ঢাকা, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

যে বাজারে প্রতিদিন মেলে ৫ হাজার মণ মাছ!

মুশফিক সৌরভ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২১
যে বাজারে প্রতিদিন মেলে ৫ হাজার মণ মাছ! মাছের আড়ত। ছবি: বাংলানিউজ

বরিশাল: বরিশালের উজিরপুরের হারতা বন্দরের মাছের বাজার। যাকে ঘিরে গত ২০ বছরে পাল্টেছে স্থানীয় আর্থ-সামাজিক অবস্থা।

উজিরপুরের পাশাপাশি আগৈলঝাড়া, বানারীপাড়া উপজেলাসহ আশপাশের এলাকার বেড়েছে মাছচাষিদের সংখ্যা। একইসঙ্গে এই খাতকে ঘিরে স্থানীয়ভাবে সৃষ্টি হয়েছে বহু কর্মসংস্থানেরও। এখন হারতা বাজার থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিনিয়ত যাচ্ছে রুই, কাতলা, সিলভার কার্প, গ্রাস কার্প, মিনার কার্প, পাঙ্গাশ, চিতল, তেলাপিয়া, সরপুঁটি, কৈ, শিং, চিংড়িসহ নানান প্রজাতির মাছ। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, মৌসুমের শুরু হয়েছে মাত্র। তাই এ সময়টাতে ২ থেকে ৩শত মণ মাছ বাজারে উঠলেও দুই সপ্তাহ পর অর্থাৎ আশ্বিনের শেষ থেকে মাঘ পর্যন্ত চার থেকে সাড়ে ৪ মাসে প্রতিদিন এ বাজারে ১৫-২০ গুণ বেশি মাছ আসবে।

স্থানীয় আড়তদারদের সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সায়েম বিশ্বাস বাংলানিউজকে বলেন, হারতার মাছের এ বাজারটি দীর্ঘ ২০ বছর আগে থেকে শুরু হয়েছে। এখন দক্ষিণাঞ্চলে বৃহত্তর মাছ বাজারের মধ্যে এটি একটি। এখানে রুই-কাতল, পাঙ্গাশ, বিভিন্ন ধরনের কার্প, ইলিশ, চিংড়িসহ দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছ প্রতিদিনই আসে। তিনি বলেন, উজিরপুর-বানারীপাড়া, আগৈলঝাড়াসহ গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার মৎস্যচাষিরা ওই বাজারে তাদের উৎপাদিত মাছ নিয়ে আসেন। সেই মাছ দেশের বিভিন্ন স্থানের শতাধিক ব্যবসায়ী ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় দিয়ে থাকেন। মৌসুমের শুরু মাত্র হয়েছে, এখন ৩শ মণের মতো মাছ আসছে। কিন্তু অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের দিকে প্রতিদিন ৩ থেকে ৫ হাজার মণ মাছ অর্থাৎ কোটি টাকার মাছ এই বাজারে বিক্রি হবে। তখন ২০ আড়তঘর ও ২০ বরফকলের এ বাজারের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে শুধুমাত্র ভিড় ঠেলে যেতেই আধা ঘণ্টার বেশি সময় লাগবে বলেও জানান এ বাজারের শ্রমিক আইয়ুব ও নিতাই মাঝি।
 
তারা বলেন, ১৫ দিন পরে এ বাজারে যেমন মাছের আমদানি বাড়বে তেমনি ক্রেতাদের সংখ্যাও বাড়বে। তখন বাজারের সময়ও বাড়বে অর্থাৎ এখন তো বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বাজার বসে অল্প সময় থাকে কিন্তু, যখন দিনব্যাপী চলবে। তখন বাজারের শতাধিক শ্রমিকের যেমন কর্মব্যস্ততা ও আয় বাড়বে, ঠিক তেমনি বাজার ঘিরে জেলে-দিনমজুর, ট্রলারচালক, থ্রি-হুইলার চালকসহ পরিবহন সংশ্লিষ্টদেরও রোজগার ভালো হবে। হারতার এ বাজারটি স্থানীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। একইসঙ্গে নতুন নতুন কর্মসংস্থানেরও যোগান দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বরফকলের মালিক মো. মাইনুল ইসলাম।

তিনি বলেন, একটি মাত্র বাজাররের কারণে উজিরপুরের সঙ্গে সঙ্গে বানারীপাড়া ও আগৈলঝাড়াতেও মাছ চাষের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে মানুষের। প্রতিনিয়ত ঘের ও চাষির সংখ্যা বাড়ছে। একইসঙ্গে ক্রেতাদের সংখ্যাও বাড়ছে, ফলে এসব স্তরে কর্মসংস্থানেরও হচ্ছে।

আরেক মৎস্যচাষি আয়নাল বাংলানিউজকে বলেন, গত সিজনে আমার পাশাপাশি অনেকের লোকসান হয়েছে। করোনার কারণে ভোক্তা পর্যায়ে মাছের চাহিদা কম থাকায় ক্রেতা সমাগমও কম ছিলো। তবে, এবারের চাষিসহ ব্যবসায়ীরা করোনাকালের সংকট পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারবেন বলে আশাবাদী ব্যবসায়ী মো. আনোয়ার হোসেন।  

তিনি বাংলানিউজ বলেন, বরিশালের মাছের স্বাদ ও মান ভালো হয়।  তাই এ অঞ্চলের মাছের চাহিদাও রয়েছে দেশজুড়ে। গত ১৭ তারিখ এক ট্রাক মাছ আমিই হারতা থেকে কক্সবাজারে পাঠিয়েছি।  এছাড়া প্রতিদিন পাইকারী এ বাজার থেকে মাছ কিনে বিভিন্ন জেলায় পাঠাচ্ছি। তবে, উজিরপুরের অভ্যন্তরীণ সড়কের অবস্থা বেহাল থাকায় বিপাকে পড়তে হয় চালকদের। ট্রাকচালক মামুন বাংলানিউজকে বলেন, খানাখন্দে ভরা হারতা থেকে আশোকাটি কিংবা সানুহার যেখানেই বেরোতে চাই না কেন, ১৮-২০ কিলোমিটার সড়কের বেহাল দশায় চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। অনেক জায়গায় তো গাড়ি আটকে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মাছ নিয়ে পড়ে থাকতে হয়। এতে বরফ গলে মাছ নষ্ট হওয়ার শঙ্কাও থাকে।

যদিও সবকিছুকে ছাপিয়ে খাল-নদী আর সড়ক বেষ্টিত হারতার মাছের বাজার স্থানীয়ভাবে বাজারজাতকরণ ব্যবস্থাকে সহজ করেছে।  ফলে দেশের অর্থনীতির জন্য ভূমিকা রাখছে বলে জানিয়েছেন বরিশালের জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান।

তিনি বলেন, যেকোনো পণ্যের সাপ্লাইচেইন ঠিক রাখতে হলে বাজারজাতকরণের সঠিক প্রক্রিয়া থাকতে হয়। যেটি হারতা বাজারে ধরে রাখতে পারলে দিনে দিনে স্থানীয়ভাবে মাছের উৎপাদন বাড়বে। ব্যবসার প্রসার ঘটার পাশাপাশি নতুন নতুন আরও কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে, ঘটবে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন। সবকিছু মিলিয়ে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়বে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২১
এমএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।