ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

খুলনায় আবাসন ব্যবসায় ধস

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০২০
খুলনায় আবাসন ব্যবসায় ধস

খুলনা: করোনার প্রভাবে খুলনায় ধস নেমেছে আবাসন ব্যবসায়। থমকে গেছে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানগুলোর লেনদেন আর নতুন-পুরনো সব কর্মযজ্ঞ। গত বছরের তুলনায় এবার এ খাতে চাহিদা নেই বললেই চলে।

প্রায় চার মাস ধরে খুলনায় প্লট ও ফ্ল্যাট বিক্রি বন্ধ হওয়ায় চরম উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা। অস্বাভাবিক পরিস্থিতির কারণে প্লট-ফ্ল্যাটের কিস্তি পরিশোধ করছেন না ক্রেতারা।

ফলে টাকার সরবরাহ কমে যাওয়ায় অনেক ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। আবাসনশিল্পে যে আঘাত এসেছে, তার প্রভাব খুলনায় এ খাতের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট প্রায় ৩০ হাজার মানুষের ওপর পড়েছে।

আবাসন ব্যবসায়ীরা বলছেন, বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানেরই কাজ করোনা পরিস্থিতির কারণে বন্ধ হয়ে আছে। করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় সংশ্লিষ্ট কারিগরি জনবল ও শ্রমিক কাজে আসছে না। সব মিলিয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া কাজকর্ম আবার কবে নাগাদ চালু হতে পারে তাও ঠিকমতো বলা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন এ খাতের সঙ্গে জড়িতরা।

বিসমিল্লাহ্ প্রোপার্টিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, করোনার প্রভাব বাংলাদেশের সব সেক্টরেই কম বেশি পড়েছে। তবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আবাসন খাত। বেশিরভাগ মানুষ নিজের মাসিক আয় থেকে কিছুটা সঞ্চয় করে একটি ফ্ল্যাট বা প্লট কেনেন। এখন সেই মানুষগুলো আর বিনিয়োগ না করে নিজেদের সঞ্চয়ের টাকা ভেঙে খাচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, আবাসন খাত থেকে সরকার ট্যাক্স, ভ্যাট, রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ প্রচুর রাজস্ব পায়। এ খাত ক্ষতিগ্রস্ত হলে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অর্থনীতিতে গতি আনতে হলে অবশ্যই আবাসন খাতে গতি আনতে হবে।

বিশ্বাস প্রোপার্টিজের সিইও মো. আজগর বিশ্বাস তারা বাংলানিউজকে বলেন, করোনা ভাইরাসে আবাসন শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের কোনো আয় নেই। আয় নেই, তবুও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দিতে হচ্ছে। খাতজুড়ে করুণচিত্র। অনেকটা নীরবেই জিডিপিতে ভূমিকা রাখছে আবাসন শিল্প খাত। খুলনায় আমরা যারা ব্যবসা করছি তারা হাজার হাজার কোটি টাকা সরকারকে রাজস্ব দিচ্ছি। অথচ আমাদের এই করুণ পরিস্থিতিতে আমরা কোনো সহযোগিতা পাচ্ছি না। করোনা পরিস্থিতি এভাবে চলতে থাকলে আরও কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।  

তিনি আরও বলেন, অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসার পাশাপাশি আবাসন মানুষের একটি মৌলিক অধিকার। আবাসন ব্যবসায়ীরা এ খাতে যে পুঁজি বিনিয়োগ করেছেন, তা সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে করেছেন। এখানে সরকার কিংবা অন্য কারো কোনো উদ্যোগ নেই। বর্তমান পরিস্থিতিতে এ খাতকে টিকিয়ে রাখতে সরকারি সহযোগিতার প্রয়োজন।

থমকে গেছে আবাসন খাতের কাজজাহানাবাদ প্রোপার্টিজ লিমিটেডের পরিচালক মো. হান্নান বিশ্বাস বাংলানিউজকে বলেন, করোনা ভাইরাসের প্রভাবে আবাসন খাতে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। ফ্ল্যাট বিক্রি একদম নেই। নির্মাণ শ্রমিকরা কাজহীন অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন। যেসব দোকান থেকে মালামাল (রড, বালু, সিমেন্ট, ইট) নিয়েছি তারা এখন টাকার জন্য ভীষণ চাপ দিচ্ছে। কিন্তু আমরা কিস্তিতে যাদের কাছে ফ্ল্যাট বিক্রি করেছি তাদের চাপ দিতে পারছি না। মন ভালো থাকলে মানুষ ফ্ল্যাট কেনে। এখন মানুষ চিন্তা করছে বেঁচে থাকার। ফ্ল্যাট কেনা তাদের চিন্তায়ও নেই। আমাদের আয় না থাকলেও অফিস ভাড়া ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন খুব কষ্টে দিতে হচ্ছে। বেতন বললে ভুল হবে নাম মাত্র সম্মানী দেওয়া হচ্ছে। করোনার এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের নতুন কোনো চিন্তা করতে হবে।

রিহ্যাব খুলনার সভাপতি শেখ আবেদ আলী বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আবাসন খাত। কারণ এই খাতের সঙ্গে অনেকগুলো শিল্প জড়িত। খুলনায় প্লট ও ফ্ল্যাটের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত শতাধিক প্রতিষ্ঠান এখন ধুঁকছে। মুখ থুবড়ে পড়ে আছে এই খাতের অসংখ্য নির্মাণ স্থাপনা। আবাসন খাতে লাখ লাখ কোটি টাকার বিনিয়োগ করা হয়েছে। অথচ বর্তমানে কোন বিক্রি নেই। বরং অনেকে যারা বুকিং দিয়েছিলেন তারা অর্থ কষ্টে টাকা ফেরত নিচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, খুলনায় করোনা ভাইরাসের বড় প্রভাব পড়েছে আবাসন খাতে। এ সময় আমরা সরকারের সহযোগিতা না পেলে কোনোভাবেই টিকে থাকতে পারব না।

করোনা মহামারিতে ঝুঁকিতে থাকা আবাসন শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকারি সহায়তা বা প্রণোদনার দাবি জানান রিহ্যাব সভাপতি।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪০ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০২০
এমআরএম/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।