ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

চালের বাজার স্থিতিশীল হয়েছে: কৃষিমন্ত্রী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০২১
চালের বাজার স্থিতিশীল হয়েছে: কৃষিমন্ত্রী

ঢাকা: চাল আমদানির ফলে চালের বাজার স্থিতিশীল অবস্থায় এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।

তিনি বলেন, এ বছর চাল, পেঁয়াজ ও আলু— এই তিনটির দাম বেশি ছিল।

সরকার দাম কমানো ও বাজার স্থিতিশীল রাখতে অনেকগুলো পদক্ষেপ নেয়। চালের দাম কমাতে আমদানি শুল্ক কমিয়ে ২৫ ভাগে নামিয়ে আনা হয়েছে। ফলে চালের বাজার স্থিতিশীল অবস্থায় এসেছে।

মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশ চাল, আলু ও পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধির কারণ উদঘাটনে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন’ বিষয়ক জাতীয় কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন কৃষিমন্ত্রী।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল আয়োজিত এ কর্মশালায় বাংলাদেশে চাল, আলু ও পেঁয়াজের প্রাপ্যতা ও দামের অস্থিরতা: একটি আন্তঃপ্রাতিষ্ঠানিক গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।

বিএআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে কৃষিসচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম, ইউজিভির উপাচার্য ও স্টাডি টিমের কোঅরডিনেটর অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম, বিএআরসির সদস্য পরিচালক ড. মোশাররফ উদ্দিন মোল্লা উপস্থিত ছিলেন।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, লাগাতার বন্যার কারণে আউশ ও আমনে চালের উৎপাদন কম হয়েছে। অন্যদিকে, সরকারিভাবে ধান চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়া ও সরকারি খাদ্যগুদামে পর্যাপ্ত মজুত না থাকায় মিলমালিক ও পাইকাররা সুযোগ নিয়েছে। বাজারের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এটি ভবিষ্যতে যাতে না হয় সেজন্য আগামী বোরো মৌসুমে ধান চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। চাল কিনে সরকারি মজুদ বাড়ানো হবে যাতে বাজার সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকে।

উৎপাদন বাড়াতে না পারলে কোনো পণ্যেরই বাজার স্থিতিশীল থাকবে না উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, চাল, আলু ও পেঁয়াজের উৎপাদন আরও বাড়াতে কার্যক্রম চলছে। চালের উৎপাদন বাড়াতে ব্রি-৮৭ ও বিনা-১৬ জাতের ধান চাষে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আর পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে রোডম্যাপ প্রণয়ন করা হয়েছে।

বিএআরসি উপস্থাপিত গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায়, চালের মূল্য বৃদ্ধির পেছনে মূল কারণ হলো: প্রায় সকল কৃষকই ধান কর্তনের প্রথম মাসের মধ্যে বাজারজাতযোগ্য উদ্বৃত্ত বিক্রি করে দেন, গত বোরো মৌসুমে ধান বিক্রির ধরনটি পরিবর্তিত হয়েছে। এ মৌসুমে কৃষকরা তাদের ধান মজুদ থেকে ধীরে ধীরে বিক্রি করেছেন। ব্যবসায়ী ও মিল মালিকরা করোনা পরিস্থিতিতে খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা করেছিলেন এবং মজুদ ধরে রেখেছিলেন।

আলুর মূল্য বৃদ্ধির পেছনে ভবিষ্যতে মূল্য বৃদ্ধির আশায় কৃষক ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে আলুর মজুদ এবং হিমাগার থেকে আলুর কম সরবরাহ। হিমাগারে মজুদকৃত আলুর রশিদ পুনঃপুন হস্তান্তর। পার্শ্ববর্তী কয়েকটি দেশে আলু রপ্তানি। মৌসুমি ব্যবসায়ী কর্তৃক আলুর বিপুল মজুত এবং কৃত্রিম সংকট তৈরি। বর্ষা মৌসুমের ব্যাপ্তি দীর্ঘতর হওয়ায় সবজির উৎপাদন হ্রাস এবং আলুর চাহিদা বৃদ্ধি। হিমাগারে আলুর সংরক্ষণের পরিমাণ কম। টিসিবি কর্তৃক আলুর বিতরণ অপ্রতুল প্রভৃতি কারণ রয়েছে।

পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধির পিছনে দেশীয় অসাধু বাণিজ্য সিন্ডিকেট দ্বারা বাজারে কারসাজি এবং ভারতীয় রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা অথবা অতিমাত্রায় ভাতের ওপর পেঁয়াজে আমদানির জন্য নির্ভরতা অন্যতম কারণ।

গবেষণায় চাল, আলু ও পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির উত্তরণের সুপারিশ করা হয়। এতে বলা হয়: ধান/চাল সংগ্রহ পদ্ধতির আধুনিকায়ন করা; কৃষকের কাছ থেকে সরাসরিভাবে ধান সংগ্রহ করা এবং মিলারদের মাধ্যমে তা চালে পরিণত করা; চিকন ও মোটা দানার চালের জন্য সরকারের পৃথক ন্যূনতম সহায়তা মূল্য (এমএসপি) ঘোষণা করা; ন্যূনতম ২৫ লাখ টন চাল সংগ্রহ করা এবং মোট উৎপাদনের প্রায় ১০ শতাংশ সংগ্রহ করার সক্ষমতা অর্জন করা, যাতে করে সরকার বাজারে কার্যকরভাবে হস্তক্ষেপ করতে পারে।

আলুর ক্ষেত্রে সুপারিশ হলো: হিমাগারে আলুর সংরক্ষণ ও আবমুক্তকরণ সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারির মধ্যে রাখা। আলুর বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টিকারীদের শনাক্তকরণ এবং তাদের বিরুদ্বে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা; সরকার কর্তৃক আলুর উৎপাদন, চাহিদা, সরবরাহ ও মূল্য সংক্রান্ত তথ্য সঠিকভাবে উপস্থাপন করা এবং তা হালনাগাদ রাখা এবং সরকারিভাবে আলুর মজুদ গড়ে তোলার জন্য সুপারিশ করা হয়।

পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি রোধ করার জন্য সংকটকালীন সময়ে পেঁয়াজ আমদানির জন্য দ্রুত একাধিক রপ্তানিকারক মুখোমুখি করা। অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে আমদানি নির্ভরতা হ্রাস করা। কৃষিমূল্য কমিশন গঠনের মাধ্যমে সারা বছর বাজারে পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ ও তদারকি করা এবং বাজারে পেঁয়াজের দাম হঠাৎ বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের জন্য অভ্যন্তরীণ সরবরাহ ও মজুতের অগ্রিম ব্যবস্থাপনা এবং সুচিন্তিত পরিকল্পনার সুপারিশ করা হয়েছে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক বিএআরসির বাস্তবায়নে ও কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশন (কেজিএফ) অর্থায়নে চাল, আলু ও পেঁয়াজ ইত্যাদির দাম বৃদ্ধির কারণ উদঘাটনের জন্য তিনটি স্টাডি টিমের মাধ্যমে জরিপ পরিচালনা করা হয়। ধান/চাল বিষয়ক গবেষণার ক্ষেত্রে নওগাঁ, শেরপুর, কুমিল্লা ও ঢাকা জেলা, আলুর ক্ষেত্রে মুন্সিগঞ্জ, বগুড়া, রংপুর ও ঢাকা জেলা এবং পেঁয়াজের ক্ষেত্রে ফরিদপুর, নাটোর, পাবনা ও ঢাকা জেলায় জরিপ পরিচালনা করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০২১
জিসিজি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।