ঢাকা: টেলিফোন সন্ত্রাস ও হুমকি মোকাবিলায় পুলিশ সদর দপ্তরে বিশেষ সেল গঠনের দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে শুক্রবার দুপুরে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডান্ট্রিজ (এফবিসিসিআই) আয়োজিত মতবিনিময় সভায় উপস্থিত পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকার ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার একেএম শহীদুল হকের কাছে তারা এ দাবি জানান।
ব্যবসায়ী-নেতা প্রবীর কুমার সাহা বলেন, ‘প্রকাশ্যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুব ভাল মনে হলেও ভেতরে ভেতরে টেলিফোনের চাঁদাবাজিতে ব্যবসায়ীরা অতিষ্ঠ । তাই টেলিফোন সন্ত্রাস ও হুমকির ব্যাপারে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে পুলিশ সদর দপ্তরে বিশেষ সেল গঠন করা হোক।
জবাবে ডিএমপি কমিশনার নিজের মোবাইল নম্বর জানিয়ে বলেন, ‘সবার জন্য রাত-দিন আমার দরজা খোলা। টেলিফোনে হুমকি দিয়ে চাঁদা দাবি করলে তা সরাসরি আমাকে জানান। বাকি দায়িত্ব আমার। ’
এছাড়া রাজধানীর যানজট নিরসন, গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় রিক্সা বন্ধ, গাড়ি রিকুইজিশন না করা, ফুটপাত হকার মুক্ত করা ও বড় অঙ্কের টাকা লেনদেনকালে সাদা পোশাকের পুলিশ পাহারার দাবি জানান ব্যবসায়ী নেতারা।
এফবিসিসিআই পরিচালক হারুনুর রশীদ বলেন, ‘গুলশান থেকে মতিঝিল যেতে দুই ঘণ্টারও বেশি সময় লাগে। যানজটে জনজীবন স্থবির হয়ে আছে। পুরনো গাড়ি উচ্ছেদের অভিযানে ভাটা পড়ায় আবার শত শত ভাঙ্গাচোরা গাড়ি রাস্তায় নেমে যানজট সৃষ্টি করছে। ’
রাজধানীর ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিলে রিক্সা চলাচল বন্ধের দাবি জানান তিনি।
ব্যবসায়ী নেতা এসএম নূরুল হক বলেন, ‘রাজধানীর ফুটপাত থেকে হকার আর নির্মাণ সামগ্রী সরিয়ে হাঁটার সুযোগ করে দিন। ’
আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘রাজধানীর ফুটপাতগুলো অবৈধ দখলমুক্ত করে আপনারা দু’জন ‘ইতিহাস’ হয়ে থাকুন। আমরা পায়ে হেঁটে চলাফেরা করবো। তবু যানজটের ধকল পোহাতে চাই না। ’
জুয়েলারি ব্যবসায়ী সমিতির নেতা আনোয়ার হোসেন ও মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া বড় অঙ্কের নগদ অর্থ লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের আশপাশে সাদা পোশাকের পুলিশ মোতায়েন রাখার অনুরোধ জানান।
এফবিসিসিআই পরিচালক শফিক আহমেদ বলেন, ‘পুলিশের রিকুইজিশন অত্যাচারে আমরা দিশেহারা হয়ে পড়েছি। দরকার হলে আমরা পুলিশকে নিজেদের তহবিল থেকে কয়েকটা গাড়ি কিনে দেবো। তবু আমাদের গাড়িগুলো সকালে-বিকেলে রিকুইজিশন না করার ব্যবস্থা করুন। ’
অন্য ব্যবসায়ী নেতারাও গাড়ি রিকুইজিশনের ঝক্কি-ঝামেলা নিরসনে ডিএমপি কমিশনার ও আইজিপির হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।
জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘অন্যের ব্যক্তিগত চলন্ত গাড়ি থামিয়ে রিকুইজিশন করতে আমাদেরও খুব খারাপ লাগে। কিন্তু কী করবো ? রাজধানীর একেকটি থানার টহল টিমের জন্য ১০ টির বেশি গাড়ি লাগে। কিন্তু থানাগুলোতে কয়টা গাড়ি থাকে তা আপনারা ভালই জানেন। ’
তিনি আরও বলেন, গাড়ির সমস্যা দূর করতে বিভিন্ন ব্যাংক-প্রতিষ্ঠানে চিঠি লিখে সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে। আপনারা সহায়তা করুন। আমরা রিকুইজিশনের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসতে চাই। ’
আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর নেতাদের তোলা দাবি-দাওয়াকে গুরুত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেন, ‘এসব সমস্যা নিরসনে আমি ১০০ ভাগ আন্তরিক । ’
প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করা হচ্ছে কি না মনিটরিংয়ের জন্য তিন মাস পরপর মতবিনিময় সভা আয়োজনের প্রস্তাব দেন আইজিপি।
স্থানীয় সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১০