ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

কেমিক্যালপল্লির গতি নেই, অথচ ৭৮ হাজার টাকায় অস্থায়ী অফিস ভাড়ার প্রশ্ন

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০২১
কেমিক্যালপল্লির গতি নেই, অথচ ৭৮ হাজার টাকায় অস্থায়ী অফিস ভাড়ার প্রশ্ন

ঢাকা: ঢাকা শহরে কেমিক্যাল গোডাউনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। এই তো শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) পুরান ঢাকার আরমানিটোলা খেলার মাঠ সংলগ্ন একটি ছয়তলা ভবনের নিচতলায় কেমিক্যাল গোডাউনে আগুন লেগে নারীসহ চার জনের মৃত্যু হয়েছে।

এতে দগ্ধ ও ধোঁয়ার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অন্তত ২১ জন। এছাড়া নিতমতলী ও চুরিহাট্টার কেমিক্যাল গোডাউনের আগুনের ভয়াবহতা কারো অজানা নয়।

ফলে ঢাকা মহানগরীর বিশেষ করে পুরান ঢাকার কেমিক্যাল কারখানা ও গোডাউনগুলো একটি পরিবেশবান্ধব এবং অপেক্ষাকৃত কম জনবহুল স্থানে স্থানান্তর লক্ষ্যে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণসহ সব ধরনের অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত একটি কেমিক্যাল শিল্পপার্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।  

প্রস্তাবিত প্রকল্পে পরিকল্পিতভাবে প্রায় ২ হাজার ২শ ৯০টি শিল্প কারখানা গোডাউন স্থাপন করা হবে। ফলে ৫০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এলক্ষ্যে ২০১৮ সালে শুরু হয় বিসিক মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক উন্নয়ন প্রকল্প। প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ৬ শতাংশ। অথচ প্রকল্প এলাকায় পার্শ্ববর্তী ১টি শপিং কমপ্লেক্সে এই প্রজেক্টের কাজ দেখাশোনা করার জন্য মাসিক ৭৮ হাজার টাকায় অস্থায়ী অফিস ভাড়া নেওয়া হয়েছে। এই অস্থায়ী অফিসের কি দরকার তা বুঝে উঠতে পারেনি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। এত টাকা দিয়ে বিনা কারণে অফিস ভাড়ার বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে আইএমইডি।

আইএমইডি সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী ২৭ ফেব্রুয়ারি বিসিক কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক, সিরাজদিখান, উন্নয়ন প্রকল্পটির বাস্তবায়ন অগ্রগতি সরেজমিন মনিটরিং করেন। এ সময়ে সচিবের একান্ত সচিব মোহাম্মদ রফিকুল হক, সিরাজদিখান সহকারী কমিশনার (ভূমি) আহমেদ সাব্বির সাজ্জাদ, সচিবের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ফয়সাল কবীর, প্রকল্প পরিচালক সাইফুল আলমসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রকল্পের মোট অগ্রগতি মাত্র ৬ শতাংশ। শুরু থেকে প্রকল্পের আওতায় মোট ব্যয় হয়েছে ১০৩ কোটি ৭৭ লাখ ২৩ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ১ হাজার ৬১৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। জুলাই ২০১৮ সাল থেকে প্রকল্পের কাজ চলমান। জুন ২০২২ সালে প্রকল্পের মেয়াদ সম্পন্ন হবে। প্রকল্পের পূর্ত কাজের প্যাকেজ-১৭ হচ্ছে ভূমি অধিগ্রহণ। প্রকল্পের জন্য ৩০৮ দশমিক ৩৩ একর ভূমি অধিগ্রহণের কথা।  

প্রকল্প পরিচালক প্রকল্প পরিচালক সাইফুল আলম বলেন, জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ইতোমধ্যে অধিগ্রহণকৃত ভূমির মূল্য পরিশোধ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন থেকে প্রকল্প কর্তৃপক্ষকে ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর  জমির দখল বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।

তবে আইএমইডির সরেজমিন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, এত বিশাল প্রকল্প এলাকা প্রকল্প কর্তৃপক্ষ সঠিকভাবে বুঝে নিতে সক্ষম হয়েছে কিনা তা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তাছাড়া প্রকল্প এলাকায় প্রকল্পের তথ্য সম্বলিত কোনো সাইন বোর্ড পরিলক্ষিত হয়নি। এছাড়া প্রকল্প কর্তৃপক্ষ এবং সিরাজদিখান সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছ থেকে জানা যায় স্থানীয় কিছু লোক প্রকল্প এলাকার জমি থেকে মাটি কেটে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল যা উপজেলা ভূমি অফিসের হস্তক্ষেপে বন্ধ হয়েছে। কিন্তু এত বিশাল প্রকল্প এলাকা ঠিকমতো বুঝে নিয়ে তা সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণে প্রকল্প কর্তৃপক্ষের সুনির্দিষ্ট পাওয়া যায়নি।

আইএমইডি সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী বাংলানিউজকে বলেন, প্রস্তাবিত প্রকল্পটির বিশাল প্রকল্প এলাকা ৩০৮ দশমিক ৩৩ একর মাটি ভরাট করতে হবে যা এখনো শুরুই করা হয়নি। বর্ষা মৌসুমে মাটি ভরাটের কাজ করা সম্ভব হবে কিনা তাও অনিশ্চিত। ভূমি উন্নয়ন কাজ সঠিকভাবে করতে না পারলে প্রকল্পের অন্যান্য কাজ এগিয়ে নেওয়াও সম্ভব নয়। এই প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছিল অগ্নি দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়ানোর লক্ষ্যে। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতি হতাশাব্যঞ্জক। প্রকল্প পরিচালক জুন ২০২১ মাসে পিআরএল গেছেন। তার কাজের প্রতি আগ্রহ তেমন দেখা গেল না। প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে দ্রুত একজন পূর্ণকালীন প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ জরুরি।  

ভূমি উন্নয়নের কাজ ২০২১ সালের ৬ জুনে শেষ হওয়ার কথা। প্রকল্পের পূর্ত কাজের অন্যান্য প্যাকেজগুলোর কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারিত আছে ২০২১ সালের ৩০ জুন। আইএমইডি সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায় প্রকল্পটির ভূমি অধিগ্রহণ কাজ শেষ হয়েছে এবং ভূমি প্রকল্প কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে গত ২০২১ সালের ১৭ নভেম্বর। কিন্তু ভূমি উন্নয়ন ও অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ বাস্তবে শুরু হয়নি।

প্রকল্পের মূল কার্যক্রম ভূমি অধিগ্রহণ ও ভূমি উন্নয়ন, অভ্যন্তরীণ রাস্তা ও ড্রেন-কালভার্ট নির্মাণ, প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, পাম্প ড্রাইভার কোয়ার্টার নির্মাণ, ফায়ার ব্রিগেড স্টেশন নির্মাণ, গভীর নলকূপ স্থাপন; পানির সরবরাহ লাইন, ইলেকট্রিক লাইন স্থাপন, গ্যাস লাইন স্থাপন, জেটি নির্মাণ, সিইটিপি, ডাম্পিং ইয়ার্ড এবং ইনসিনারেটর স্থাপন ও ২টি মেইন গেট নির্মাণ। প্রকল্পের আওতায় ১টি ডাবল কেবিন পিকআপ এবং কিছু সংখ্যক কম্পিউটার কেনা ছাড়া কোনো অগ্রগতি নেই। এই কম্পিউটার রাখার জন্য ৭৮ হাজার টাকায় নেওয়া হয়েছে অস্থায়ী অফিস ভাড়া।

বাংলাদেশ সময়: ২০১২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০২১
এমআইএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।