চট্টগ্রাম: বন্দরের নিরাপত্তা এলাকায় জেটি থেকে কোটি টাকা মূল্যের কাপড় উধাও হয়ে গেছে। আর এ ঘটনা আদালত পযন্ত গড়িয়েছে।
কাপড়ের মূল্য, ব্যবসায়িক ক্ষতি, ভ্যাট ও ট্যাক্সের মূল্য--এসবের ক্ষতিপূরণ দাবি তো আছেই, কেবল সুনাম ক্ষুন্ন হওয়ার ক্ষতিপূরণই দাবি করা হয়েছে ১০ কোটি টাকা।
মামলায় বন্দর কর্তৃপক্ষ, চেয়ারম্যান ছাড়াও আসামি করা হয়েছে নিরাপত্তা পরিচালক ও টার্মিনাল ম্যানেজারকে। সব মিলিয়ে মোট ১১ কোটি ৬৩ লাখ টাকার ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়েছে আদালতে।
তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, কাপড় নয়, কন্টেইনারে ছিল স্রেফ বালি। তাই তারাও আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিয়েছেন।
গত ২১ জুলাই চট্টগ্রামের তৃতীয় যুগ্ম জেলা জজ আদালতের বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে আগামী ১১ জানুয়ারি বিবাদীদের লিখিত জবাব দেওয়ার দিন ধার্য করেছেন।
উল্লেখ্য, সংঘবদ্ধ একটি চক্র বন্দরের জেটি থেকে পণ্য সরিয়ে নিচ্ছে বলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে। কিন্তু এ ব্যাপারে তেমন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা কখনোই নেওয়া হয় না।
এ ব্যাপারে ফোর এইচ ফ্যাশনস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গাওহার সিরাজ জামিল বলেন, ’রপ্তানি করে এরই মধ্যে আমরা সরকার থেকে রপ্তানি স্বর্ণপদক পেয়েছি। আগামীতেও পাবো বলে আশা করছি। সংঘবদ্ধ একটি চক্র বন্দরের জেটি থেকে পণ্য সরিয়ে নিচ্ছে অনেকদিন ধরে। ’ তার অভিযোগ, তারা যাতে আর পদক না পেতে পারেন সেজন্য একটি মহল এই চোর চক্রটিকে ব্যবহার করছে। আসল উদ্দেশ্য তাদের প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুন্ন করা। তিনি বলেন, ’প্রতি বছর আমরা প্রায় ৫০০ কোটি টাকার গার্মেন্টপণ্য রপ্তানি করি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। আবার আমদানিও করি। আমদানি-রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমাদের সুনামও অনেক। তাই তাই নিজেদের অস্তিত্ব রা ও ক্ষতিপূরণ আদায়ের স্বার্থে এই মামলা দায়ের করেছি। ’
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান কমোডর আর ইউ আহমেদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘কেউ ক্ষতিপূরণ চাইলেই আমরা তা দিয়ে দিতে পারি না। এই মামলার বিরুদ্ধে আমরা আইনি লড়াই চালিয়ে যাবো। তাছাড়া আমাদের নিজস্ব তদন্তে কন্টেইনারে কোনো কাপড় পাওয়া যায়নি। কারণ বিদেশ থেকে বালি ভরে এই কন্টেইনার বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়েছে। ’
প্রসঙ্গত, প্রায় ৯ হাজার কেজি কাপড় আমদানি করা হয় চীনের সিকো বন্দর থেকে। রপ্তানিকারক হলো হংকং-এর নাইস ডাইং লিমিটেড ও টেক্সউইংগো। চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার ভর্তি এই কাপড়ের কায়িক পরীক্ষা করেন চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের কর্মকর্তারা। ১৬ জুন কায়িক পরীক্ষা শেষে কাপড়ের নমুনাও জমা দেওয়া হয়। অথচ ২১ জুন বন্দর থেকে কাপড় সরবরাহ নিতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কাপড়ের বদলে রয়েছে স্রেফ বালুর বস্তা।
ঘটনা তদন্তের জন্য গঠিত চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কাস্টমস অ্যাপ্রেইজারের ওপর চাপ দিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। চট্টগ্রাম কমিশনার অব কাস্টমসের কাছে (রপ্তানি) লিখিত এক চিঠিতে কাস্টমস অ্যাপ্রেইজার মোহাম্মদ সাদেক অভিযোগ করেন, ’ টার্মিনাল ম্যানেজার ও বন্দর গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান আমাকে বিভিন্ন রকমের ভয়ভীতি ও ধমক দিয়ে উনাদের মতো জবাব আদায় করার চেষ্টা করেন। সকাল ১০টা থেকে ২টা পর্যন্ত দীর্ঘ চার ঘন্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করে তারা। তাদের আচরণে আমি মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছি। `
বাংলাদেশ সময় ১৮৫৮ঘণ্টা, শুক্রবার,১৭ সেপ্টেম্বর,২০১০