ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

জমজমাট সুন্দরবনের দুবলার চরের শুঁটকি পল্লী

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০২০
জমজমাট সুন্দরবনের দুবলার চরের শুঁটকি পল্লী

সুন্দরবনের দুবলার চর থেকে ফিরে: সফেদ তরঙ্গমালা আছড়ে পড়ছে অবিরত। ধু-ধু বালুকাময় সৈকত মারিয়ে জেলেরা সমুদ্র থেকে মাছ নিয়ে ফিরছে শুঁটকি পল্লীতে।

লইট্টা, ছুরি, চিংড়ি, রূপচাঁদা, খলিসা, ইছা, ভেদা, পোঁয়াসহ অন্তত একশ প্রজাতির শুঁটকি তৈরি করা হয় এ পল্লীতে।

সাগর থেকে মাছ ধরে জেলেদের ফিরে আসার দৃশ্য ও শুঁটকি তৈরি এবং বেচা বিক্রির দৃশ্য সত্যিই মনোলোভা ও উপভোগযোগ্য। বর্ণনাতীত এ অপার্থিব দৃশ্য সুন্দরবনের দুবলার চরের জেলে পল্লী ছাড়া আর কোথাও মেলা ভার!

বঙ্গোপসাগর উপকূলে দুবলারচর, আলোরকোল, নারকেল বাড়ীয়া, শেলারচর ও মেহেরআলীর চর নিয়ে সুন্দরবনের সর্ববৃহৎ সামুদ্রিক মাছ শুঁটকি পল্লী কেন্দ্র দুবলার অবস্থান। বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জে এ চরগুলো অবস্থিত।
চলতি শুঁটকি মৌসুমকে ঘিরে ভীষণ জমজমাট হয়ে উঠেছে সুন্দরবনের দুবলার চরের জেলে পল্লী। এখন পুরোদমে শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণ শুরু হয়েছে। সমুদ্র থেকে মাছ এনে শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করছেন হাজার হাজার জেলেরা।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখে গেছে, সুন্দরবনের দক্ষিণে অবস্থতি দুবলার চরের অস্থায়ী শুঁটকি পল্লীর ঘরগুলো তৈরি করা হয়েছে ছোন ও বাঁশ দিয়ে। সাগর থেকে ধরে আনা মাছ রোদে শুকিয়ে শুঁটকি উৎপাদনের ধুম পড়েছে এ পল্লীতে। বাঁশের মাঁচা করে ও পাটিতে খোলা আকাশের নিচে রোদে শুকিয়ে তৈরি করা হয় শুঁটকি। এখানে ভ্রমণে আসা পর্যটকরা ভীষণ মুগন্ধতা নিয়ে শুঁটকি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন নিজ নিজ গন্তব্যে।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আর এবার শুটকি খাত থেকে রাজস্ব আদায়ের টার্গেট ধরা হয়েছে ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা। গত ২০১৮-১৯ শুঁটকি আহরণ মৌসুমে জেলেদের আহরিত ৪১ হাজর ৫৪ কুইন্টাল শুঁটকি থেকে বনবিভাগ ২ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ও ২০১৯-২০ মৌসুমে ৪৪ হাজর ৭১৩ কুইন্টাল শুঁটকি থেকে বনবিভাগ ৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে।

জেলে পল্লীর ব্যবসায়ী ও জেলেরা জানান, দুবলার চরের প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয় রাসমেল। আর সে সময় বেশি শুঁটকি বিক্রি হয়। কিন্তু এবার করোনার কারণে শুধু রাস উৎসব হয়েছে। মেলা না হওয়ায় লোক সমাগম কম হয়েছে। এতে শুঁটকি বিক্রিও কমে গেছে।

মাছ শুকানোর সময় কথা হয় শুঁটকি তৈরির কারিগর খান জাহান আলী নামের এক জেলের সাথে। তিনি জানান, কার্তিক মাসে এখানে আসেন। আর চৈত্র মাসে চলে যান। সাগর মোহনায় তারা মাছ শিকার করেন। তারপর তা রোদে শুকিয়ে শুঁটকি প্রক্রিয়া করা হয়।
শুঁটকি ব্যবসায়ী দেবু বিশ্বাস বলেন, দুবলার চরের শুটকি মাছ চট্টগ্রাম, সৈয়দপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। করোনার কারণে এবার শুঁটকির দাম কিছুটা কম। লইট্যা শুঁটকি পাইকারি এক মণ বিক্রি হয় ১১-১২ হাজার টাকা। বড় ছুরি মাছ ৩০-৩৫ হাজার, ছোটটা ৩৮ হাজার টাকা। রূপচাঁদা বড়টা ৮০ হাজার টাকা মণ। ছোটটা ৪০ হাজার। ইছা শুঁটকি বড়টা ৪৪ হাজার, ছোটটা ২৪ হাজার টাকা মণ।

তিনি জানান, প্রতিবছর নভেম্বর থেকে মার্চ পযর্ন্ত চলে এ অস্থায়ী পল্লীতে মাছ শুঁটকির কাজ। নির্ধারিত রাজস্ব দিয়ে অস্থায়ী শুঁটকি পল্লীতে অস্থায়ী ঘর করে সামুদ্রিক মাছ আহরণ করে।

শুঁটকি পরিবহন প্রতিষ্ঠান খান শফিউল্লাহ ট্রান্সপোর্টের ম্যানেজার কুতুব উদ্দিন মোল্লা বলেন, আমরা প্রতিবছর গড়ে ১০-১২ হাজার মন শুঁটকি পরিবহন করে থাকি। আমাদের মতো ৮টি প্রতিষ্ঠান দুবলার চর থেকে শুঁটকি পরিবহন করে।

তিনি জানান, প্রায় ১০ হাজার জেলে ও বহরদার এ ব্যবসার সাথে জড়িত।

শুঁটকি ব্যবসায়ী গোলাম মোস্তফা বলেন, সুন্দরবনের দুবলার চরের শুঁটকি পল্লী থেকে শুঁটকি নিয়ে সৈয়দপুর, রংপুর, তিস্তা ও চট্টগ্রামের মোকামে সরবরাহ করি। করোনার কারণে এবার শুঁটকির দাম অনেক কম। মোকামে মাছ পাঠিয়েছি তারা অনেক দাম কম বলছে।

বাংলাদেশ সময়: ১১১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০২০
এমআরএম/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।