ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৮ রমজান ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

গৃহবধূ থেকে উদ্যোক্তা, মাশরুমে সফলতা

অপু দত্ত, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩২ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০২১
গৃহবধূ থেকে উদ্যোক্তা, মাশরুমে সফলতা

খাগড়াছড়ি: পুরোদমে সংসারি নিপু ত্রিপুরা। খাগড়াছড়ির জেলা সদরের ঠাকুরছড়া এলাকায় স্বামী সন্তান নিয়ে শান্তিতে যাচ্ছে দিন।

কিন্তু তারপরও নিজের ভেতরে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিল। সংসারের পাশাপাশি নিজে কিছু করার আগ্রহ থেকে শুরু করেন মাশরুম চাষ। আর এতেই সফলতার মুখ দেখছেন গৃহবধূ নিপু ত্রিপুরা।

খাগড়াছড়ি জেলা সদরের ঠাকুরছড়া এলাকার বাসন্দিা নিপু ত্রিপুরা। স্বামী যশু ত্রিপুরা একটি ব্যাংকের দারোয়ান হিসেবে কর্মরত। কিন্তু স্বামীর একক আয় দিয়ে দুই সন্তান নিয়ে সংসারে তেমন স্বচ্ছলতা ছিল না। দীর্ঘদিন ধরে নিজে কিছু করার বাসনা থাকলেও গেল করোনায় স্বপ্ন পূরণে উদ্যোগী হন। স্বামীর সঙ্গে পরামর্শ করে খাগড়াছড়ি/ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে মাশরুমের বীজ সংগ্রহ করেন। এর আগে কয়েকজনে চাষি থেকে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজ ঘরে মাশরুম চাষ শুরু করেন। প্রায় ২শ বীজ নিয়ে শুরু করলেও বর্তমানে তাঁর কাছে ২ হাজার মাশরুমের স্পন রয়েছে। প্রতিকেজি মাশুরুম বিক্রি করছেন ৪শ টাকায়। বছরজুড়ে হিসাব করলে গড়ে প্রতিমাসে তিনি ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার মাশরুম বিক্রি করেন। তবে মাশরুম উৎপাদনের এই সময়ে দুই মাসে প্রায় দেড় টন মাশরুম উৎপাদন হয় বলে জানান তিনি।  

‘নিপু মাশরুম ঘর’ এর ৪ ধরনের মাশরুম আছে। বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে পিও-২, পিও-১০, (সাদা জাতের) মাশরুম এবং পিএসসি (ছাই রঙের) এবং ঋষি মাশরুম চাষ করা হচ্ছে। সামান্য জায়গাতে মাশরুম চাষ করা যায়। খড়ের বেডে মাশরুম চাষ সাধারণত ৩ ধাপে সম্পন্ন হয়ে থাকে। ফসল উৎপাদনের জন্য চাষ ঘরে ২১ দিন থেকে ৪৫ দিনের মধ্যেই মাশরুম পাওয়া যায়। নিপু ত্রিপুরা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নিজে কিছু একটা করে স্বাবলম্বী হওয়ার ইচ্ছে। সবশেষ গেল বছর উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য কাজে নেমে গেলাম। মাশরুম লাভজনক চাষ। যত্ন নিলে সারা বছর কমবেশি ফলন পাওয়া যায়। তবে বীজের অভাবে অনেকেই মাশরুম চাষ করতে পারছে না। অধিকাংশ মানুষ বাইরে থেকে বীজ সংগ্রহ করে মাশরুম চাষ করছে। এখন আগ্রহীরা তার কাছে বীজ পাবে বলেও জানান তিনি। শুধু মাশরুম চাষ নয় বাড়ি পাশে একটি মুদি দোকানও চালান তিনি। এছাড়া স্থানীয় ৫ জন নারীকে বেতন দিয়ে যুক্ত করেছেন মাশুরুম চাষে। সেখানে কর্মরত বিনতা ত্রিপুরা ও আপন বালা ত্রিপুরা বলেন, বাইরে প্রতিদিন কাজ পেতাম না। অধিকাংশ সময় কাজ ছাড়া থাকতে হতো। কিন্তু এখানে পুরো মাসজুড়ে মাশরুম চাষে সময় দিচ্ছি। এতে যা পাই তা দিয়ে সংসার চলে যাচ্ছে। বর্তমানে দুই মাসে প্রায় দেড় টন মাশরুম উৎপাদন হয়। নিপু ত্রিপুরাকে দেখে অনেকে মাশরুম চাষে আগ্রহী হচ্ছে। তাদের অনেকে উৎপাদিত মাশরুমও যাচ্ছে বাজারে।

খাগড়াছড়ি কৃষি অধিদপ্তর হর্টিকালচার সেন্টারের উপ পরিচালক কিশোর কুমার মজুমদার বলেন, সবজি হিসেবে মানুষের মধ্যে মাশরুম এখন বেশ জনপ্রিয়। বাজারে এটির চাহিদাও অনেক। অনেকের মত নিপু ত্রিপুরা মাশরুম চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছে। সেখানে অন্য নারীরাও কাজ করছে। এটি অন্যদের জন্য অনুকরণীয় হবে। উনার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা থাকবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩০ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০২১
এডি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।