ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

সৈয়দপুরে বিদেশি ফল বাজারজাতে চিন্তিত কৃষক

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৬ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০২০
সৈয়দপুরে বিদেশি ফল বাজারজাতে চিন্তিত কৃষক

নীলফামারী: বিদেশি ফল ক্যান্টালপ এবং সেই সঙ্গে ব্লাক বক্স জাতের তরমুজ চাষাবাদ করে সকলের নজরে এসেছেন নীলফামারীর সৈয়দপুরের কামারপুকুরের আদর্শ কৃষক আহসান-উল-হক বাবু। করোনাকালে এসব বিদেশি ফল বাজারজাতকরণে সমস্যায় পড়েছেন এই কৃষক। ফলে পরিশ্রমটাই সার। অর্থ আয়ের পথ রুদ্ধ।

সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের অসুরখাই গ্রামের শিক্ষিত ও আদর্শ চাষি আহসান-উল-হক বাবু আধুনিক প্রযুক্তি ও অনলাইন ঘেটে চাষাবাদের কলা-কৌশল শিখে একের পর এক সাফল্য অর্জন করে চলেছেন। প্রথমে বায়োগ্যাস, তারপর বিলুপ্ত প্রায় কাঠারি, কালোজিরা ধানের জাত উদ্ভাবন, ড্রাগন, রঙিন ভুট্টা চাষ প্রভৃতি কাজে সফলতা দেখিয়েছেন তিনি।

 

তিনি এ বছর সাড়ে তিন বিঘা জমিতে উচ্চ ভিটামিন ও পটাশিয়াম সমৃদ্ধ বিদেশি ক্যান্টালপ ফলের পরীক্ষামূলক চাষ করেন। সেই সঙ্গে আরো সাড়ে তিন বিঘা জমিতে ব্লাক বক্স জাতের তরমুজের আবাদ করেছেন। সুষম সার ও যত্নে সেসব ফল তোলার উপযোগী হয়েছে। কিন্ত করোনাকালে বাজারজাতকরণ নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন।  

আধুনিক কৃষক আহসান -উল-হক বাবু কৃষকের কথা চিন্তা করেই মূলত ধান বীজ উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে কাজ করে আসছেন অনেকদিন ধরে। সজীব সীডস নামে একটি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে তার।

বীজ উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের পাশাপাশি তিনি দেশি-বিদেশি নিত্য নতুন  উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ বিভিন্ন ধরনের ফল, শাক-সবজি ও ফসলের পরীক্ষামূলক চাষাবাদ করে থাকেন। সেই সঙ্গে দেশীয় বিলুপ্তপ্রায় ধান, গম ও ভূট্টার (মানুষের খাবার উপযোগী) চাষাবাদ ফিরিয়ে আনতে নিরলসভাবে কাজ করছেন। তাতে তিনি সফলতা পেয়েছেন ইতিমধ্যে।  

আহসান-উল- হক বাবু জানান, তিনি ইন্টারনেট থেকে ক্যান্টালপ জাতের ফল চাষে উদ্ধদ্ধু হন। আর ব্লাক জাতের তরমুজ চাষের ধারনা পান মেহেরপুর জেলার কৃষকদের কাছ থেকে। পরবর্তীতে তিনি ক্যান্টালপ ও ব্লাক বক্স জাতের তরমুজের বীজ সংগ্রহ করেন। সংগৃহীত বীজ বপণ করেন ট্রেতে।  জমিতে সম্পূর্ণ সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে এবং আংশিক অর্গানিক সার প্রয়োগে চারা রোপণ করা হয়। আর ক্ষেতে নিড়ানো প্রতিরোধ ও সারের যথাযথ কার্যকারিতা রক্ষায় মালচিং পেপার ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে যথারীতি নিবিড় পরিচর্যার কারণে ৪০/৪৫ দিনের মধ্যে ক্ষেতে ক্যান্টালপ ও তরমুজ গাছে ফুল ও ফল আসা শুরু হয়।  

বাবু জানান, তার জমিতে ক্যান্টালপ ও তরমুজের চাষাবাদে সার, বীজ, জাংলা তৈরিসহ পরিচর্যায় প্রতি বিঘায় ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ব্যয় হয়। সেই হিসেবে তার সাত বিঘা জমিতে সাড়ে চার লাখ টাকারও বেশি খরচ হয়েছে। তিনি আশা করেছিলেন প্রতি কেজি ক্যান্টালপ ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা এবং তরমুজ ৩৫/৪০ টাকায় বিক্রি করতে পারবেন। তার ক্ষেতের ওই দুইটি ফল বিক্রি করে খরচ উঠার পরও কয়েক লাখ টাকা লাভের স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। কিন্তু বর্তমান করোনাকালে তিনি তার ক্ষেতের ক্যান্টালপ ও তরমুজ বাজারে নিতে পারছেন না। কারণ করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে মানুষ ঘরবন্দি অবস্থায় রয়েছেন।

তিনি এখন ক্ষেতের ক্যান্টালপ ও তরমুজ কিভাবে ও কোথায় বাজারজাত করবেন তা ভেবেচিন্তে কোনো কুলকিনারা পাচ্ছেন না। তিনি চাষাবাদকৃত ক্যান্টালপ ও তরমুজ বাজারজাতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতা কামনা করেন।

সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহিনা বেগমও ক্যান্টালপ ক্ষেত পরিদর্শন করে কৃষককে নানাভাবে উৎসাহ-উদ্দীপনা যুগিয়েছেন বলে জানা গেছে। তিনি জানান, ওই কৃষক তার জমিতে উৎপাদিত নতুন ফসল বাজারজাতকরণে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে লাভবান হবেন। দেশের সাধারণ মানুষও বিদেশি ক্যান্টালপ ফল খেতে পারবেন। এতে করে মানুষের ভিটামিন ও প্রোটিনের চাহিদা অনেকাংশে পূরণ করতে সক্ষম হবে। সেই সঙ্গে আমদানি নির্ভর এ ফল দেশে উৎপাদনে ফলে মানুষের চাহিদা মিটবে এবং বৈদেশিক মুদ্রাও সাশ্রয় হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৫ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০২০
এমএইচএম/এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।