়সা স্থানান্তরের এক ধরনের ব্যবসায়িক লেনদেন চালু ছিল। কিন্তু বিমান কর্তৃপক্ষ তাদের এ সেবাটি বন্ধ করে দিলে পরে বিকল্প উদ্যোগ হিসেবে কুরিয়ার সার্ভিস চালু হয়।
নব্বই দশকের গোড়ার দিকে দেশে কুরিয়ার সার্ভিসের ব্যাপক প্রসার ঘটে এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ‘ট্রেড অর্ডিন্যান্স লাইসেন্স’র আওতায় এ প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করে।
তবে ২০০৪-’০৫ সালের দিকে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ পাঠানো, লেনদেন এবং এসব অর্থ বিভিন্ন অনৈতিক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মানি লন্ডারিং বিভাগও এ সময় কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে অর্থ পাঠানো ও লেনদেনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ‘এসএ পরিবহন’ নামের একটি কুরিয়ার সার্ভিসের টাকা লেনদেনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। তারা এ প্রতিষ্ঠানের ‘লাইসেন্স কেন বাতিল করা হবে না’ এই মর্মে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে কুরিয়ার সার্ভিস মালিকদের সংগঠন ‘কুরিয়ার সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (সিএসএবি)’ এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করে। বিষয়টি কিছুদিন ঝুলে থাকার পর হাইকোর্ট বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ দেয়। এ আদেশ এখনও বহাল রয়েছে।
সিএসএবি’র সভাপতি তানভীরুল হক কুরিয়ার সার্ভিসের ব্যাপারে বিদ্যমান আইনগত দুর্বলতার কথা স্বীকার করেন। তিনি কুরিয়ার সার্ভিসকে রাষ্ট্রীয় আইনের কাঠামোর ভেতরেই দেখতে চান।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘কুরিয়ার সার্ভিসের উদ্যোক্তারাও চান একটা আইনি কাঠামো থাকুক। যার আওতায় তাদের প্রতিষ্ঠানগুলো চলবে। ’
সংগঠনের পক্ষ থেকে এরই মধ্যেই সরকারকে এ ব্যাপারে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সংশোধিত পোস্টাল অ্যাক্টের আওতায় একটা আইনগত কাঠামো দাঁড় করানোর প্রক্রিয়া চলছে। ’
কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে অর্থ পাঠানোর বৈধতা নিয়ে তিনি বলেন, হাইকোর্ট কুরিয়ার সার্ভিসগুলোকে দেশের অভ্যন্তরে টাকা পরিবহনের অনুমতি দিয়েছে। পাশাপাশি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে।
স্থগিতাদেশটি দীর্ঘদিন বহাল থাকায় তা এখন রায়ে পরিণত হয়ে গেছে বলেও তিনি দাবি করেন।
উল্লেখ্য, দেশে এখন ৩৭ টি কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান কাজ করছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১০