ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

টিউশনির টাকায় গড়া সাইদুলের খামারে দরিদ্রদের কর্মসংস্থান

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১৯ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০২০
টিউশনির টাকায় গড়া সাইদুলের খামারে দরিদ্রদের কর্মসংস্থান সাইদুল হকের সঙ্গে কথা বলছেন বাংলানিউজ

লালমনিরহাট: চাকরির পেছনে না ছুটে টিউশনির জমানো টাকায় খামার গড়ে দরিদ্রদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ নিজেকে স্বাবলম্বী করেছেন সাইদুল হক (২৯)।

সাইদুল হক লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার কমলাবাড়ী ইউনিয়নের মুন্সিপাড়া এলাকার হাসমত আলীর ছেলে। তিনি ২০১৪ সালে রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতোকোত্তর অর্জন করেন।

স্থানীয়রা জানান, ছোট বেলা থেকে স্বাধীনচেতা ও জেদি স্বভাবের সাইদুল হক লেখাপড়ায় বেশ মনোযোগি ছিলেন। উচ্চ মাধ্যমিকে পড়া অবস্থায় টিউশনি শুরু করেন। স্নাতোকোত্তর শেষ করার আগেই গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের মাধ্যমে নিজেকে স্বাবলম্বী করতে খামার গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন সাইদুল। এ কারণে টিউশনির জমানো আয়ে বাবা ও বড় ভাইয়ের এক একর জমি বছরে ৪০ হাজার টাকায় লিজ নিয়ে শুরু করেন থাই পেয়ারা বাগান।

নিজের পেয়ারা বাগানে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দিয়ে গ্রামীণ দরিদ্রদের দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরিতে কাজ দেন তিনি। ওই পেয়ারা বাগানে সাথী ফসল হিসেবে আলু, পেঁপে, মরিচ, আদাসহ বিভিন্ন খণ্ডকালীন ফসল চাষ করা হয়। সাথী ফসলের আয়ে চলে বাগানের যাবতীয় খরচ। পেয়ারা বাগান থেকে খরচ বাদে প্রতি বছর লাখ টাকার উপরে আয় করেন সাইদুল। পাঁচ বছর পর পেয়ারা বাগানে ফলন কমে আসলে পেয়ারার ফাঁকে ফাঁকে লাগান বারি-১ জাতের মাল্টার চারা।

যশোর থেকে প্রতিটি ১০০ টাকা করে ১৫০টি মাল্টা গাছের চারা কিনে বাগান করেন। মাল্টা গাছ বড় হলে পেয়ারা গাছ কেটে ফেলেন। এখন মাল্টা বাগানের বয়স দেড় বছর। আর দেড় বছর পরে আসবে মাল্টা। প্রতিটি গাছে ৫-৬শ’ পিস মাল্টা ফলনের লক্ষ্যে চলছে পরিচর্যা। প্রতিটি গাছ থেকে ৪-৫ হাজার টাকা আয়ের স্বপ্নে শ্রমিকদের সঙ্গে নিজেও বাগানে কাজ করেন। মাল্টা বাগানে সাথী ফসল হিসেবে বর্তমানে রয়েছে ডায়মন্ড জাতের আলু। ৪০-৪৫ হাজার টাকা খরচে উৎপন্ন আলু আগামী সপ্তাহে বাজারজাত করা যাবে। ফলন ভালো হওয়ায় বর্তমান বাজার দরেও আলু থেকে লাখ টাকার উপরে আয়ের আশা করছেন তিনি।

মৎস্য খামার। এতেই শেষ নয়। তার ১০ জন দক্ষ শ্রমিকের পরম যত্নে দেখাশোনা করে একটি মৎস্য ও একটি ছাগলের খামার। ৫৫ শতাংশের পুকুরের মাছ থেকে বছরে লাখ টাকা আয় করেন সাঈদুল। নাম দিয়েছেন সায়মা মৎস্য খামার। চলতি মৌসুমে উপজেলা মৎস্য অফিসের দেওয়া তেলাপিয়া মাছের প্রদর্শনী রয়েছে তার মৎস্য খামারে। ২০টি ছাগলের জন্য রয়েছে উন্নতজাতের ঘাস ও কাঁঠাল গাছের পাতা। সবমিলে বহুমুখী এ খামার থেকে প্রতি বছর তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় করেন তিনি।

সাইদুলের বহুমুখী খামারের শ্রমিক রবিকান্ত, কল্পনাথ ও সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, খামারে কোন জিনিসের কিভাবে পরিচর্যা করতে হবে তা মালিক শিখিয়েছেন। যখন যা প্রয়োজন আমরা পরিচর্যা করি। এ খামারে দৈনিক কাজের নিশ্চয়তা রয়েছে। প্রতিদিন খামারে কাজ করে সংসারসহ ছেলে-মেয়েদের পড়াশুনার খরচ  চালাচ্ছেন তারা।

খামার মালিক তরুণ উদ্যোক্তা সাইদুল হক বাংলানিউজকে বলেন, লেখাপড়া শেখার মানে চাকরি করা নয়। চাকরি করে নিজের সংসার চালানো সম্ভব হলেও অন্যের সংসার চালানো সম্ভব নয়। সমাজের মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে তাদের সংসার চালানোর জন্যই খামার গড়ে তুলেছি। যেখানে নিজের পরিবারসহ আরও ১০টি পরিবার সচল রয়েছে। চাকরির পেছনে না ছুটে নিজে চাকরি দেওয়ার পথ সৃষ্টি করতে হবে। তবে বাংলাদেশ থেকে দারিদ্রতা মুক্তি পাবে। দেশে জনশক্তি আছে, নেই শুধু কর্মসংস্থান।

তিনি আরো বলেন, নিজের ইচ্ছা শক্তিকে পরীক্ষা করতে বাবার জমি হলেও লিজ নিয়ে বাগান করেছি। সাথী ফসলের আয়ে বাগান বড় হলেও পেয়ারার আয়ে করেছি মাছের ঘের। এখন মাল্টা বাগান দেখতে গ্রামের অনেকেই ভিড় করেন।

চাকরির পেছনে ছুটে যৌবন নষ্ট না করে অন্যকে চাকরি দেওয়ার গৌরব অর্জনে খামারি বা উদ্যোক্তা হতে দেশের শিক্ষিত বেকার যুবকদের প্রতি আহ্বান জানান সাইদুল হক।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৯ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০২০
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।