ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

লাল-সবুজ রঙের তীব্র ঝালের ফসল ‘নাগা’

326 | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০২০
লাল-সবুজ রঙের তীব্র ঝালের ফসল ‘নাগা’ তীব্র ঝালসমৃদ্ধ ফসল ‘নাগা-মরিচ’। ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

মৌলভীবাজার: ‘কথায় বলে ঘ্রাণেই অর্ধভোজন। অর্থাৎ কোনো খাবারের গন্ধ আগেভাগে নাকে এসে পৌঁছুলেই নাকি অর্ধেক খাওয়া হয়ে যায়। এই কথাটি লাল-সবুজময় নাগা-মরিচের ক্ষেত্রে পুরোপুরি মিল। নাগা-মরিচপ্রেমীরা তাদের খাবারের প্লেটে নাগা-মরিচের এক একটু অংশ পেলেই এর ঘ্রাণসহযোগে আয়েশ করে পরিমাণ খেতে পারেন।’

এ ফসলটি তীব্র ঝাল হওয়া সত্ত্বেও এর চাহিদায় পুরোপুরি অটুট। একটুও কমতি নেই বাজারে।

টাটকা নাগা-মরিচের জন্য ভোজনপ্রেমীরা বাজারের এ-মাথা থেকে ও-মাথা অবধি ছুটে বেড়ান। তবে এবার করোনা ভাইরাসের কারণে কিছুটা লোকসানে পড়েছে ফসলটি।  

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার স্থানীয় কৃষক আসাদুর রহমান নাগা-মরিচ চাষ করে সফলতা লাভ করেছেন। শুধু এবারই নয়; কয়েক বছর ধরে চলছে তার নাগাতে সফলতা অর্জনের ধারাবাহিকতা। অন্যান্য ফসলের সঙ্গে তার নিজের জমিতে এটি ব্যাপাকভাবে উৎপাদন করে বাজারজাত করতে পেরে উপজেলার অনুকরণীয় কৃষক তিনি।

আসাদুরের জমিতে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, সিডলেস লেবু গাছের ফাঁকে ফাঁকে গাছের শাখাজুড়ে ধরে আছে সুগন্ধীময় নাগা। এটির শরীর এবরো-থেবরো অর্থাৎ অমসৃণ। সমানভাবে, সুন্দরভাবে সুগঠিত নয়। আমাদের অন্যান্য মরিচের দেহাংশ অপেক্ষাকৃত সমান হলেও নাগাতে তা নেই একেবারে। শ্রমিকরা একত্রিত হয়ে লাল-সবুজ নাগাগুলো বেছে চলেছেন।

চোখজুড়ানো সৌন্দর্য নিয়ে গাছে ঝুলছে নাগা-মরিচ।  ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন
নাগা-মরিচের লাভ নিয়ে কথা তুলতেই আসাদুরের মুখে প্রশান্তির মৃদু হাসি দেখা গেলো। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, চলতি বছর সব খরচ বাদ দিয়ে শুধু নাগাতে লাভ হয়েছে ছয় লাখ টাকা। ভাই, নাগা খুবই কঠিন ফসল। প্রচুর রিস্ক, প্রচুর খরচ আর প্রচুর যত্ন। তারপর সাফল্যের প্রশ্ন।

অভিজ্ঞ বুড়োদের মতো উপদেশের সরল-স্বীকারোক্তিমূলক রেশ তার। ভালো লাগলো, শেষ অবধি তিনি সফল হয়েছেন।

নাগা-মরিচ চাষে শুরুর গল্পটা জানতে চাইলে তিনি বলেন, নাগা-মরিচ প্রায় ১০-১১ বছর ধরে চাষ করছি। কারণ এটি লেবুগাছ ছাড়া হয় না। একবেলা রৌদ্র খেতে হয়; আরেকবেলা ঠাণ্ডা খেতে হয়। তানা হলে গাছের নানান ক্ষয়-ক্ষতি হয়। লেবুর ছায়ায় ছায়ায় সে টিকে থাকে।


ফসল সম্পর্কে কৃষক আসাদুর বলেন, এখন আমার ৩০ বিঘা জমিতে প্রায় ৫ হাজার চারা রয়েছে। লেবু গাছের ফাঁকে ফাঁকে। লেবু থেকে অনেক বেশি পরিমাণে যত্ন করতে হয় নাগাতে। নাগার সিজন হলো মার্চ থেকে জুন। তারপরও জুলাইতে কিছু কিছু থাকে। আমি এই নাগা গাছ ডিসেম্বরে রোপণ করি; মাচের দিকে এসে মালটা (পণ্য) ধরা দেয়। তিন মাসের পর থেকে ফসল পেতে থাকি।

বেচাকেনা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমার প্রতি পিস নাগা এক টাকাতে পাইকারিভাবে বিক্রি করি। এটির আমদানি কম হলে কখনো কখনো আবার দাম বেড়ে দুই থেকে পাঁচ টাকায় গিয়ে দাঁড়ায়। নাগা-মরিচে প্রায় চার লাখ টাকা খরচ করেছি। প্রায় ১০ লাখও ওপরে বেচা-বিক্রি হয়েছে।

ওই চাষি আরও বলেন, নাগা-মরিচ প্রতিদিন সকালে তুলে শ্রীমঙ্গল আড়তে দিয়ে আসি। শ্রীমঙ্গল থেকে ঢাকা, সিলেট প্রভৃতি স্থানে যায়। সবচেয়ে বেশি নাগামরিচ ঢাকার পার্টি বেশি নেয়।

২০১১ সাল থেকে এ ফসলটি চাষ শুরু করি। প্রথম প্রথম তো লাভের মুখ তেমন একটা দেখিনি। খরচ বেশি হয়েছে বা লাভ-খরচ প্রায় সমান সমান হয়েছে। ধীরে ধীরে আমার চোখ-মুখ খুলতে থাকে; বাড়তে থাকে নানান অভিজ্ঞতা। সেগুলোকে কাজে লাগিয়েই আজকের আমি বললে আসাদুর।
লাল এবং সবুজ দুটোই নাগারই চাহিদা বেশি।  ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপনখাবার সঙ্গে প্রায়শই নাগা-মরিচ খেতে পছন্দ করেন এমন একজন ভোজনপ্রেমী তনুশ্রী এটির গুণাগুণ সম্পর্কে বলেন, নাগা-মরিচ তীব্র ঝাল হলেও খেতে ভালো লাগে। কারণ এর ঘ্রাণটা এলেই দারুণ। অনেকটা খাঁটি ঘি এর ঘ্রাণের সঙ্গে মিল আছে। আবার আচারও বানিয়ে সংগ্রহ করে রাখা যায়।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অজিত কুমাল পাল বাংলানিউজকে বলেন, করোনা সংক্রমণে কারণে নাগা-মরিচের বাজারটা কিছুটা মন্দা গেছে। নয়তো অনেক বেশি দামে কৃষক আসাদুর পণ্য বিক্রি করতে পারতেন। তারপরও আশানুরূপ লভ্যাংশ পেয়েছেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ০৮১৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০২০
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।